প্রক্রিয়াজাত পণ্যের আকর্ষণীয় প্রদর্শনী চট্টগ্রামে
কাঁঠাল সংরক্ষণ ও বহুমুখী ব্যবহারের ১২ প্রযুক্তি উদ্ভাবন
দেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল সংরক্ষণে আধুনিক কোনো পদ্ধতি না থাকায় প্রতিবছর বিপুল কাঁঠাল নষ্ট হচ্ছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চাষিরা।
সার্বিকভাবে প্রতিবছর দেশের ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। চাষিদের আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা ও সারা বছর প্রাপ্তি সহজলভ্য করতে কাঁঠাল সংরক্ষণ ও বহুমুখী ব্যবহারের ১২টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) শস্য সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি বিভাগের বিজ্ঞানীরা।
বর্তমান প্রজন্মের কাঁঠালের প্রতি আকর্ষণ অনেক কম। এজন্য কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) আর্থিক সহায়তায় এবং বিএআরআই ও নিউভিশন সলুশনস লিমিটেডের যৌথ পরিচালনায় ‘পোস্টহার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট, প্রসেসিং এন্ড মার্কেটিং অফ জ্যাকফ্রুট’ প্রজেক্টের মাধ্যমে কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহারকে উদ্বুদ্ধ করতে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে মাঠ-মেলা ও ভ্রাম্যমাণ মেলা ছাড়াও কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত পণ্যের ফ্রি-টেস্ট করানো এবং পুষ্টিগুণ সম্পর্কে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, লিফলেটের মাধ্যমে দেশব্যাপী বিভিন্ন এলাকায় প্রচার-প্রচারণার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রকল্পের প্রধান ইনভেস্টিগেটর ও উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফেরদৌস চৌধুরী এবং নিউভিশনের প্রকল্প ম্যানেজার ও কো-প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর কাইজার আলমের নেতৃত্বে ও চট্টগ্রামে খুলশী মার্টের সহযোগিতায় কে-মার্টের ১৬ বছর পূর্তিতে তিনদিনে এক বিশেষ মেলার আয়োজন করা হয়। ১০ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত মেলায় কাঁঠাল দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী প্রদর্শন করা হয়। এর মধ্যে কাঁঠালের চিপস, আচার, ছাঁটনি, জ্যাম, কাঁঠাল সত্ত্ব দর্শকদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে।
এই আয়োজন সম্পর্কে ড. ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, ‘দেশের সব এলাকায় কাঁঠাল সহজলভ্য না থাকায় জাতীয় ফলের স্বাদ নিতে পারতো না অনেকেই। কিন্তু এখন থেকে মৌসুম ছাড়াও প্রক্রিয়াজাত কাঁঠাল পাওয়া যাবে। দেশব্যাপী এসব প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারের ফলে দেশের জাতীয় ফল কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহার যেমন বাড়বে, তেমনি গ্রামীণ অর্থনীতিতে আশাব্যঞ্জক প্রভাব ফেলবে।’
দেশীয় বাজারে কাঁঠাল পণ্য বিপণন এবং উদ্যোক্তাদের সম্পর্কে কাইজার আলম বলেন, দেশের সব জায়গায় বাজারজাত করতে পারলে তা সবার কাছে সহজলভ্য হবে। এছাড়া এ কৃষি শিল্পে তৈরি হবে অনেক নতুন উদ্যোক্তা। প্রকল্পের মেয়াদ পরবর্তীকালে উদ্যোক্তাদের পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের ধারাকে চলমান রাখতে সরকারকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যাতে করে উদ্যোক্তারা সহজ উপায়ে তাদের পণ্য নিয়ে বাজারে প্রবেশ করতে পারে।
খুলশী মার্টের শাকের হোসেন বলেন, কাঁঠালের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য সামগ্রী খুবই সুস্বাদু ও মুখরোচক এবং ভোক্তাদের মাঝে আশাব্যঞ্জক সাড়া জাগিয়েছে।
মেলা চলাকালীন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খুলশী মার্টের ভাইস-চেয়ারম্যান গুলশানা আলী, সিইও ও নির্বাহী পরিচালক সরফরাজ আলী, ম্যানেজার জামালউদ্দিন এবং মার্টের প্রমোটার্স বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার শাকের হোসেন, বিএআরআই শস্য সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি বিভাগের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মো. মোস্তফা কামাল, নিউভিশনের সিনিয়র রিসার্চ এসোসিয়েট আতিকুল ইসলাম ও কমিউনিটি বেসড এন্ট্রেপ্রেনিউর ডেভেলপমেন্ট (সি-বেড) -এর ট্রেইনার আমিনা সুলতানা।
উল্লেখ্য যে, বাণিজ্যিকভাবে নানা ধরণের কাঁঠাল পণ্য উৎপাদন করে ইতিমধ্যেই ঢাকার মীনাবাজার, কৃষকের বাজার এবং দেশের কয়েকটি সুপারশপে মার্কেটিং করতে সফল হয়েছেন কয়েকজন পুরুষ ও মহিলা উদ্যোক্তা। যা ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এবং স্বপ্ন দেখাচ্ছে কাঁঠাল উৎপাদন, বিপণন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠানকে।
এপি/