অর্থ পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনা উচিত: এফবিসিসিআই সভাপতি
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন, ‘বিদ্যমান ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি করলে দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই দেশে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ এবং শিল্প সচল রাখতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ানো যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘সুদের হার ৯ শতাংশ তুলে দিলে শিল্প তার সক্ষমতা হারাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক যেহেতু বলেছে, আমদানির আড়ালে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত মূল্য দেখানোর প্রমাণ পেয়েছে তারা। আন্ডার ইন-ভয়েস ও ওভার ইন-ভয়েসের মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে। তাদের উচিত জড়িতদের আইনের আওতায় আনা।’
শনিবার(৫ নভেম্বর) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ইআরএফ সংলাপে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ কার্যলয়ে এ সংলাপের আয়োজন করা হয়।
জসিম উদ্দিন বলেন, ঋণের সুদের হার উঠিয়ে দেওয়ার কথা অনেকেই বলছে। তবে সবাই না, সুদের হার না বাড়িয়ে ব্যাংকের সক্ষমতা বাড়ানো হলে সমস্যার সমাধান হতে পারে। কারণ, যখন সুদের হার কমানো হয়েছে, তখন দেশে অনেক বিনিয়োগ বেড়েছে।’
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘ঋণের সুদহার বাড়ানোর বিষয়ে একেক ধরনের এজেন্ডা থাকে গবেষণা সংস্থাগুলোর। তারা একেক জনের প্রতিনিধিত্ব করে এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে এর ফলে শিল্প টিকে থাকবে কি না? বর্তমান অবস্থায় সুদহার বাড়ালে শিল্প কোথায় যাবে। বাড়তি ব্যয় কমিয়ে ব্যাংকের সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। ব্যয়বহুল শাখাসহ ব্যাংকের অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যয় কমাতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ডলার শক্তিশালী করতে সুদের হার বাড়িয়েছে। তাদের ফর্মুলা আমাদের দেশে বাস্তবায়ন করলে হবে না। দেশের শিল্পের কথা বিবেচনা করেই নীতি গ্রহণ করতে হবে।’
জ্বালানি সংকট নিরসনের ব্যাপারে তিনি বলেন, কয়লাভিত্তিক জ্বালানিতে যেতে হবে। আমাদের নিজস্ব কয়লা ব্যবহার করতে হবে। দেশের উন্নয়নে শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব জ্বালানি সহযোগিতা লাগবে।
জ্বালানি স্বল্পতার বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘গ্যাস ও বিদ্যুৎ এখন বড় ইস্যু। কোভিডের সময় সিদ্ধান্ত ছিল শিল্প বন্ধ করা যাবে না। এটা সাহসী সিদ্ধান্ত ছিলো। চলমান সংকটেও তেমন সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বেড়েছে. তাই গ্যাস বেশি দামে আমদানি করতে হবে।’
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সরকার গ্যাসে ভর্তুকি যা দিচ্ছে এর চেয়ে বেশি ট্যাক্স নিচ্ছে। এলএনজিতে ৪৭ শতাংশ কর এবং ডিজেলে প্রতিলিটারে ২৪ টাকা কর নিচ্ছে। এই কর হার কমিয়ে দাম সমন্বয় করে নতুন করে যৌক্তিক দাম ঠিক করা দরকার।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কৃচ্ছ্রতা সাধনের কথা বলেছেন। দুর্ভিক্ষ হলে সারা বিশ্বে হবে। বাংলাদেশ এর বাইরে নয়। এ ক্ষেত্রে আমাদের মিতব্যায়ী হতে হবে।’
অর্থ পাচারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক যেহেতু বলেছে, আমদানির আড়ালে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত মূল্য দেখানোর প্রমাণ পেয়েছে তারা। আন্ডার ইন-ভয়েস ও ওভার ইন-ভয়েসের মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে। তাদের উচিত জড়িতদের আইনের আওতায় আনা। তা না হলে শুধু বাহবা নেয়ার জন্য মুখরোচক কথা বলা উচিত নয়।’
আইএমএফ এর ঋণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আইএমএফ তাদের ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে শর্ত দিবে, তবে আমাদের নেগসিয়েশন করতে হবে দক্ষতার সঙ্গে। সেই সক্ষমতা আমাদের থাকতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি মেটাতে আইএমএফ থেকে ঋণ নিতে হবে। তার মানে এই নয় সবকিছু জলাঞ্জলি দিয়ে। বাংলাদেশের অবস্থা এতটা বেগতিক নয় যে, সব শর্ত মেনে ঋণ নিতে হবে।’
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘যেসব পণ্য আমদানির প্রয়োজন বেশি তা দেশে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হলে আমদানিতে ডলারের ব্যয় কমে যাবে। তাতে ডলার ঘাটতি কিছুটা লাঘব হবে। এ দিকে এখন নজর দেওয়ার প্রয়োজন।’
ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সহসভাপতি এম শফিকুল আলম।
জেডএ/এমএমএ/