ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের অনুমোদন, রিহ্যাবের উদ্বেগ
রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামনি (কাজল) বলেছেন, ‘স্থানীয় সরকার বিভাগের সভাকক্ষ থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি বলা হয়েছে ভবন ও অবকাঠামো নির্মাণে রাজউকের পাশাপাশি সিটি করপোরেশন থেকে অনুমোদন নিতে হবে। এ বিষয়ে কোনো পরিপত্র বা সরকারি আদেশ জারি না হলেও গৃহায়ণ শিল্প সংশ্লিষ্টদের মধ্যে গভীর শংকা ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। সিটি করপোরেশনের এই প্রস্তাব বিনিয়োগবান্ধব নয়। দুটো প্রশাসনকে একটি কাজের দায়িত্ব দিলে জনগণের ভোগান্তি শুধুই বাড়বে।
শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘অবকাঠামো নির্মাণে রাজউক এর পাশাপাশি সিটি করপোরেশন থেকে অনুমোদন গ্রহণের বিধানের প্রতিবাদ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট এসব কথা বলেন।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘বাংলাদেশের আবাসন শিল্প শুধু আবাসনই সরবরাহ করছে না, একই সঙ্গে ৪০ লাখ শ্রমিকের উপর নির্ভরশীল। আড়াই কোটি লোকের খাবারের যোগান দিয়েছে। এখাত থেকে বিগত কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে জিডিপিতে অবদান বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেব মতেই ২০০৯-১০ অর্থ বছরে জিডিপিতে আবাসন শিল্পের অবদান ছিল ৩৮ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেড়ে গিয়েছে ৮১ হাজার ১১৩ কোটি টাকা। জিডিপিতে সমগ্র নির্মাণ খাতের অবদান প্রায় ১৫ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট লিংকেজ শিল্পসহ সমগ্র নির্মাণ খাত বিবেচনায় আনলে জিডিপিতে এর অবদান দাঁড়াবে ২০ শতাংশের উপরে।
২০১৯ সালের পূর্বে হাইরাইজ তথা ১০ তলার বেশি বহুতল ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র গ্রহণ এর একটি বিধান প্রচলিত ছিল।
কাজল বলেন, ‘অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে জানাচ্ছি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার ইজি অব ডুইং বিজনেস করার প্রক্রিয়া চলমান রেখেছেন। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত ইজি অব ডুইং বিজনেস পরিপন্থী। শুধু তাই নয়, সিটি করপোরেশন অনুমোদিত স্থাপনা নিয়মিত মনিটরিং করার ব্যবস্থা রাখবে। যদি সিটি করপোরেশন মনে করে রাজউক অনুমোদিত অবকাঠামো শহরের জন্য কল্যাণকর নয় তাহলে সেই অবকাঠামোর কাজ বন্ধ করে দিতে পারবে। বিষয়টি আবাসন ব্যবসায়ী ও যারা ব্যক্তিগত ভবন তৈরি করবেন তাদের জন্য খুবই উদ্বেগজনক। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে তা হবে অপরিণামদর্শী। ভিন্ন ভিন্ন তদারকি সংস্থার অনুমোদন শর্তের পারস্পরিক বৈপরীত্যের শিকার হবেন যারা ভবন নির্মাণ করবেন তারা।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুটো প্রশাসনকে একটি কাজের দায়িত্ব দিলে জনগণের ভোগান্তি শুধুই বাড়বে। ফাইল ছোঁড়াছুঁড়ির নতুন একটি ক্ষেত্র তৈরি হবে। সমন্বয়হীনতা তৈরি হবে। নতুনভাবে প্ল্যান পাশ করতে সময় বেশি লাগবে। ভবন তৈরিতে সিটি করপোরেশনের অনুমোদন, অতিরিক্ত জটিলতা- ভোগান্তি-বিড়ম্বনা এবং দীর্ঘসূত্রিতা ও ব্যয় সবই বৃদ্ধি করবে। এমনিতেই অস্বাভাবিকভাবে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ছে। ব্যয় বৃদ্ধির নতুন নতুন খাত নাগরিকদের আবাসনের স্বপ্ন পুরণে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। মৌলিক অধিকারের স্বপ্ন অপূর্ণ এবং অধরাই থেকে যাবে। যা কাম্য নয়।
রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘ভবনের প্ল্যান পাস করতে গেলে রাজউকেই মানুষকে হয়রানি পোহাতে হয়। সেখানে নতুন করে অনুমোদনের দায়িত্ব পেলে অবকাঠামো যারা বানাবেন তাদের অসন্তুষ্টির কারণ হবে সিটি করপোরেশন। অনুমোদনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশন পেলে তাতে দ্বৈত প্রশাসনের সৃষ্টি হবে। এই সিদ্ধান্ত আসলেই সাংর্ঘষিক ও অবাঞ্চিত। ভোগান্তি কমাতে রিহ্যাব থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করার দাবি জানালেও কিন্তু সেখানে আরও নতুন তদারকি সংস্থা যুক্ত করা হচ্ছে। যা মরার উপর খাঁড়ার ঘাঁ হিসেবে বিবেচিত হবে।’
জেডএ/