অভিযানে বাজার ঠাণ্ডা, ডিমের ডজন ১২০ টাকা
লাগামহীন ডিমের বাজার আগের অবস্থায় ফিরে আসতে শুরু করেছে। ১২০ টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে। গরিবের আমিষ মুরগির বাজারও স্বাভাবিক হয়ে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, তেলের অজুহাতে সিন্ডিকেট করে আড়ৎদাররা হঠাৎ করে দাম বাড়িয়েছিল। বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়ে তাদের ধরার কারণে কমে গেছে ডিম, মুরগির দাম।
সম্প্রতি বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়লে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও বাজার ও মিরপুর শাহ আলী বাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালায়। এ সময় হিমালয় ট্রেডার্স ডিমের আড়ত, জনতা মামনি ডিমের আড়ত ও সততা মুরগির আড়তকে জরিমানা করা হয়।
অপরদিকে, চাহিদা কম থাকায় মাছের দামও কমেছে। হঠাৎ করে বৃদ্ধি পাওয়া বিভিন্ন সবজির দামও কমেছে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা। ২৮০ টাকার মরিচের কেজি ১২০ টাকায় নেমেছে। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে সরবরাহ বেশি ও আড়তে কম দাম রাখায় সপ্তাহের ব্যবধানে কম দামে প্রায় সব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।
শরিবার (২০ আগস্ট) রাজধানীর পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারে সরেজমিন ঘুরে সংশ্লিষ্ট বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।
মুরগির কেজিতে কমেছে ৩০ টাকা
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে গত সপ্তাহে ডিমের ডজন ১৫০ টাকা হয়ে যায়। বিভিন্ন বাজারের আড়ৎদারেরা সিন্ডিকেট করে ডিমের দাম বাড়িয়ে দেয়। এ নিয়ে দেশে হইচই পড়লে ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে সারাদেশে ডিম ও মুরগির বাজারে অভিযান চালানো হয়। এতে তাদের প্রতারণা ধরা পড়ে। বিভিন্ন বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের জরিমানাও করা হয়েছে। এই বার্তা সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ায় কমতে শুরু করেছে বিভিন্ন পণ্যের দাম।
হঠাৎ করে দাম কমার কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের খুচরা ডিম বিক্রেতা সাইফুল ঢাকাপ্রকাশ’কে বলেন, ‘তেজগাঁওয়ের আড়ৎদারেরা সিন্ডিকেট করে এভাবে ডিমের দাম বাড়িয়েছে। সরকার তাদের ধরে জরিমানা করায় কমতে শুরু করেছে দাম। আমরা বেশি লাভ করি না। যখন যেভাবে কিনি সামান্য লাভে বিক্রি করি। কয়েকদিন আগে ১৫০ টাকা ডজন বিক্রি করা হয়েছে। বাজারে আগুন লাগায় আড়ৎদারেরা। কালকে থেকে দাম কমতে শুরু করেছে। ১২০ টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে।’
ডিমের মতো পোলট্রি মুরগির বাজারের আগুন নিভতে শুরু করেছে। কয়েকদিন আগের ২০০ টাকা কেজির পোলট্রি মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। কাপ্তান বাজারের আড়তে অভিযান চালানোর কারণে বাজার স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তারাই সিন্ডিকেট করে এভাবে টাকা কামাইছে। এতে বাজারে আগুন লাগে। আমরা সামান্য লাভে বিক্রি করি।’
আল্লাহর দান মুরগি দোকানের রাজুও বলেন, ‘বাজারে দাম বেড়েছে আড়ৎ ও পাইকারদের কারণে। তাদের ধরার কারণে কমেছে দাম। আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। পোলট্রি কেজি ১৮০ টাকা, পাকিস্তানিটা ২৮০ থেকে ২৯০ ও দেশি মুরগি ৫০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে কমেছে ২০ থেকে ৩০ টাকা।
এদিকে চাহিদা না থাকায় মাংসের দামও কমতির দিকে বলে বিক্রেতারা জানান। বাজারের ভাই ভাই মাংস ঘরের জিহাদ বলেন, আগে ৭০০ টাকা বিক্রি করা হলেও এখন ৬৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। বেচা বিক্রি নেই, তাই কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। খাসির দামও আগের চেয়ে কমে ৯০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
বাড়তিই চালের বাজার
সরকার বিভিন্ন সুযোগ দিলেও কমছে না চালের বাজার। তেলের বাড়তি দামের অজুহাতে কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়ে গেছে বলে বিক্রেতারা জানান। কারওয়ান বাজারের মেসার্স কুমিল্লা রাইস এজেন্সির আবুল কাশেম ও বরিশাল রাইস এজেন্সির রশিদ বলেন, মিনিকেট চালের কেজি ৭০ থেকে ৭৬ টাকা কেজি, আটাশ চাল ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা ও নাজির শাইল ৮০ থেকে ৯০, পাইজাম ৫২ থেকে ৫৪ টাকা কেজি। মোটা চাল পাওয়া যায় না, আমরা বিক্রিও করি না। তবে পোলাও চালের দাম বেড়েছে খুবই বেশি। বর্তমানে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। যা আগে ১১০-১১২ টাকা কেজি বিক্রি করা হয়েছে।
মরিচের কেজি কমে ১২০ টাকা
সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে যায়। ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা মরিচের কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমেছে। এ ব্যাপারে মরিচ ব্যবসায়ী সাইদুর রজমান ঢাকাপ্রকাশ’কে বলেন, আগে ২৮০ টাকা কেজি মরিচের কেজি বিক্রি করেছি। বর্তমানে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। ৪০ টাকার পেপের দামও কমে ২০ টাকা কেজি, আগের ১০০ টাকার লাউ ও চালকুমড়া ৪০ থেকে ৬০ টাকা পিস বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া দাম কমে শিম ১৮০ টাকা, গাঁজর ৯০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, বেগুনের দাম কমে ৬০ থেকে ৭০, পটল ৪০ টাকা, আলু ৩০ টাকা, পেঁয়াজ ৫০ টাকা, কচুর মুখী ৬০ টাকা, ধুন্দুল ৪০ টাকা, শসার কেজি ৬০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। বিক্রেতা জানান, তেলের কারণে বাস্তবে যা দাম বেড়েছে, তা থেকে বহুগুণে বেড়ে গেছে বাজারে। কিন্তু সপ্তাহের ব্যবধানে সরবরাহ বেশি থাকায় কমেছে সবজির দাম।
মাছের দামও কমতি
তেলের বাড়তি দামের অজুহাতে আগের সপ্তাতে মাছের দাম বাড়লেও বর্তমানে কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা কমেছে বলে মাছ ব্যবসায়ীরা জানান। তারা বলেন, ইলিশ মাছের দাম সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২২০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হলেও একই ওজনের মাছ ১৫০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল আওয়াল ঢাকাপ্রকাশ’কে বলেন, দেখেন না বাজারে কাস্টমার নেই। তাই প্রায় মাছের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। রুই ও কাতল ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি, চিংড়ি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কাজলি মাছ ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, যা আগে ৯০০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি।
এখনো অস্বস্তি চিনি আটা ময়দায়
সয়াবিন তেলের মতো আটা, ময়দা ও চিনির বাজারে দেখা যাচ্ছে না স্বস্তি। বেশি দামে কেনার কারণে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান। আলি স্টোরের আলি হোসেন ঢাকাপ্রকাশ’কে বলেন, ‘চিনির কেজি ৯০ টাকা আর দেশি চিনি ১০০ টাকা। ডালের দামও কিছু বাড়তি। ৫ লিটার সয়াবিন তেল ৯০০ টাকা, ২ লিটার ৩৭০ টাকা ও এক লিটার ১৮৫ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। আটা ৫০ টাকা কেজি ও ময়দা ৬০ টাকা। তবে মসলার মধ্যে জিরার দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৮০ টাকা বেড়ে ৫৩০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
জেডএ/আরএ/