এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতীয় কমিটি গঠন
২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হতে উত্তরণ পরবর্তী বাংলাদেশকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তার প্রস্তুতি, পরিকল্পনা গ্রহণ, বাস্তবায়ন ও মনিটরিং বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির কাজে সহায়তার জন্য বিষয়ভিত্তিক ৭টি সাব-কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এরমধ্যে একটি হচ্ছে ‘অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ ও ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণ’ বিষয়ক সাব-কমিটি। এ সাব-কমিটির উদ্যোগে শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) একটি জাতীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ সাব-কমিটি স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের বেলায় সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গৃহীতব্য কার্যক্রম সম্পর্কে যে খসড়া সুপারিশমালা প্রণয়ন করেছে, তা সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিকট উপস্থাপন এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে এই কর্মশালাটির আয়োজন করা হয়।
অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান,অর্থনীতিবিদ বিআইডিএস এর মহা-পরিচালক ড. বিনায়েক সেন, পিআরআইর চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার। প্যানেল আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
জাতীয় কর্মশালায় মূল সুপারিশমালা উপস্থাপন করেন এ সাব-কমিটির অধীনে গঠিত তিনটি স্টাডি গ্রুপের তিন আহ্বায়ক। অর্থাৎ কর সংক্রান্ত বিধি-বিধান ও পদ্ধতি সংস্কার বিষয়ে উপস্থাপনা করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কর নীতি) ড. সামস উদ্দিন আহমেদ, ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণ বিষয়ে উপস্থাপনা করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (শুল্ক নীতি) মো. মাসুদ সাদিক এবং রপ্তানি প্রণোদনা বিষয়ে উপস্থাপনা করেন অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেল এর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আরফিন আরা বেগম।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হওয়ার পর বাংলাদেশ বহিঃবিশ্বে রপ্তানির ক্ষেত্রে বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত শুল্ক মুক্ত সুবিধা হারাবে। তাই রপ্তানি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) বা প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (পিটিএ) সম্পাদন করতে হবে। এরূপ বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের ফলে রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। একইসঙ্গে রপ্তানিতে বর্তমানে প্রদত্ত নগদ প্রণোদনা ও ভর্তুকির মধ্যে যেগুলো বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-এর বিধিবিধান এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় সেগুলো ক্রমান্বয়ে হ্রাস করে তার পরিবর্তে বিকল্প উপায়ে রপ্তানিকে উৎসাহিত করার পন্থা উদ্ভাবন করতে হবে।
কর্মশালায় ‘কর সংক্রান্ত বিধি-বিধান এবং পদ্ধতি সংস্কার’ বিষয়ক স্টাডি গ্রুপ কর ব্যয় সংক্রান্ত গবেষণা সম্পাদনের মাধ্যমে কর অব্যাহতির অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। রাজস্ব প্রশাসনে অটোমেশন ও ডিজিটাইজেশনের ব্যাপ্তি বৃদ্ধির উপরও বিশেষ জোর দেওয়া হয়। রাজস্ব আহরণে নতুন কাস্টমস আইন ও নতুন আয়কর আইনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন চুক্তি অনুসারে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সহজতর করা ও পন্য খালাস দ্রুততর করার জন্য কর্মপদ্ধতি আধুনিকায়নের সুপারিশ করা হয়।
‘ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণ’ বিষয়ক স্টাডি গ্রুপের উল্লেখযোগ্য সুপারিশ হচ্ছে-যে সকল পণ্যের ক্ষেত্রে আরোপিত কাস্টমস শুল্ক ডব্লিউটিও-এর বন্ড ডিউটি হার সীমা অতিক্রম করেছে সেগুলোর ক্ষেত্রে শুল্ক হার উক্ত সীমার মধ্যে নিয়ে আসা, পর্যায়ক্রমে আমদানি পর্যায়ে প্রযোজ্য প্যারা-ট্যারিফ এবং সম্পূরক শুল্ক হ্রাস করতে হবে।
এ ছাড়া, মুক্ত আলোচনায় বিভিন্ন চেম্বার বডির সদস্যগণ ও বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিনিধিরা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের পথ মসৃন করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য রপ্তানিকারক, আমদানিকারকসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের ও গবেষকদের বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণ জরুরি।
জেডএ/এমএমএ/