চিনিতে চরম অস্বস্তি, সবজিতে স্বস্তি
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে দেশে পর্যাপ্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য রয়েছে। কোন পণ্যের সংকটের সম্ভাবনা নেই। তারপরও বাজারে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। ক্ষোভ প্রকাশ করে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্যাসের অজুহাতে বাজারে চিনি উধাও। এভাবে আর কতদিন চলবে জানেন না তারা। তাদের অভিযোগ, পাইকারি ব্যবসায়ীরা শুধু আসবে আসবে বললেও তারা পাচ্ছেন না। এদিকে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের পরও চালের দাম কমেনি। আগের মতোই বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। তবে শীত ঘনিয়ে আসায় সবজির বাজারে স্বস্তি দেখা দিয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে কমেছে ৫ থেকে ১০ টাকা।
শনিবার (৫ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
পাওয়া যাচ্ছে না চিনি
কারওয়ান বাজারের মায়ের দোয়া স্টোর, জব্বার স্টোর, ইয়াসিন স্টোর, আব্দুর রব স্টোরসহ অসংখ্য খুচরা ব্যবসায়ীরা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, গ্যাসের সমস্যার কারণে বলা হচ্ছে চিনি কম উৎপাদন হচ্ছে। আবার বলা হচ্ছে নিত্যপণ্যের অভাব নেই। তাহলে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না কেন। মিলমালিকরা কেন চিনি দিচ্ছে না। তারা বাহাবা নেওয়ার জন্য কয়েকটা বাজারে চিনি বিক্রি করছে খুচরা দামে। দুই দিকেই লাভ করছে। আর আমরা চিনি পাচ্ছি না প্রায় মাস হয়ে যাচ্ছে। এভাবে আর কতদিন চলতে হবে। পাইকারি ব্যবসয়ীরা শুধু বলছেন, ‘এইতো আসবে’। কিন্তু পাচ্ছি না।
তারা আরও বলেন, গত মাসের প্রথম দিকে চিনি রিফাইনারি মিলমালিক ও সরকার প্রতি কেজি খোলা চিনি ৯০ টাকা ও প্যাকেটজাত ৯৫ টাকা কেজি বিক্রির ঘোষণা দেয়। তারপর থেকেই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না চিনি।
কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় মেঘনা গ্রুপের ডিলার জামাল ট্রেডার্সসহ অন্যান্য ডিলাররা মিল থেকে চিনি না পাওয়ায় দোকানে তালা মেরে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
খুচরা বিক্রেতারা আরও জানান, ৯০ ও ৯৫ টাকা দরে চিনি পাওয়া না গেলেও সয়াবিন তেল নির্ধারিত কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে। ৫ লিটার ৮৫০-৮৭০ টাকা, ২ লিটার ৩৫০ টাকা এবং ১ লিটার ১৭০ টাকা। মসুর ডাল ৯০-১৩৫ টাকা, চিনিগুড়া চাল ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
এখনো বেশি চালের দাম
সরকার চালের বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও কমছে না দাম। আমনের মৌসুম ঘনিয়ে আসলেও চালের দাম কমেনি। বরং সব চাল বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। কুমিল্লা রাইস জেনারেল স্টোরের শহিদুল ইসলাম ও বরিশাল রাইস এজেন্সির হাফিজ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এখনো আগের দামে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। মিনিকেট চাল এখনো ৭৪ থেকে ৭৫ টাকা কেজি, ২৮ চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, মোটা হাইব্রিড চাল ৪৮, বাসমতি ৮৮, নাজির শাইল ৮২ থেকে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। পোলাওর চালের দামও কমছে না। খোলা এই চাল ১২৫ টাকা ও বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেট চাল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
সবজিতে স্বস্তি
শীত ঘনিয়ে আসায় গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় সবজির দাম কমের দিকে। প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। আগের সপ্তাহের ৬০ টাকা বাঁধাকপি ও ফুলকপির দাম কমে প্রতি পিস ৪০ থেকে ৫০ বিক্রি করা হচ্ছে। শিমের দামও কমে ৭০ থেকে ৯০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। যা গত শনিবার ৯০ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি হয়েছে।
বেগুনের দাম কমে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, ঝিঙে, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, ঢেড়স, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ টাকা। তবে এখনো মৌসুম না হওয়ায় টমেটো ১২০ টাকা, শসার দাম বেড়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকা, মরিচের কেজি ৪০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান। মরিচ বিক্রেতা শফিক বলেন, শীতের কারণে সরবরাহ বেশি হওয়ায় মরিচের কেজি ৪০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।
বেড়েছে আদার ঝাঁজ
মসলার মধ্যে পেঁয়াজের কেজিতে গত সপ্তাহে বেড়েছিল ৫-১০ টাকা। এ সপ্তাহেও ভালোমানের পেঁয়াজ ৬০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। তবে অন্যান্য পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০ কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হতে যাচ্ছে। তাই আর দাম কমার সম্ভাবনা নেই। ছাঁচের পেঁয়াজ উঠলে কমবে দাম।
তবে আদার দাম আগের সপ্তাহে ১৬০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও শনিবার বেড়ে ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে বিক্রেতারা। তবে দেশি আদা ১০০ থেকে ১১০ টাকা। দেশি রসুন ৭০ ও চায়না আদা ১৩০-১৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। অন্যান্য মসলাও আগের দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
কমেনি মাছ-মাংস-ডিমের দাম
শীত ঘনিয়ে আসলেও নদী, বিলের মাছের দাম কমছে না। মাছ ব্যবসায়ীরা বলেন, আগের মতো খাল, বিলের মাছ নেই। তাই কমছে না মাছের দাম। রুই ও কাতলার কেজি ২৮০-৪৫০ টাকা, চিংড়ি ৬০০-১০০০ টাকা কেজি, বোয়াল ৮০০-১২০০ টাকা, কাচকি ৪০০-৫০০ টাকা, সিং ৪০০ থেকে ৬০০, পাঙ্গাস ১৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
এদিকে মাংসের দামও কমেনি। কারওয়ান বাজারের মাংস ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রতি কেজি বয়লার ১৮০ টাকা, লাল লেয়ার ৩০০ টাকা, পাকিস্তানি ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। এদিকে গরুর মাংসও ৭০০ টাকা, খাসির মাংস ৮৫০-৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে পরিমানে বেশি নিলে একটু কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান।
এদিকে ডিমের দাম নিয়ে ভোক্তারা খেদোক্তি প্রকাশ করলেও বিক্রেতারা বলেন, ১৪০ টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে। তবে সাদা ডিমের ডজন ১৩৫ টাকা। আবার হাঁসের ডিমের ডজন ১৫০। এর চেয়ে আর কমবে না ডিমের দাম। কারণ সব জিনিসের দাম বাড়ছে। তাহলে কিভাবে কমবে ডিমের দাম।
জেডএ/এএস