নিজের সক্ষমতায় টিকে থাকতে হবে: ইআরডি সচিব
এলডিসি গ্রাজুয়েশন অর্জনে বাংলাদেশ সরকার, ব্যবসায়ী ও থিঙ্কট্যাঙ্কার সবাই কাজ করছে উল্লেখ করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শরিফা খান বলেছেন, ‘২০২৪ সালে আরেকটা রিভিউঃ হবে। এরপর ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি অর্জন করতে পারব। এতে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও নিজের সক্ষমতায় টিকে থাকতে হবে। গ্রাজুয়েশন অর্জনের পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৯ সাল পর্যন্ত সহায়তা অব্যাহত রাখবে।'
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব তথ্য জানান। ‘ইফেকটিভ এনগেজমেন্ট অব দ্য মিডিয়া ফর সাসটেইনেবল গ্রাজুয়েশন’ শীর্ষক কর্মশালায় সভিাপতিত্ব করেন ইআরডির অতিরিক্ত সচিব ও এসজিএস প্রকল্প পরিচালক মো. ফরিদ আজিজ। এ সময় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুগ্ন সচিব আলোয়ার হোসেন ও ড. মো. রেজাউল বাসার সিদ্দিক।
শরিফা খান বলেন, আমাদের রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশ তৈরি পোশাক খাত থেকে আসে। তাই আমাদের টার্গেট হচ্ছে ট্রেড ফ্যাসিলিটেশনের ওপরে কাজ করা। ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন এখন ভাইটাল এরিয়া (মুখ্য বিষয়)। গ্রাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে আমাদের সার্ভাইভ (টিকে থাকতে) করতে হবে আমাদের নিজেদের ট্রেডের ওপর। খরচ কমিয়ে কীভাবে প্রডাক্টিভিটি বাড়ানো যায় এই বিষয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের প্রতিযোগিতার মার্কেটে টিকে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে বাণিজ্য সুবিধার বিষয়গুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশের পরিবর্তিত বাণিজ্য পরিস্থিতি মাথায় রেখে এখন থেকেই সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে। ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নের পাশাপাশি উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে পারলে এলডিসি গ্রাজুয়েশন বাণিজ্যে অপার সম্ভাবনাও নিয়ে আসবে।
শরিফা খান বলেন, প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অর্জন করলে পণ্য বা সেবার প্রকৃত দামের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে দর কষাকষির অবস্থায় পৌঁছাতে পারবে বাংলাদেশ। এলডিসির সুযোগকে কাজে লাগাতে নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ দেন ইআরডি সচিব। তিনি আরও বলেন, ‘মিডিয়া এলডিসি গ্রাজুয়শনের বিষয়ে দারুণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমার ধারণা আছে ছোট ছোট বিষয় নিয়ে প্রচার করার বিষয়ে। এলডিসি গ্রাজুয়েশন কী? এটা করলে কী উপকার হবে- এসব বিষয়ে প্রচার করা যেতে পারে।
ভালো গবেষক মিলছে না দাবি করে শরিফা খান বলেন, আমি হিমশিম খাচ্ছি, ভালো গবেষক খুঁজতে। রিচার্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এটা নিয়ে আমাদের আরও কাজ করতে হবে। আমার সন্দেহ আছে একটা জায়গায় ভালো গবেষক পাওয়া যায় না। সেটা হলো প্রডাক্ট ডাইভারসিফিকেশনের বিষয়ে। টেকনিক্যাল ইস্যুতে কম লোক পাওয়া যায়। প্রডাক্ট ও বাজার ডাইভারসিফিকেশনের বিষয়ে আমরা দীর্ঘ দিন থেকে অনেক কথা বলছি। কিন্তু এখনো আমাদের পোশাক খাতের ওপরে বেশি নির্ভর করতে হয়।আগে ছিল ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ, বর্তমানে সেটা হয়ে গেছে ৮৪ থেকে ৮৫ শতাংশ।
ইআরডি সচিব বলেন, ‘থিংকট্যাঙ্কদের সেই রকম অ্যাকশন প্ল্যান দেখি না। গতানুগতিক অ্যাকশন দেখে যাচ্ছি। আমরা চাচ্ছি ভালো গবেষক আসুক। কারণ সরকারি কর্মকর্তাদের কাজ কিন্তু গবেষণা করা নয়। গবেষণার জন্য সরকারি কর্মকর্তারা ব্যাকআপ তথ্য সরবরাহ করবে। সেইগুলো নিয়ে আমরা পলিসি ফর্মুলেশন করবো।
এসময় তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি মিললে বাণিজ্যে চ্যালেঞ্জ আসবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইআরডি চেষ্টা করছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মাধ্যমে বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখার। ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নের পাশাপাশি উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে পারলে এলডিসি গ্রাজুয়েশন বাণিজ্যে অপার সম্ভাবনাও নিয়ে আসবে।
আনোয়ার হোসেন মূল প্রবন্ধের বলেন, ‘বাংলাদেশ এলডিসি গ্রাজুয়েশন হওয়ার পর সাতটি চ্যালেঞ্জ দেখা দিবে। এগুলো হচ্ছে-ইনক্লিউসিভনেস, নেগোসিয়েশন, গ্লোবাল ক্রাইসিস, ক্লাইমেট চেঞ্জ, ইনভেস্টমেন্ট, ডাইভারসিফিকেশন, কমপিটেটিভনেস ও পার্টনারশিপ।’ অপরদিকে ড. মো রেজাউল বাসার সিদ্দিক বলেন, ‘তিনটি সূচকের ভিত্তিতে বাংলাদেশ এলডিসি গ্রাজুয়েশনের সুযোগ পেয়েছে। ২০২১ সালে রিভিউ হয়েছে। করোনার কারণে দিন বছর পর ২০২৪ সালে আবার রিভিও হবে। পরপর দুইটি রিভিউয়ে পাস করতে হবে। তা মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হবে। এরপর ২০২৬ সালে গ্রাজুয়েট হবে দেশ। এরফলে দেশে আত্ব মর্যাদা বেড়ে যাবে।
জেডএ/এএস