এলডিসির চ্যালেঞ্জ: রাজস্ব কাঠামোর আমূল সংস্কার জরুরি
এলডিসি উত্তোরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশের রাজস্ব ও শুল্ক কাঠামোর আমূল সংস্কার করতে হবে। কারণ রপ্তানিকৃত ২০টি পণ্যের মধ্যে ১৮টিই শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা ভোগ করেছে। চলতি অর্থবছরে ৬টি পণ্যের আমদানি শুল্ক হার কমানো হয়েছে। আরও ৬০টি পণ্যের আমদানি শুল্ক হ্রাস করা হবে।
বুধবার (২৬ অক্টোবর) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত প্রতিযোগিতামূলক শুল্ক কাঠামো: প্রেক্ষিত স্বল্পোন্নত দেশের উত্তরণ’ শীর্ষক ওয়ার্কশপে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমানের সভাপতিত্বে এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের যুগ্ম প্রধান মো. মশিউল ইসলাম। আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য শীষ হায়দার চৌধুরী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (ডব্লিউটিও সেল, পরিচালক-৩) ফারহানা আইরিছ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর প্রথম সচিব (শুল্ক রেয়াত ও প্রকল্প সুবিধা) ড. মো. নিয়োমুল ইসলাম।
এলডিসি উত্তোরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশের রাজস্ব ও শুল্ক কাঠামোর আমূল সংস্কার করতে হবে উল্লেখ করে ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেছেন, ‘নীতিমালা সহজীকরণ, দক্ষতা উন্নয়ন, বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলোর সাথে পিটিএ এবং এফটিএ স্বাক্ষরের পাশাপাশি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংস্থায় নিজেদের অর্ন্তভূক্তি একান্ত অপরিহার্য।
ঢাকা চেম্বার সভাপতি বলেন, এলডিসি উত্তোরণের পর আর্ন্তজাতিক বাজারে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা হারাবে। দেশে উৎপাদিত পণ্য বর্হিবিশ্বে রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রায় ৮ থেকে ১৬ শতাংশ শুল্ক প্রদান করতে হবে। যা আমাদের রপ্তানির সক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করবে। তিনি বলেন, স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষায় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বর্তমানে চলমান নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক কাঠামোতে উল্লেখজনক হারে পরিবর্তন নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে আমাদের স্থানীয় উদ্যোক্তাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পণ্য বহুমুখীরণের মাধ্যমে ভ্যালু এডিশন নিশ্চিতকরনের কোন বিকল্প নেই।
রিজওয়ান রাহমান বলেন, সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা, দেশের রাজস্ব ও শুল্ক কাঠামোর আমূল সংষ্কার ও অটোমেশন নিশ্চিতকরণ, নীতিমালা সহজীকরণ, দ্রুততম সময়ে ও হয়রানিমুক্তভাবে উদ্যোক্তাদের সরকারি সেবা প্রাপ্তি, শ্রমিক ও উদ্যোক্তাদের দক্ষতা এবং সক্ষমতা উন্নয়ন, বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলোর সাথে পিটিএ এবং এফটিএ স্বাক্ষরের পাশাপাশি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংস্থায় নিজেদের অর্ন্তভূক্তিতে উদ্যোগ গ্রহণ একান্ত অপরিহার্য।
মূল প্রবন্ধে মশিউল ইসলাম বলেন, গত অর্থবছর বাংলাদেশ ৫২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এতে সর্বোচ্চ রপ্তানিকৃত ২০টি পণ্যের মধ্যে ১৮টিই শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা ভোগ করেছে। এলডিসি উত্তোরণের পর আমাদের উদ্যোক্তারা এ সুবিধা প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হবেন। মতাবস্থায় বৈশ্বিক বাজারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বেসরকারিখাতকে দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়াতে এখনই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
এলক্ষ্যে বাণিজ্য সহযোগী দেশসমূহের সাথে দ্রুততম সময়ে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর (এফটিএ) এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ব্লক গুলোর সাথে বাংলাদেশের অর্ন্তভূক্তি নিশ্চিতকরণ একান্ত অপরিহার্য। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকর্ষণ ও স্থানীয় শিল্পায়নকে বেগবান করতে দেশের সার্বিক রাজস্ব এবং শুল্ক কাঠামোর আমূল সংষ্কার ও অটোমেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে আমাদের রপ্তানিকৃত পণ্যের বহুমুখীকরণের মাধ্যমে ভ্যালু অডিশনের উপর আরও বেশি হারে মনোনিবেশ করতে হবে।
ট্যারিফ কমিশনের সদস্য শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, বাস্তব ভিত্তিক শুল্ক কাঠামো প্রণয়নে দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতকে একযোগে কাজ করতে হবে। কারণ আমাদের জিডিপিতে করের অবদান মাত্র ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই এলডিসি উত্তোরণের পর রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সরকারকে আরো অধিক হারে ভ্যাট ও কর আহরণের উপর নজর দিতে হবে।
যুগ্ম সচিব ফারহানা আইরিছ বলেন, শুল্ক কাঠামো সহজীকরণের পাশাপাশি আমাদেরকে রপ্তানির পরিমাণ বাড়ানো ও পণ্য বহুমুখীকরণের উপর নজর দিতে হবে। কারণ বর্তমানে আমাদের রপ্তানি ও আমদানির মধ্যে বিশাল ঘাটতি রয়েছে।
এনবিআরের ড. মো. নিয়োমুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে দেশের মোট রাজস্বের ৩৪ শতাংশ আসে আমদানি শুল্ক হতে। এলডিসি’র চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশকে আমদানি শুল্ক হারে উল্লেখজনক হ্রাস করতে হবে। সেক্ষেত্রে ভ্যাট ও আয়করের উপর বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৬টি পণ্যের আমদানি শুল্ক হার কমানো হয়েছে এবং আরও ৬০টি পণ্যের আমদানি শুল্ক হ্রাসের লক্ষ্যে এনবিআর কাজ করছে। এলডিসি’র চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্থানীয় শিল্পের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই।
জেডএ/এএস