যে প্রক্রিয়ায় কোটি টাকা কেজিতে রপ্তানি হচ্ছে মাছ! (ভিডিও)

পিটুইটারী গ্লান্ড। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ শুধু মাছ রপ্তানির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং মাছের শরীরের এমন কিছু মূল্যবান অংশ রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার চেয়েও দামি। এই দামি অংশ বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হচ্ছে প্রতি কেজি কোটি টাকায়। এই বিশেষ অংশটির নাম হচ্ছে পিটুইটারী গ্লান্ড!
পিটুইটারী গ্লান্ড হলো মাছের মস্তিষ্কের নিচের অংশে থাকা এক ধরনের অতি ক্ষুদ্র গ্রন্থি, যা বিশেষ হরমোন নিঃসরণ করে। এই গ্লান্ড বিশেষ করে কার্প ও ক্যাটফিশ জাতীয় মাছের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বব্যাপী ফিশ হ্যাচারিগুলোতে প্রজনন কার্যক্রমে এই গ্লান্ড থেকে নির্যাস বের করে ব্যবহার করা হয়। এটি প্রজননক্ষমতা বাড়াতে এবং ডিম ছাড়ানোর কাজে ব্যবহার হয়, যাকে বলে প্ররোচিত প্রজনন। এছাড়াও ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে নানা ধরনের গবেষণায় এই গ্লান্ড ব্যবহৃত হয়।
বাংলাদেশে পিজি সংগ্রহ থেকে শুরু করে তা প্রয়োগ করা পর্যন্ত একটি বাজারব্যবস্থা গড়ে উঠেছে যশোর, খুলনা, ময়মনসিংহসহ কয়েকটি জেলায়। এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত রয়েছেন বাজারে মাছ কাটার বঁটি-ওয়ালা, পিজি সংগ্রাহক, প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান ও হ্যাচারিমালিকরা। ভেজা পিটুইটারি গ্লান্ডও ব্যবহার করা যায়। তবে শুকনা পিজি ব্যবহার করলে মাছের পোনা উৎপাদন প্রায় ৩০ থেকে ৫০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। কার্পজাতীয় মাছের মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ, কার্ফু, কার্ভ, সিলভার কার্প এর মুড়ার দানা বেশি দামি।
আন্তর্জাতিক বাজারে পিটুইটারী গ্লান্ডের চাহিদা ও মূল্য অনেকবেশী। প্রতি কেজি ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত বিক্রি হয়, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা!
২০২৩ সালে শুধুমাত্র চীন, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে এই গ্লান্ডের চাহিদা ছিল প্রায় ১০০ টন, যার বাজার মূল্য ৩৫০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশের নদী, খাল, বিল, হাওর ও সমুদ্র উপকূলে প্রচুর পরিমাণে কার্প ও ক্যাটফিশ জাতীয় মাছ পাওয়া যায়, যেগুলোর পিটুইটারী গ্লান্ড বিশ্বমানের মানসম্পন্ন।
২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৭.৫ টন পিটুইটারী গ্লান্ড রপ্তানি হয়েছে, যার মূল্য প্রায় ২৭ মিলিয়ন ডলার। সরকারের সহযোগিতায় যদি পরিকল্পিত সংগ্রহ ও রপ্তানি করা যায়, তবে বছরে ৫০ মিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব।
