প্রথম চালানে ভারত গেল ১২ টন ইলিশ, প্রতি কেজি ১০ ডলার
রপ্তানির আগে ইলিশের মান পরীক্ষা চলছে। ছবি: সংগৃহীত
রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে ভারতে আসন্ন দুর্গাপুজা উপলক্ষে প্রথম চালানে ১২ মেট্রিকটন ইলিশের পাঠানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোরের বেনাপোল বন্দর দিয়ে ইলিশের প্রথম চালান গেছে বলে জানিয়েছেন বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক রাশেদুল সজিব নাজির।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতের কলকাতার দুই আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আর এস এন্টারপ্রাইজ ও আর জে এন্টারপ্রাইজের তিনটি ট্রাকে করে ১২ টন ইলিশ বেনাপোল থেকে ভারতের প্রেট্রাপোল বন্দরে পৌঁছেছে।
ইলিশের রফতানিকারক বাংলাদেশের জে এস এন্টারপ্রাইজ, সাজ্জাত এন্টারপ্রাইজ ও স্বর্ণালী এন্টারপ্রাইজসহ ৪ রফতানিকারক। আমদানিকারক ভারতের আর,জে এন্টারন্যাশনাল ও কেবিসি এন্টারন্যাশরাল। বন্দর থেকে ইলিশ ছাড়করণে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ছিল বাংলাদেশ লজিস্টিকসহ কয়েকটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট।
দেশের ৪৯ জন রফতানিকারককে ২ হাজার ৪২০ টন ইলিশ রফতানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। শর্ত দেওয়া হয়েছে আগামী ১৩ অক্টোবরের মধ্যে শেষ করতে হবে রফতানি। প্রতি কেজি ইলিশের রফতানি মূল্য ১০ ইউএস ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ১১৮০ টাকা।
এদিকে পূজার আগে ইলিশ পেয়ে খুশি ভারতীয়রা। দুই দেশের সৌহার্দ্য, সম্প্রতি ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে ইলিশ রফতানির সুযোগ বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বাণিজ্যিক সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, রূপালী ইলিশের স্বাদ আর গন্ধ অতুলনীয়। দুই বাংলায় জনপ্রিয় মাছ এটি। বিশেষ করে পূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখে ওপারের বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রফতানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রফতানি বন্ধ করে দেয় তৎকালিন আওয়ামী লীগ সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজায় ইলিশ রফতানির সুযোগ দেয় শেখ হাসিনা সরকার।
২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার বিপ্লবে আওয়ামী লীগ সরকার বিদায়ের পর দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আসে অন্তবর্তীকালীন সরকার। এর মধ্যেই ভারতের ব্যবসায়ীরা দুর্গাপূজায় ইলিশ আমদানির অনুরোধ জানান। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে দেশের চাহিদা মিটিয়ে পরে বিদেশে ইলিশ রফতানি হবে জানিয়েছিল বর্তমান সরকার। কিন্তু এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে দেড় মাসের মাথায় বৃহত্তর স্বার্থে ভারতে ইলিশ রফতানির অনুমতি দেয় ড. ইউনূসের সরকার। এতে রফতানি বন্ধ করতে হাইকোর্টে রিট করে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। তবে সব বাধা কাটিয়ে শুরু হয়েছে ইলিশ রফতানি।
গত বছর ইলিশ রফতানির অনুমতি ছিল ৩ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন। রফতানি হয়েছিল মাত্র ৬৬৩ মেট্রিক টন। এবছর বৃহত্তর স্বার্থে ভারতে ইলিশ রফতানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বিবিসির তথ্যমতে, বাংলাদেশের মোট মাছ উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশই ইলিশ। দেশের জিডিপিতে এটি প্রায় ১ শতাংশ অবদান রাখে। বাংলাদেশের জেলেরা বছরে ছয় লাখ টন ইলিশ ধরে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৭৬ টন ইলিশ ভারতে রফতানি হয়। এরপরের ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ৬৯৯ টন ইলিশ রফতানি হয়। অন্যদিকে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ২৩০ টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ হাজার ৩৯১ টন ইলিশ রফতানি করা হয়। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮০২ টন ইলিশ ভারতে রফতানি করা হয়। গত ৫ বছরে মাত্র ৫ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ রফতানি হয় ভারতে।
ইলিশ পরিবহনকারী ট্রাক চালকরা জানান, চাঁদপুর ও বরিশাল থেকে ইলিশ নিয়ে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে তারা যাচ্ছেন।
ভারতীয় নাগরিক রমেশ বিশ্বাস জানান, বাংলাদেশ থেকে আসা ইলিশ দিয়ে পূজায় অতিথি আপ্যায়ন করতে আপেক্ষায় থাকি। এবার ভেবেছিলাম ইলিশ আসবে না। তবে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার ইলিশ দিয়েছে। পূজার আগে বাংলাদেশি ইলিশ আসায় আমরা খুশি। সরকারকে ধন্যবাদ।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের দফতর সম্পাদক মোস্তাফিজ্জোহা সেলিম জানান, দেশে ইলিশের সংকট। এর মধ্যে ইলিশ যাচ্ছে ভারতে। হয়তো বৃহৎ স্বার্থ বিবেচনা করে সরকার ভারতে ইলিশ রফতানি করছে। ইলিশ রফতানির মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বন্ধুত্ব সম্পর্ক বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে ব্যবসায়ী মহল মনে করছি।
বেনাপোল স্থলবন্দরের ফিসারিজ কোয়ারেন্টাইন অফিসার মাহাবুর রহমান জানান, কাস্টমস, বন্দর ও মৎস অফিসের আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রথম ৪টি চালানে ১২ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রফতানি হয়েছে। প্রতি কেজি ইলিশের রফতানি মূল্য ১০ ডলার।