দাম বৃদ্ধির পরও তেল-চিনির জন্য হাহাকার
সয়াবিন তেল লিটারে ১২ টাকা ও চিনির দাম কেজিতে ১২ টাকা বৃদ্ধির পরও বাজারে তেল-চিনির জন্য হাহাকার। খুচরা ব্যবসায়ীরা মিল ও ডিলারের কাছ থেকে চাহিদা মতো পাচ্ছে না। তাই বিক্রি করতেও পারছেন না। আমন ধান উঠলেও বেড়েছে চালের দাম। তবে স্বস্তির খবর মাছ, মুরগি ও ডিমে। মুরগির কেজিতে ২০ টাকা কমেছে। এদিকে শীতের প্রায় সবজি বাজারে আসায় ৫০ টাকার কমে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা।
শনিবার (২৬ নভেম্ববর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
তেল-চিনির দাম বাড়লেও সহজে মিলছে না
ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে সরকার চিনির দাম ৯৫ থেকে ১০৭ টাকা কেজি ঘোষণা করেছে গত ১৭ নভেম্বর। তারপরও সহজে মিলছে না চিনি। এ ব্যাপারে কারওয়ান বাজারের ইউসুফ জেনারেল স্টোরের ইউসুফ, রাব্বি ট্রেডার্সের ফারুক আলী স্টোরের আলী হোসেন, আব্দুর রব স্টোরের রবসহ অনেক খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, চিনি ৯৫ টাকা থেকে ১০৭ টাকা করেছে মিল থেকে। তারপরও চাহিদা মতো পাওয়া যাচ্ছে না। হাউকাউ লেগে আছে। ডিলাররা দিব-দিচ্ছি বলে দিচ্ছে না। আবার একদিন ২০ কেজি চিনি দিলেও পরের দিন পাওয়া যায় না।
তেলের দশাও একই। তেলের লিটারে ১২ টাকা বৃদ্ধি করে ১৯০ টাকা করা হয়েছে। তারপরও কোনো তীর, রুপচাঁদার কোনো তেল পাওয়া যাচ্ছে না। আবার সেনা কল্যাণসহ অন্যদের তেল পাওয়া গেলেও এক ও দুই লিটার পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বিক্রি করা যাচ্ছে না। ৫ লিটার তেলের দাম ৮৫০-৮৭০ টাকা থেকে ৯১০-৯২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। মসুর ডাল আগের মতো ৯৫-১৪০ টাকা কেজি, আটা ২ কেজি ১৪৪ টাকা থেকে ১৫০ টাকা ও ২ কেজি ময়দা ১৬০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে বলে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান।
ধান উঠলেও বেড়েছে চালের দাম
মাঠ থেকে আমন ধান উঠে গেছে। দামও কমতে শুরু করেছে। তবে রাজধানীতে একটুও কমেনি চালের দাম। বরং কেজিতে এক দুই টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের বরিশাল রাইস এজেন্সির আল হাসিব, মান্নান রাইস এজেন্সির তোফায়েল, কুমিল্লা রাইস জেনারেল স্টোরের শহিদুল ইসলাম এবং আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির আব্দুল আওয়াল ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ধান উঠেছে তো কী হয়েছে কেজিতে এক দুই টাকা বেড়েছে। মিনিকেট চাল এখনো ৭৪ থেকে ৭৫ টাকা কেজি, ২৮ চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, মোটা হাইব্রিড চাল ৪৮, বাসমতি ৮৮, নাজিরশাইল ৮২ থেকে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। পোলাও চালের দামও বাড়তি। প্যাকেট ছাড়া এই চাল ১২৫ টাকা ও বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেট চাল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। মোটা গুটি স্বর্ণা ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
বেগুনের কেজি ৩০ টাকা
শীত ঘনিয়ে আসায় বাজারে প্রায় সব সবজির দাম কমতির দিকে। মরিচের কেজি ৩০ টাকা। বেগুনের দামও কমে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি করছে খুচরা ব্যবসায়ীরা।
এদিকে বাঁধাকপি ও ফুলকপির দামও কমে প্রতি পিস ৩০ থেকে ৪০ টাকা, লাউ ৪০ থেকে ৬০ টাকা, শিমের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, ঝিঙে, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, ঢেঁড়স, মিষ্টি কুমড়া ও মুলার কেজি ৩০, পেঁপে ২০ টাকা। তবে এখনো ভরা মৌসুম না হওয়ায় টমেটোর দাম কমেনি। বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। তবে শসার দাম কমে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এখনো আদা লাগামহীন
দেশি আদার দাম না বাড়লেও চায়না আদার দাম লাগামহীন হয়ে আছে। ২০০ টাকার নিচে নামছে না। তবে দেশি আদা ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মসলার মধ্যে পেঁয়াজের দাম আগের মতো ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি, দেশি রসুন ৭০ ও চায়না রসুন ১২০-১৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
মসলা ব্যবসায়ী আকবর বলেন, আগের সপ্তাহের মতোই আদা ২০০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। দাম এত কেন? কমছে না কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বেশি দামে কেনা, কম দামে বিক্রি করব কীভাবে। তবে দেশীয় আদা একটু কম দামে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
স্থিতিশীল মাছের দাম
বিলের মাছ বেশি পাওয়ায় মাছের দাম কমেছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। ইলিশের দামও কমেছে বলে জানান ইলিশ মাছ ব্যবসায়ী মারুফ। তিনি বলেন, এক কেজির বেশি ইলিশ ১২০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। ছোটগুলোর দাম একটু কম। অন্যান্য মাছ ব্যবসায়ীরা বলেন, রুই ও কাতলার কেজি ২২০-৪৫০ টাকা, চিংড়ি ৫০০-৮০০ টাকা কেজি, টেংরা, বোয়াল, আইড়ের দাম কমে ৫০০-৮০০ টাকা, কাচকি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৬০০, কাজলি, বাতাসি ৬০০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া পাঙ্গাসের দামও কমে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
মুরগির কেজি ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা
মাছের দাম কমলেও গরু ও খাসির মাংসের দাম কমেনি। গরুর মাংস ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, খাসির মাংস ৮৫০-৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
তবে সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমেছে বলে কারওয়ান বাজারের মাংস ব্যবসায়ীরা জানান। তারা বলেন, প্রতি কেজি ব্রয়লার আগের সপ্তাহে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা বিক্রি করা হলেও শনিবার তা ১৫০ টাকা, লাল লেয়ার ২৮০ টাকা, পাকিস্তানির দাম কমে ২৪০ থেকে ২৬০ ও দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। পোল্ট্রির দামও কমে ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে নোয়াখালী পোল্ট্রি ও চাঁদপুর পোল্ট্রি মালিকরা জানান। ডিমের দাম কমে আগের সপ্তাহের মতো ডজন ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। হাঁসের ডিমের দামও কমে ডজন ১৪০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।
জেডএ/এসজি