সয়াবিন তেলের দাম কমার কোনো প্রভাব নেই বাজারে
সয়াবিন তেলের বাজারে কোনোরকম নিয়ন্ত্রণ নেই সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের। এর ফলে ব্যবসায়ীরা যে যেভাবে পারছে সেভাবেই তেলের দাম নিচ্ছে। এ কারণে লিটারে ১৪ টাকা কমার পরও তেলের বাজারে অস্থিরতা কাটছে না।
পাঁচ দিন আগে তেলের দাম লিটার প্রতি ৫ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় সরকার ও মিলমালিকরা। কিন্তু বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) রাজধানীর খুচরা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, দাম কমানোর সিদ্ধান্ত কোথাও কার্যকর হয়নি। সিন্ডিকেটের কবজায় ভোক্তাদের বেশি দামেই তেল কিনতে হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা এখনো আগের দামেই রূপচাঁদা ৫ লিটার তেল ৯৩০ থেকে ৯৮০ টাকা, ২ লিটার ৩৮০ ও এক লিটার ১৯৫ টাকা বিক্রি করছে ভোক্তাদের কাছে। তবে পাইকারি বাজারে নতুন দামের তেল বৃহস্পতিবার থেকে বিক্রি করা হচ্ছে।
রাজধানীর ছোটখাটো দোকান থেকে শুরু করে বড় বড় বাজার ও পাইকারি বাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিক্রেতারা যে যার মতো দামে তেল বিক্রি করছেন। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, কৃষিমার্কেটে একই চিত্র পাওয়া গেছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি দামের অজুহাতে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (মিলমালিক) সয়াবিন তেলের দাম কয়েক দফা বাড়িয়েছে। এক লাফে প্রতি লিটারে ৩৮ টাকা বাড়ানো হয়েছে। বাধ্য হয়ে বিশ্ববাজারে কমলে গত রবিবার লিটারে ১৪ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় সরকার ও মিলমালিকরা।
সরেজমিনে গেলে কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের সোনালী ট্রেডার্সের আবুল কাশেম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে পাওয়া না গেলেও আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে পাইকারি পর্যায়ে কম দামের তেল বিক্রি করা হচ্ছে। ৫ লিটার তীর কোম্পানির তেল ৮৮০ টাকা, ২ লিটার ৩৬০, এক লিটার ১৮০ টাকা, খোলা তেল ১৬৫ টাকা ও পামওয়েল ১৩২ টাকা লিটার বিক্রি করা হচ্ছে।
তবে একই বাজারে তেলের খুচরা দামের ব্যাপারে ভিন্নতা দেখা গেছে। আঁখি এন্টারপ্রাইজের মালিক নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আগে বেশি দামে কেনা তেল লোকসান করে বিক্রি করতে হচ্ছে। ৫ লিটার রূপচাঁদা ৯৮০ টাকায় কেনা, তা ৯৬০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। একই বাজারের মেসার্স মীম জেনারেল স্টোরের আব্দুল মালেকও জানান, এখনো নতুন রেটের তেল আসেনি, আমরা পাইনি।
কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মেসার্স ইউসুফ জেনারেল স্টারের ইউসুফও জানান, ‘আগের মাল পাঁচ লিটার ৯৫০ টাকা, ২ লিটার ৩৯০ টাকা ও এক লিটার ১৯৫ টাকা শেষ হয়েছে। আজ থেকে কম রেটের ৫ লিটার ৮৯০, ২ লিটার ৩৬০ ও এক লিটার ১৮৫ টাকা লিটার বিক্রি করছি।’
এদিকে কৃষিমার্কেটের সিটি এন্টারপ্রাইজের আবু তাহের ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, কয়েক দিন থেকে কম রেটের তেল পাইনি। তবে আজ বসুন্ধরা ও পুষ্টি কোম্পানির লোকেরা নতুন রেটের তেল দিয়েছে। তাই আমরাও সামান্য লাভ করে ৫ লিটার ৮৭৫ টাকা বিক্রি করছি। তবে ২ লিটার ও এক লিটার তেল এখনো পায়নি। তাই বিক্রিও করতে পারছি না।’
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ এডিবল অয়েল (রূপচাঁদা তেল) এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইমাম আহমেদ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘দেখেন কম দাম সরবরাহের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আগের রেটের তেল স্টক আউট হতে একটু সময় লাগছে। তাই হয়তো খুচরা বিক্রেতাদের কাছে থেকে গেছে। বৃহস্পতিবার থেকে নতুন রেটের তেল সরবরাহ শুরু করা হয়েছে। এখন থেকে সব জায়গায় কম রেটের তেল পাওয়া যাবে।’
অথচ কম দামের ব্যাপারে জানতে চাইলে গত সোমবারই সিটিগ্রুপের পরিচালক (তীর ব্রান্ড তেল) বিশ্বজিত সাহা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘বিশ্ব বাজারের সঙ্গে মিল রেখে দেশেও সয়াবিন তেলের দাম কমানো হয়েছে এবার। রবিবার সরকারের সঙ্গে বৈঠক করে সোমবার (১৯ জুলাই) থেকে লিটারে ১৪ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। মিলগেটে তা কার্যকর হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাত ও ডলারের ঊর্ধ্বগতির কারণ দেখিয়ে সয়াবিন তেলের মিলমালিকরা সরকারের কাছে তেলের দাম বাড়ানোর জন্য আবেদন করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার গত ৫ মে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৩৮ টাকা বৃদ্ধি করে। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অনেক কমতে শুরু করলে আড়াই মাস পর গত রবিবার প্রতি লিটারে ১৪ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় মিলমালিক ও সরকার যৌথ সভা করে। যা সোমবার (১৮ জুলাই) থেকে কার্যকর বলে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানিয়েছিলেন। তারপরও বাজারে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে না।
এনএইচবি/এসজি/