স্বস্তি নেই চিনি-আটা-ময়দা-চালের বাজারে
লাগামহীন ডিমের বাজারে একটু স্বস্তি ফিরে এসেছে। সাদা ডিমের ডজন ১১০ টাকা ও লাল ডিম ১১৫ টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে। বেশি সরবরাহ হওয়ায় মরিচের ঝাঁজও কমে গেছে। প্রতি কেজি বিক্রি করা হচ্ছে ৫০ টাকা। বৃষ্টি কমে যাওয়ায় অন্যান্য সবজির সরবরাহও বাজারে বেড়েছে। এ জন্য দাম কমেছে কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত।
তবে চালের দাম কোনোক্রমেই কমছে না। মিনিকেট ৭৫ টাকা, আটাশ ৬০ টাকা কেজি। সয়াবিন তেল নতুন রেটে এক লিটার ১৯২ টাকা, ২ লিটার ৩৮৪ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ৫ লিটারের তেল আগের রেটে ৯০০ থেকে ৯১০টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে সিন্ডিকেট করে আড়তদার থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা হঠাৎ করে দাম বাড়িয়েছিল। এরপর বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়ে তাদের ধরা হলে কমছে ডিম, মুরগি, মাছ মাংসের দাম।
শনিবার (২৭ আগস্ট) রাজধানীর পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারে সরেজমিন ঘুরে সংশ্লিষ্ট বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।
কমেছে সবজির দাম
সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। আর ১২০ টাকা মরিচের কেজি কমে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী এবাদুল ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘কাচাঁ মরিচ ৫০ টাকা কেজি। দারুন ঝাল।’
দাম এত কম কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরবরাহ বেশি। আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই কম দাম। আগের সপ্তাহে ১২০ টাকা কেজি, তার আগের সপ্তাহে ২৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা হয়েছে।’
সবজি ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, ‘বৃষ্টিপাত কম, সরবরাহ বেশি। তাই প্রায় সবজির দাম কমেছে ১০ থেকে ২০ টাকা। পেঁপের দাম কমে ২০ টাকা কেজি, লাউ ও চালকুমড়া ৪০ থেকে ৬০ টাকা, সিমের দাম কমে ১৬০ টাকা, গাঁজর ৯০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, বেগুনের দাম কমে ৫০ থেকে ৬০, পটল ৪০ টাকা, আলু ৩০ টাকা, পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচুর মুখী ৬০ টাকা, ধুন্দল ৪০ টাকা, শসা ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
ডিমের ডজন ১১৫ টাকা
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে ডিমের ডজন ১৫০ টাকা হয়ে যায়। এরপর সরকার কঠোর হলে কমতে শুরু করে। গত সপ্তাহে ১২০ টাকা বিক্রি করা হলেও শনিবার সাদা ডিমের ডজন ১১০ ও লাল ডিম ১১৫ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।
ডিম ব্যবসায়ী সাহাবুদ্দিন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার কারণে কমছে ডিমের দাম।
ডিমের মতো পোলট্রি মুরগির দামও কমতে শুরু করেছে। আগের সপ্তাহের মতো পোলট্রি মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের আল্লাহর দান মুরগি দোকানের রাজু বলেন, ‘বাজার আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। পোলট্রি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, পাকিস্তানি ২৮০ থেকে ২৯০ ও দেশি মুরগি ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
মাংসের দামও কমতির দিকে বলে বিক্রেতারা জানান। বাজারের ভাই ভাই মাংস ঘরের জিহাদ বলেন, আগে ৭০০ টাকা বিক্রি করা হলেও এখন ৬৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। বেচাকেনা নেই, তাই কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। খাসির দামও আগের চেয়ে কমে ৯০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
সুখবর নেই চালের বাজারে
সরকার বিভিন্ন সুযোগ দিলেও কমছে না চালের বাজার। জ্বালানি তেলের দাম দামের অজুহাতে কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়ে গেছে বলে বিক্রেতারা জানান। কারওয়ান বাজারের মেসার্স কুমিল্লা রাইস এজেন্সির আবুল কাশেম ও বরিশাল রাইস এজেন্সির রশিদ বলেন, মিনিকেট চালের কেজি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি, আটাশ চাল ৫৪ থেকে ৬০ টাকা ও নাজির শাইল ৮০ থেকে ৯০, পাইজাম ৫২ থেকে ৫৪ টাকা কেজি। মোটা চাল পাওয়া যায় না, আমরা বিক্রিও করি না। তবে পোলাও চালের দাম বেড়েছে খুবই বেশি। বর্তমানে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। যা আগে ১১০-১১২ টাকা কেজি বিক্রি করা হয়েছে। তারা আরও বলেন, কোনো সুখবর নেই চালে। এভাবেই চলবে বাজার।’
কমছে মাছ, মাংসের দাম
আগের সপ্তাহে মাছের দাম বাড়লেও বর্তমানে কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা কমেছে বলে মাছ ব্যবসায়ীরা জানান। তারা বলেন, কেজির উপরে ইলিশ মাছের কেজি একটু কমে ২০০০ টাকা কেজি এক কেজির নিচের ওজনের মাছ ১৫০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল আওয়াল ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘দেখেন না বাজারে কাস্টমার নেই। তাই প্রায় মাছের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। রুই ও কাতল ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি, চিংড়ি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, কাজলি মাছ ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বাতাসি ৮০০ টাকা, আইড় ১০০০, বাইম ৭০০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি।’
কোনো স্বস্তি নেই চিনি-আটা-ময়দায়
সয়াবিন তেলের মতো আটা, ময়দা ও চিনির বাজারে দেখা যাচ্ছে না কোনো স্বস্তি। আব্দুর রব স্টোরের রব ও ইউসুফ জেনারেল স্টোরের ইউসুফ জানান, নতুন রেটে এক লিটার তেল ১৯২ টাকা, ২ লিটার তেল ৩৮৪ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ৫ লিটার সয়াবিন তেল আগের রেটের ৯০০ টাকা থেকে ৯১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর চিনির কেজি ৯০ টাকা আর দেশি চিনি ১০০ টাকা, আটা ৫০ টাকা, ময়দা ৬০ টাকা, ডাল ১০৫ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
জেডএ/এমএমএ/