খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগে আদায় বাড়বে: বিএবি
বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলার জারি করে গত সোমবার খেলাপি ঋণ চতুর্থবার পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠনের ক্ষমতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে দিয়েছে। এতে ঋণের ভালোমন্দের দিকও ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদকেই দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তদারকি করবে, অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) বলেছে, এতে ঋণ আদায়ে জটিলতা কমবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বিএবির বৈঠকের পর বুধবার (২০ জুলাই) গণমাধ্যমকর্মীদের এ কথা বলেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্ত সবার জন্য মঙ্গল হবে। নতুন গভর্নর ঋণ পুনঃতফসিলের ভার ব্যাংকের ওপর দিয়েছেন। এটা যুগোপযোগী, বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত। এটা ব্যাংকের হাতে দিয়ে দেয়ার ফলে ব্যাংকের কর্ম ও রিকভারি অনেক বেড়ে যাবে। এখন যার যার যে ব্যাংক সে কন্ট্রোল করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দিকে আর তাকিয়ে থাকতে হবে না। ব্যাংক নিজেই ঋণ পুনঃতফসিল করবে।’
উল্লেখ্য, সোমবার (১৮ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নির্দেশনা জারি করে। ওই নির্দেশনা মতে, এখন থেকে খেলাপি ঋণে কী সুবিধা দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করতে পারবে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ। ব্যাংক মালিকরাই এখন ঋণখেলাপিদের কী সুবিধা দেওয়া যাবে তা ঠিক করে দেবেন। এতদিন বিশেষ সুবিধায় ঋণ নিয়মিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগতো। সেই ক্ষমতা এখন থেকে পুরোটাই ব্যাংকগুলোর হাতে থাকছে।
নতুন ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে এখন থেকে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে আড়াই থেকে সাড়ে চার শতাংশ অর্থ জমা দিলেই হবে। এর আগে নিয়মিত করতে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ অর্থ জমা দিতে হতো। আগে এ ধরনের ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ দুই বছর সময় পেলেও এখন পরিশোধ করা যাবে ৫ থেকে ৮ বছরে। ৫০ কোটি থেকে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ স্থিতিকারিরা এই সুবিধা পাবেন।
এ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর মঙ্গলবার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘ব্যাংকগুলো তার গ্রাহক সম্পর্কে ভালো জানে। তারা বুঝতে পারবে কোন গ্রাহক ঋণ নিয়মিত পরিশোধ করছে। কাদের আবার ঋণসুবিধা দেয়া হবে। খেলাপি ঋণের ওপর দেশের ব্যাংকিং খাতের অনেক কিছু নির্ভর করে। খেলাপি ঋণ বেশি থাকলে দাতা সংস্থা তা ভালোভাবে নেয় না। করোনা এবং বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলে নতুন নীতিমালা দেয়া হয়েছে। এরফলে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা নিয়মিত টাকা ফেরত দেবেন। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণ কমে আসবে।’
বৈঠক শেষে বিএবির চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই সার্কুলারের ফলে ব্যাংকের জবাবদিহি বাড়বে। যারা অমান্য করবে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এটাকেও আমরা স্বাগত জানাই।’ ব্যাংকাররা শাস্তির বিষয় মেনে নেবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কেন মেনে নেবে না? আমরা মেনে নিয়েছি, ব্যাংকাররাও মেনে নেবে। কোনো ব্যাংক অন্যায়-অপরাধ করলে শাস্তির আওতায় আসা উচিত। সে ক্ষেত্রে এ সার্কুলার একটা ল্যান্ডমার্ক। ‘বাংলাদেশ ব্যাংকে একজন নতুন গভর্নর এসেছেন। তাকে শুভেচ্ছা জানাতে আমরা এসেছি। কোনো দাবিদাওয়া বা অন্য কোনো সংকট সমাধান বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
এ সময় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ঋণ পুনঃতফসিলের যে ফাইল আগে আসত, সেগুলো এখন আর বাংলাদেশ ব্যাংকে আসবে না। ফাইল এলে সিদ্ধান্ত দিতে অনেক সময় লাগত। ব্যাংক নিজেরা সেটা করতে পারবে-এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে বিএবি।’
তবে ব্যাংকে আমানত ও ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৬-৯ শতাংশ বেঁধে দিয়ে যে আদেশ দেয়া হয়েছিল, সেটি পর্যালোচনার অনুরোধ ব্যাংকারদের পক্ষ থেকে এসেছে। তারা বলেছেন, শিল্প, উৎপাদনশীল খাত ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট খাতের ঋণে ৯ শতাংশ সুদ ঠিকই আছে। তবে বিলাসজাত পণ্যে ভোক্তা ঋণের ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ সুদের সীমা বাড়ানো যায় কি না, সেটি বিবেচনা করতে অনুরোধ করেছে বিএবি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেটি পর্যালোচনা করবে।
জেডএ/