অর্থনীতিবিদদের প্রতিক্রিয়া
বাড়তি দামের যৌক্তিকতা জনসম্মুখে জানানো দরকার
ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দাম বাড়ানোর আগে বিষয়টা আরও গভীরভাবে দেখা উচিত ছিল। কি কারণে দাম বাড়ছে সেটা মানুষকে জানানো উচিত ছিল। তাহলে মানুষের মনে কোনো প্রশ্ন জাগত না। আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে লিটারে আট টাকা দাম বাড়ানো আমদানি ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কি না তা দেখা দরকার।
গত রবিবার(৬ ফেব্রুয়ারি) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় সরকার। এতে প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েলের দাম বাড়ানো হয় সাত টাকা এবং বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে আট টাকা বাড়ানো হয়। যা সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে কার্যকর হয়।
ভোজ্যতেলের এই মূল্য বৃদ্দির বিষয়ে জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মসনুর ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, মিল মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি লিটার তেলের দাম আট টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় সরকার। তবে এটা আরও গভীরভাবে দেখার বিষয়। কারণ বিশ্বে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে এটা সত্য। তবে আমাদের দেশে যেটা বাড়ানো হয়েছে তার বিস্তারিত জনসম্মুখে তুলে ধরা দরকার। যে হিসাবে দাম বাড়ানো হয়েছে, তা ঠিক হয়েছে কিনা। তাহলে মানুষের মনে কোনো প্রশ্ন জাগবে না।
তিনি আরও বলেন, ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে কথা বলে এলসি মূল্য কত, মিলগেট মূল্য কত হবে, তা দেখাতে হবে। এরপর পরিবেশক (ডিলার) পর্যায়ে কত হবে আর খুচরা পর্যায়ে কত হবে, তা অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। কারণ দেশে পরিবার থেকে শুরু করে হোটেল, রেস্টুরেন্ট সব জায়গায় সয়াবিন তেলের বেশি ব্যবহার হয়। তাই ভোক্তারা যাতে প্রতারিত না হন।
এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, যেহেতু সরকার ঘোষণা দিয়েছে তেলের দাম বাড়ার, তাই ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে। কম করে খেতে হবে। এতে কারও ক্ষতি হবে না। এক সময়ে মানুষ সংসারে কম করে তেল খেত। তাই সেদিকে ফিরে যেতে হবে।
বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক লিড ইকনোমিস্ট জাহিদ হোসেন ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ঘোষণার দিন থেকেই বাজারে তা কার্যকর হবে কিনা তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে স্পষ্ট করা দরকার ছিল।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে দেশীয় বাজারে লিটারে আট টাকা ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। তা আমদানি ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কি না- তা দেখা দরকার। তা না হলে বিষয়টি অযৌক্তিক হবে। এতে ভোক্তাদের বেশি অর্থ ব্যয় হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেছেন, ‘দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ সয়াবিন ব্যবহার করে থাকে। এখানে কয়েকমাস পর পর দাম বাড়ানো হচ্ছে। কয়েকটি কোম্পানি এটি নিয়ন্ত্রণ করে। যেভাবে লাগামহীনভাবে ইচ্ছামতো ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে, তা অগণতান্ত্রিক এবং জনস্বার্থ পরিপন্থী। তাই এটি ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা উচিত।’
জেডএ/আরএ