পকেট কাটছে ইউনিলিভার, ভোক্তা অধিদপ্তরে তলব
পঞ্চান্ন টাকার বড় লাক্স সাবান বিক্রি করা হচ্ছে ৭৫ টাকায়। ৯০ টাকার হুইল পাওডার ১৪২ টাকা। ২১০ টাকার সার্ফ এক্সএলের দাম ২৮০ টাকা। ১০ টাকার মিনি সাবান ১৫ টাকা। এভাবে সব পণ্য ইউনিলিভার কোম্পানি বেশি দামে বিক্রি করছে। ভোক্তা অধিদপ্তরের কাছেও এই অভিযোগ এসেছে। বাধ্য হয়ে বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) ইউনিলিভারকে তলব করা হয়েছে।
ভোক্তা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আফরোজা রহমান এক চিঠিতে সাবান, ডিটারজেন্ট, পেস্ট, লিকুইড ক্লিনারসহ বিভিন্ন পণ্যের মূল্য তালিকা নিয়ে আসতে বলেছেন।
ডলার ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে বিভিন্ন কোম্পানি ইচ্ছামতো পণ্যের দাম নির্ধারণ করে ভোক্তাদের পকেট কাটছে। দেশের পাড়া মহাল্লা থেকে শুরু রাজধানীর কৃষিমার্কেট, টাউনহল, কারওয়ান বাজার পর্যন্ত সব জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, আমাদের বলছেন কেন, ইউনিলিভার কোম্পানিকে বলেন, তারা তো ইচ্ছা মতো দাম নিচ্ছে।
এ ব্যাপারে টাউনহল মার্কেটের নিউ হক স্টোরের রাজন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, কিছু দিনের মধ্যে ইউনিলিভার সব পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। আমরা কী করব? বেশি দামে কিনে বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আগে যে হইল সাবান ২৫ টাকা তা ৩০ টাকা হয়ে গেছে। ৫৫ টাকার বড় লাক্স ৭৫ টাকা, ৩৫ টাকার ভিমবার ৪০ টাকা, ৯২ টাকার হুইল ১৪২ টাকা, ২১০ টাকার সার্ফএক্সএল ২৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এভাবে সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। তা দেখার কেউ নেই।’
অপরদিকে কারওয়ান বাজারের আলি স্টোরের আলি হোসেনও বলেন, ‘বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধি হুহু করে বাড়ছে। আটা ময়দার মতো ইউনিলিভারের সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।'
এর কারণ জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কি করার আছে। কিছু বলতে হলে কোম্পানিকে বলেন। শুধু এই দুই বিক্রেতা নয়, বাজারের অন্য বিক্রেতারাও বলছেন, সরকারকে এটা দেখা দরকার। এভাবে ভোক্তারা ঠকবে, তা হতে পারে না।’
এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, বুধবার বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভারসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে ডাকা জানতে চাওয়া হবে ‘কেন সাবান, ডিটারজেন্ট, পেস্টের দাম এত বাড়ল। তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে, এটা কতটুকু যৌক্তিক তা নিয়ে জিজ্ঞেস করা হবে। তাদের চিঠি দিয়ে দুই বছর, এক বছর, ছয় মাস ও আজকের পণ্য তালিকা চাওয়া হয়েছে। দেখা হবে দামের পার্থক্য কত হয়েছে। এই পার্থক্য যৌক্তিক কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।’
কেউ অভিযোগ করুক বা না করুক একজন ভোক্তা হিসেবে আমারও দায়িত্ব আছে বাজারে কী হচ্ছে তা দেখার। ভোক্তার পকেট যাতে কম কাটা হয় সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইউনিলিভার যা করছে এটা আগে কেউ কখনো দেখেনি। তাইতো ভোক্তাদের পকেট থেকে টাকা চলে যাচ্ছে। তা দেখা হবে, যোগ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউনিলিভারের পরিচালক (ব্রান্ড অ্যান্ড কমিউনিকেশন) শামিমা আখতার ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ডলারের দাম বেড়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে সব পণ্যের দাম বেড়েছে। আমাদের কাঁচামাল এনে পণ্য তৈরি করতে হয়। তাই আমাদের পণ্যের দামও বৃদ্ধি করা হয়েছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগে তো কখনো এত দাম বৃদ্ধি করা হয়নি। এটা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। তাই টিকে থাকার জন্য ইউনিলিভার পণ্যের দাম বৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়েছে। প্রতিযোগিতা করেই বাজারে টিকে থাকতে হচ্ছে। সারাবিশ্বে আমাদের পণ্য সবার পছন্দের। তাই ভোক্তারাও কিনছে।’
জেডএ/এমএমএ/