বাজার থেকে সয়াবিন তেল উধাও
কৃত্রিম সংকট দেখাতে বাজার থেকে হঠাৎ সয়াবিন তেল উধাও। কোনো দোকানে এক বা দুই লিটারের বোতলজাত তেল থাকলেও আড়ালে আবডালে রেখেছেন দোকানিরা। নিয়মিত ক্রেতারা ফোনেই অর্ডার করে রেখেছেন এসব তেল, যে কারণে অনেক ক্রেতাই বাজারে এসে তেল না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
শনিবার (৫ মার্চ) রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া যায়। সাইফুল ইসলাম নামের এক ক্রেতাকে সকাল ১০টায় দোকানে দোকানে ঘুড়তে দেখা যায়। তার চেহেরায় হতাশার ছাপ লক্ষ্য করে জানতে চাইলাম কোনো সমস্যায় পড়েছেন কি না? জবাবে প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে বললেন কী বলব? সকালে এসে অন্তত দশটা দোকান ঘুড়েছি। ৫ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল খুঁজছি। সব দোকান থেকেই বলছে তেল নেই। এমনিতে বাড়তি দাম তারপরও যদি এভাবে সংকট দেখানো হয় কী বলার আছে।
সাইফুল বলেন, ‘যুদ্ধ লেগেছে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে মনে হচ্ছে আমাদের দেশেই যুদ্ধ লেগেছে। বাজারে আসার পর মনে হচ্ছে যুদ্ধ ইউক্রেন-রাশিয়ায় হচ্ছে না, যুদ্ধ বাংলাদেশে হচ্ছে। আমাদের ব্যবসায়ীরা তো সব সময় সুযোগ খোঁজে। একটা তেলের চালান আসতে অনেক সময় লাগে, আর যুদ্ধ চলছে ১০ দিনের মত, এখনও সংকট দেখানো হচ্ছে। টিভি ক্যামেরা দেখলে দোকানদার ঠিকই বলে তেল আছে। আমি তো ৫ লিটারের বোতল তেল কিনতে আসছি কোনো দোকানে তো পাচ্ছি না।’
তার এই কথার সত্যতা মেলে ব্যবসায়ী মো. সোলেমান এর বক্তব্যে। তিনি ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘বাজারে তেল নেই। তেল না থাকলে আমরা কীভাবে বিক্রি করব। গত এক সপ্তাহ ধরে কোনো কোম্পানি তেলের অর্ডার নিচ্ছে না। তেলের কথা বললেই বলে কিছু দিন অপেক্ষা করেন। এদিকে কাস্টমার এসে তেল না পেলে আমাদের গালাগাল করে আমরা নাকি লুকিয়ে রাখছি। আমরা লুকিয়ে রাখব কেন? আমরা বিক্রি করতে পারলেই আমাদের লাভ হবে, দোকানে ফেলে রেখে কী লাভ?’
তেলের বাড়তি দাম ও সংকট নিয়ে ক্ষুব্ধ রবিউল ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘তেলের দাম জানতে চেয়ে কী করবেন? বাজারে তো তেলই নেই। আমাকে ৫ লিটার কিনে দেন। আপনি দেখেন কোনো দোকান স্বীকার করবে না যে তার কাছে তেল আছে। সবার কাছে ফর্টিফাইড তেল থাকলেও সয়াবিন তেল নেই। কোনো কোনো দোকানে এক লিটারের বোতল থাকলেও অনেক বেশি দাম। লিটার ১৮০ করে বিক্রি করছে। গায়ের দামে বিক্রি হচ্ছে কমই। মানুষ কী করবে তেল না পেয়ে তখন গায়ের দামের দিকে না তাকিয়ে যা চাচ্ছে দিয়ে নিচ্ছে।’
তিনি বলেন, এটা কৃত্রিম সংকট। রোজার আগে এভাবে সংকট দেখিয়ে আরও দাম বাড়াবে। সবারই সিন্ডিকেট আছে শুধু আমাদের সাধারণ মানুষের কোনো সিন্ডিকেট নেই। এই যে তেল সংকট এটা মনিটর করবে কে? কারও তো দেখছি না। মানুষ যখন সর্বস্বান্ত হয়ে যায় তখন কিন্তু ফুঁসে ওঠে। সরকারের উচিত কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা চালু রাখা।
আর এক ব্যবসায়ী রহমান ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘বাজারে তেলের অনেক সংকট। কোনো ব্রান্ডের তেলই অর্ডার নিচ্ছে না। শুধু তীর দুই একটা পাওয়া যাচ্ছে, তাও ১ লিটার ২ লিটারের বোতল। অন্য ব্র্যান্ডের তেল নেই। আমরা প্রতি সপ্তাহে যে অর্ডার করি তার এক ভাগও এখন করতে পারছি না। ডিলারদের বললেই বলে অপেক্ষা করতে। তারা অর্ডার না কাটলে আমরা কীভাবে তেল পাব? এই সংকট গত এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন ধরে। কবে ঠিক হবে তাও বলতে পারছি না।’
এদিকে আর মাত্র কয়েক কয়েক দিন বাদেই শবে বরাত। তাই ক্রেতাদের বাজার তালিকাতে তেলসহ অন্যান্য নিত্য পণ্যের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। ১০ দিন আগের বাজার মূল্য ধরে বাজারে যেয়ে থাকলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। কেন না বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
একজন ক্রেতা বলেন, এ রকম দাম গত ১০ বছরেও দেখিনি। একটি বা দুটি জিনিসের দাম বাড়তে পারে, কিন্তু বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। এতে মাসে বাজার খরচ ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
এসএম/এমএমএ/