সন্দেহজনক লেনদেনে শীর্ষে কুমিল্লা
এক বছরের ব্যবধানে আর্থিকখাতে সন্দেহজনক লেনদেনের সংখ্যা আশঙ্কাজনক বেড়ে গেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের চেয়ে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ৪৬ শতাংশের বেশি। এরমধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র হওয়ায় ঢাকাতে সবচেয়ে বেশি ৫৫ শতাংশ সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। তবে সীমান্ত এলাকার মধ্যে কুমিল্লায় সবচেয়ে বেশি সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। এ সব সন্দেহজনক লেনদেনের প্রায় পুরোটাই ব্যাংকিং খাতে হয়েছে।
আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার (বিএফআইইউ) বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২১-২২ এ সব তথ্য জানা গেছে।
সোমবার (৩১ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংক এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ২৮০টি। ২০২১-২২ অর্থবছরে হয়েছে ৮ হাজার ৫৭১টি। গত অর্থবছরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৩ কোটি ৬৮ লাখ ৯০ হাজারটি লেনদেন হয়। মাধ্যমে নগদ টাকার উত্তোলন হয়। এ সময় ২১ লাখ ১১ হাজার ৩০০ (২১ হাজার ১১৩ বিলিয়ন) কোটি টাকার নগদ লেনদেন হয়েছে, যা ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে ৪৬ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি।
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী, ১০ লাখ টাকা বা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা জমা বা উত্তোলন করলে তা ক্যাশ ট্রানজেকশন রিপোর্ট বা সিটিআর হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জানাতে হয়। অর্থাৎ ১০ লাখ টাকা করে নগদ উত্তোলনের পরিমাণ হচ্ছে ২১ হাজার ১১৩ বিলিয়ন টাকা।
এরমধ্যে ঢাকাতে সবচেয়ে বেশি ৫৫ শতাংশ। তাতে উত্তোলনের মাধ্যমে ৫৪৫ কোটি টাকা ও জমার মাধ্যমে ৬০৮ কোটি টাকা সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। তারপরই চট্টগ্রামে ১৬ শতাংশ, এরপর ও খুলনা ও রাজশাহীতে ৭ শতাংশ করে লেনদেন হয়েছে।
অপরদিকে, গত অর্থবছরে সীমান্ত এলাকায় সবচেয়ে বেশি অর্থ লেনদেন হয়েছে। ২১ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে কুমিল্লা এলাকায় ৩৬৮ বিলিয়ন টাকা। এরপর যশোরে ৩২৭ বিলিয়ন টাকা, ময়মনসিংহে ২৭৪ বিলিয়ন টাকা। এক থেকে আড়াই মিলিয়নের ক্যাশ ট্রানজেকশন হয়েছে ৭ হাজার ২৫৩ বিলিয়ন টাকা। আর আড়াই থেকে ৫ মিলিয়ন ক্যাশ ট্রানজেকশন হয়েছে ৩ হাজার ২৮৫ বিলিয়ন পাকা।
তবে বিদায়ী অর্থবছরে দেশে ব্যাপকভাবে সন্দেহজনক লেনদেন হলেও কী পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে সে তথ্য নেই বাংলাদেশ ব্যাংকে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাস বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানতে পেরেছে, আমদানি করা পণ্যের মূল্য দ্বিগুণ পর্যন্ত দেখিয়ে টাকা পাচার করা হয়েছে। এই অর্থ ফিরিয়ে আনা দুরূহ কাজ। আন্ডার ইনভয়েসিং, অর্থাৎ দাম কম দেখিয়ে অর্থ পাচার করা হচ্ছে।
বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস বলেন, মানি লন্ডারিংয়ে সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলায় বেশ কয়েকটি ব্যাংককে জরিমানা করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্যে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি অর্থপাচার হয়। কোনো কোনো আমদানি পণ্যে ২০ থেকে ২০০ শতাংশ ওভার ইনভয়েসিং হয়েছে। একই সঙ্গে গাড়ি আমদানিতে দাম কম দেখিয়ে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। তাই কিছু ক্ষেত্রে আমদানিতে শর্ত দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
জেডএ/আরএ/