বিশেষ সুযোগ নিয়েও লাগামহীন খেলাপিরা!
করোনাকালে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুযোগ দিয়েছে সরকার। তারপরও অনেক ঋণগ্রহীতা ঠিকমতো ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেননি। এর ফলে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। যা বিতরণ করা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে ছিল ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা বা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১২ শতাংশ। আর বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১৪ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা।
বুধবার (২ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের এক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘সুদের কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেশি হয়েছে। তবে শতকরা হারে কমেছে। খেলাপি যাতে না বাড়ে সেজন্য বিভিন্নভাবে তদারকি করা হচ্ছে। এ জন্য ব্যাংকগুলোও তৎপর হয়ে উঠছে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) ডিসেম্বর মাস শেষে ৬১ ব্যাংকের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ১ হাজার ৭৯৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। করোনা শুরুর বছর ২০২০-এর ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ ছিল। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা।
গত ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ ছিল ২ লাখ ৩৩ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ হয়েছে ৪৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা বা ১৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণ স্থিতি হচ্ছে ৯ লাখ ৭০ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে মোট খেলাপি ৫১ হাজার ৫২১ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ স্থিতি ৬৪ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা।
এর মধ্যে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। এ ছাড়া রাষ্ট্রের বিশেষায়িত ব্যাংকের ৩৩ হাজার ১৯৬ কোটি টাকার মধ্যে ৩ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ হয়েছে বা মোট ঋণের ১২ দশমিক ০২ শতাংশ।
বছরজুড়ে নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরেও বৃদ্ধি পেয়েছে খেলাপি ঋণ। তাই আগের মতোই ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকখাতে খেলাপির পরিমাণও বেড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকখাতে খেলাপি কমাতে ঋণ পরিশোধের জন্য নানা রকম সুবিধা দিয়েছে সরকার। বিশেষ করে করোনা মহামারিতে অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় ২০২০ সালে ঋণগ্রহীতারা কোনো টাকা পরিশোধ না করলেও তাকে খেলাপি দেখাতে পারেনি ব্যাংক।
গতবছর বাংলাদেশ ব্যাংক কিস্তির ১৫ শতাংশ ঋণ পরিশোধে নিয়মিত থাকার সুযোগ দেয়। এ ছাড়ের কারণে একজন গ্রাহকের যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা তা করেননি। ফলে ধারাবাহিকভাবে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এর লাগাম টানা যাচ্ছে না।
জেডএ/এমএমএ/