বঙ্গবন্ধু পরিষদ তাদের শিক্ষক ইউনিটকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করবে
লেখা ও ছবি : রায়হান মাহবুব, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ার প্রধান ও সেরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার পক্ষ ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদ’ আজ সকাল ১০টায় একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
তাতে বঙ্গবন্ধুর মতাদর্শে বিশ্বাসী পরিষদটি ২৭ মাচ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির একটি সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ২৭ মার্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. এম.এ. মালেক সাইন করা একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পৌঁছায়। তাতে তারা বঙ্গবন্ধুর নামের ইউনিটটিকে বৈধ বলে রায় দিয়েছেন। তাদের মেয়াদ পূরণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠনের মাধ্যমে কাজ করতে বলেছেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাউঞ্জে আজ শনিবার, ২ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলনে এই বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদে ও সত্যিকারের ঘটনা জানাতে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদ’ নামের শিক্ষকদের সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছেন অধ্যাপকরা। বিশ্ববিদ্যালয়টির অধ্যাপক ও সহ-সভাপতি ড. আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আরেফিন, বঙ্গবন্ধু পরিষেদের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন সম্পাদক ও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের নামকরা অধ্যাপক ড. শাহজাহান মন্ডল, সিনিয়র সদস্য অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান, অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা, অধ্যাপক ড. শাহাদাৎ হোসেন আজাদ, সহযোগী অধ্যাপক বাকীবিল্লাহ বিকুল, ড. সাজ্জাদ হোসেন, ড. আমজাদ হোসেন অংশ নিয়েছেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র এই অধ্যাপকরা তাদের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন ও বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগে অনেক সংগঠন আছে। সবাই করতে পারেন এমন সংগঠনও কম নয়। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ভেঙে খাওয়া অন্যায়। তার চেয়ে বড় অন্যায়, এই নামে শিক্ষক সংগঠন খুলে বসা। এই ধরণের কাজ ও অপকর্ম নেমে নেওয়া যায় না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে কোনো সংগঠনের ব্যানারে কোনো তামাসা করা চলবে না। যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করেন, তারা কোনোদিন শহীদ বেদীতে পূর্ব পরিকল্পনা করে হাতাহাতি করতে পারেন না। এটি আদর্শবিচ্যুত কর্ম। শহীদ মিনারে কখনো কোনো অন্যায় মেনে নেওয়া হবে না।’
উল্লেখ্য, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনারে আওয়ামী লীগের মতাদর্শে কাজ করা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক সিনিয়র ও জুনিয়র শিক্ষকদের দুটি পক্ষের মধ্যে ঝগড়া ও হাতাহাতি হয়েছে। তাদের বিরোধে ফুল পায়ে দলিত হয়েছে। এই ঘটনায় তারা সবাই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
একটি পক্ষ ছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও আরেকটি হলো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু ইউনিট শিক্ষক ইউনিট। এই ঘটনার জন্য আসলে শহীদ মিনারের অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের অজ্ঞতা দায়ী। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদ শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া ও শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন জিয়া পরিষদকে শহীদ মিনারে আমন্ত্রণ জানান।
তবে এই অন্যায়ের প্রতিবাদে ও সচেতনতার মাধ্যমে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ইউনিট বঙ্গবন্ধু পরিষদ ফুল দেবার জন্য শহীদ মিনারের দিকে এগিয়ে যান। তখন সহকারী প্রক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্য দায়িত্বে নিয়োজিত সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম তাদের বাধা দেন। তিনি শৃংখলা বজায় রাখতে বললে এই শিক্ষকদের সঙ্গে তার ঝগড়া বেঁধে যায়।
এরপর এই ইউনিট শিক্ষক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের শিক্ষকদের মধ্যে ঝগড়া ও পরে সামান্য হাতাহাতি হয়। তবে অনেক শিক্ষক এই ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন। পরে সিনিয়র অধ্যাপকরা তাদের সরিয়ে দেন ও শান্ত করেন।
তবে মৃত্যুঞ্জয়ী মুর্যালে বঙ্গবন্ধু পরিষদ শিক্ষক ইউনিট মানববন্ধন করে। তারা তীব্র নিন্দা জানিয়ে কোনো প্রতিকার করা না হলে কঠোর কর্মসূচিতে যাবার ঘোষণা করেন। তাদের মনের ব্যথা জানান ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোয়াদ্দার, ‘আমরা কেউ কোনোদিন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কারো মধ্যে কোনো ধরণের বিশৃংখলা হতে দেইনি। তবে আরেকটি পক্ষ আমাদের কাছ থেকে ফুলের ডালি জোর করে নিয়ে ভেঙে ফেলে এই পরিস্থিতির দিকে নিয়ে গিয়েছে।’
তবে সেদিনই মতামত জানতে এই প্রতিবেদক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আরেফিনের সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি তার ছাত্র ও অন্যতম সাংবাদিক রায়হান মাহবুবকে বলেছেন, ‘এটি আমার ধারণা পূর্ব পরিকল্পিত। আমরা সিনিয়র অধ্যাপক। তারা জুনিয়র অধ্যাপক হয়ে আমাদের অসম্মান করতে কেন গেলেন?’ তিনি শহীদ মিনারের কথা ভদ্রতাবশত উল্লেখ করেননি।
এরপর এই হাতাহাতি ও শহীদ মিনারে অন্যায়ের বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেছেন, ‘আমাদের একই মতাদর্শের দুটি শিক্ষক পক্ষ চাইলে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা সম্ভব হবে।’
তবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সিনিয়র অধ্যাপকরা আজকের সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা সিনিয়র হয়েও একসঙ্গে কাজ করতে ও কথা বলতে তাদের একাধিকবার বলেছি। মোবাইলে ফোন করে আলোচনায় বসতে অনুরোধ করেছি। তারা না বসে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিক্ষক পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আলাদা একই নামের সংগঠন খুলে বসেছেন। এখনো তারা আলোচনায় বসেননি। ফলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু পরিষদ শিক্ষক ইউনিটের নাম ভাঙিয়ে কুচক্রী মহলটি অপকর্ম শুরু করেছে। তাতে আমরা দুঃখ পাচ্ছি। তাদের এই সাংগঠনিক অপকর্মগুলো আমরা শিক্ষক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানিয়েছি। তবে সেদিকে না গিয়ে ডা. এম. এ. মালেকের সঙ্গে আলাপের পর তার সাইন এনে তারা বৈধ পরিষদের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করার অনুমতি প্রাপ্ত হয়েছেন। আমরা তাদের রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করব।’
ওএস।