ইলিশের দাম এ বছর গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ
ছবি:সংগৃহিত
ইলিশের যে দাম, তা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ—এমন হিসাবই দিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। যদিও সংগঠনটি শুধু ঢাকার বাজারের দাম দেখে, তবে সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবেও এবার ইলিশের দাম ছিল সর্বোচ্চ।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর দেশে পণ্যের দামের পর্যবেক্ষণ করে । তাদের ওয়েবসাইটের ‘পণ্যভিত্তিক বাজারদর’-এ গিয়ে কিছু পাওয়া যায়নি। তবে দ্রব্যমূল্যের লেখচিত্র প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সে অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ইলিশের গড় মূল্য ছিল ১ হাজার ১৫০ টাকা। এটি গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর গত বছর গড় মূল্য ছিল ১ হাজার ৫০ টাকা।
অন্যদিকে ক্যাবের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর ১ থেকে ২ কেজি ওজনের ইলিশের দাম গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ। গত বছর দাম বেড়েছিল ১০ থেকে ১২ শতাংশ। ঢাকার বাজারে এবার ইলিশের দাম এক দশক বা ১০ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছে।
ক্যাবের হিসাব অনুযায়ী, গত মাসে (সেপ্টেম্বর) ঢাকায় ৫০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশের গড় দাম ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা। আর ১ থেকে ২ কেজি ওজনের ইলিশের দাম ছিল ১ হাজার ৬০০ টাকা। গতবারের চেয়ে ৫০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০০ টাকা। আর ১ থেকে ২ কেজির ওজনের ইলিশের দাম এবার বেড়েছে প্রায় ৩০০ টাকা।
ইলিশের দাম এবার যে বেশি, তা স্বীকার করেন আড়তদার, ব্যবসায়ী, গবেষক, এমনকি মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও। বিভিন্ন বন্দরের আড়তদারেরা বলছেন, এবার ইলিশ ধরা পড়েছে অনেক কম। বাজারে পণ্যে সরবরাহ কম হলেই দাম বাড়ে—অর্থনীতির এই সহজ সূত্রই এবার ইলিশের ক্ষেত্রেও ঘটেছে বলে মনে করেন আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা। যদিও মাছ কম—এমন কথা মানতে নারাজ গবেষক ও সরকারি কর্মকর্তারা।
দেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় জুলাই মাসে। সেই মাসে এবার ৬০ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। গত আগস্টেও বৃষ্টি খুব বেশি হয়নি। এ দুই মাসে কম বৃষ্টি হওয়ার কারণে ইলিশের উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন আনিছুর রহমান। এই ইলিশ-গবেষকের কথা, ‘ইলিশ ঝাঁক ধরে থাকে। তাই যদি কক্সবাজার অঞ্চলে ইলিশ বেশি পাওয়া যায়, তখন স্বাভাবিকভাবেই পটুয়াখালীতে কম পাওয়া যাবে। এটাই স্বাভাবিক। সব অঞ্চলের হিসাব মিলিয়ে বছর শেষে দেখা যাবে, ইলিশ আগের বছরের মতোই হয়েছে বা এর বেশিও হতে পারে।’
সরকারি হিসাবে, গত বছর দেশে ইলিশের উৎপাদন হয়েছিল ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৩ মেট্রিক টন। এবারও তার কাছাকাছি উৎপাদন থাকতে পারে বলে মনে করেন ইলিশ-গবেষক আনিছুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবছর এ সময়ে ইলিশ কম উৎপাদিত হয়েছে বলে শোনা যায়। এবার এটা বেশি বলা হচ্ছে। এবার দেখা গেছে, একবারে ৩৯ লাখ টাকার ইলিশও পেয়েছেন কেউ কেউ। এসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে।’
ইলিশের ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। মহিপুর বন্দর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিদার উদ্দিন বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এবার ইলিশ অন্তত ৪০ শতাংশ কম। ইলিশ প্রকৃতির দেওয়া জিনিস, এটা কম হয়েছে কি না, তা জানি না। শুধু জানি, এবার জেলেরা ইলিশ পেয়েছেন অনেক কম।’