বিভিন্ন ফাঁকফোকরে প্রচুর অর্থ পাচার হচ্ছে: ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ
ব্যাংকিংখাতে চ্যালেঞ্জ অনেক উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘বাণিজ্যের আড়ালে বিভিন্ন ফাঁকফোকরে দেশ থেকে প্রচুর অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন লোকের দুর্নীতি আর বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বলতার কারণে খেলাপীঋণ হুহু করে বাড়ছে। কয়েক বছরের ব্যবধানে ২২ হাজার কোটি টাকা থেকে এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সব রেকর্ড ছাড়িয়ে সম্প্রতি বড় ব্যবসায়ীদের বিশেষ ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ কতটা ঝুঁকিপূর্ণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি অফিসের সম্মেলন কক্ষে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংকিংখাতে ভুল সিদ্ধান্তের কারণে রিজার্ভের উপর চাপ বাড়ছে। ঋণের সুদের সীমার মতো ডলারেরও সীমা বেধে দেওয়া হয়েছে। যা ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো। দেশে এতো আমদানি হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে কি আসলে হচ্ছে? তার আউটপুট কোথায়? বিভিন্নভাবে অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। এরফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে বড় সমস্যা হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার বাজার, ব্যাংক ও রেগুলেটর। স্থানীয় সরকার বলতে কিছু নেই। তাই সামষ্টিকভাবে খুব সহজে সংকট থেকে কেটে উঠা সম্ভব নয়। কারণ ব্যাংকিং খাত জাতীয় জীবনে ভালোভাবে অবস্থান করলেও ঋণ পুন:তফসিলিকরণ বেড়েই যাচ্ছে। বর্তমানে সুশাসন বড় সমস্যা। বাংলাদেশ ব্যাংককে বাইরে থেকে অর্থাৎ বিএবি, এবিবি ও এফবিসিসিআই থেকে বিভিন্ন ব্যাপারে চাপানো হচ্ছে সিদ্ধান্ত। অথচ আমাকে তৎকালিন কেবিনেট সচিবও কিছু চাপানোর চেষ্টা করলেও তা পারেনি। তাই যেভাবে হোক আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। ঋণ রি-সিডিউলের ক্ষেত্রে শুধূ বড় ঋণীরা সুযোগ পাবে আর ছোটরা পাবে না তা হবে না। মাঝারি ও ক্ষুদ্র ঋণীদের শাস্তি দেওয়া হবে, তা হবে না। উল্টো পথে গেছে। তাই বিবেচনা করতে হবে ক্ষুদ্র ও মাঝারিদের।
তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন ফাঁকফোকরে দেশে থেকে প্রচুর অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। তা অবশ্যই বন্ধ কতে হবে। একই সঙ্গে বাইরের অর্থ ফেরাতে অ্যাকশনে যেতে হবে সরকারকে। সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ হিসাব চাওয়ার অধিকার জনগণের আছে। সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশেষজ্ঞরা সব সময় খারাপ কিছু বলে না। ভালো অনেক কিছু বলে থাকে। তা আমলে নিতে হবে। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। মানুষ হিসেবে মানুষকে পাত্তা দিতে হবে।’
জেডএ/