পেঁয়াজে স্বস্তি, মসলার বাজার স্থিতিশীল
কোরবানির ঈদে পেঁয়াজসহ অন্যান্য মসলার চাহিদা অনেক বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়ে যায়। তবে এবার ঈদের মাত্র দুই দিন বাকি থাকলেও শেষ সময়ে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে বাজারে।
ব্যাপক চাহিদা বাড়লেও পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা কমে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে রসুন, আদা, দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গসহ অন্যান্য মসলার দামও বাড়েনি। দেশে বেশি করে সরবরাহ থাকায় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমতে থাকায় এবার ঈদে মসলার বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। সয়াবিন তেলও লিটার ১৯৯ টাকা ও ৫ লিটার ৯৮০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, কৃষিমার্কেটসহ বিভিন্ন বাজার সরেজমিনে ঘুরে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে। সরকারি সংস্থা টিসিবিও বলছে বিভিন্ন মসলার দাম তেমন বাড়েনি। বরং কিছু কিছু মসলার দাম কমেছে সপ্তাহের ব্যবধানে।
কারওয়ান বাজারের মাতৃভান্ডারের মালিক সজিব ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, কয়েক দিন আগে বেশি দাম ছিলো পেঁয়াজের দাম। ঈদে যাতে এর দাম বাড়তে না পারে সে জন্য সরকার প্রচুর পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ দিয়েছে। এ জন্য দেশে অনেক পেঁয়াজ এসেছে। শ্যামবাজারে ভারতের পেঁয়াজে ভরে গেছে। সেই পেঁয়াজ কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে পৌঁছে গেছে। এ ছাড়া দেশের পর্যান্ত পেঁয়াজও রয়েছে। এ জন্য বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি। কমছে দাম। ফরিদপুরের পেঁয়াজের কেজি ৪০ ও রাজশাহীর পেঁয়াজ ৪২ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ সরবরাহ ও ভারত থেকে আমদানি বাড়তে থাকায় কমছে পেঁয়াজের দাম।
একটু দুরে সেই পেঁয়াজের পাল্লা ২২০ টাকা ও এক কেজি নিলে ৪৫ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান। জসিম নামে এক খুচরা বিক্রেতা জানান, পাল্লা ২২০ টাকা ও কেজি নিলে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে পেঁয়াজ। আর আদা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা থেকে ১২০ টাকা কেজি ও রসুন ৬০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি। যা আগের সপ্তাহেও একই দাম ছিল। শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ থেকে ৩৯০ টাকা কেজি।
শুধু এই বাজারে নয় টাউনহল, কৃষিমার্কেটসহ অন্যান্য বাজারেও কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা জানান, অন্য বছরে ঈদের আগে দেশে পেঁয়াজের দাম দেশি হলেও এবার কম। কিছুটা স্বস্থিদায়ক বলা যায়।
কৃষিমার্কেটের সিটি এন্টারপ্রাইজের আবু তাহের বলেন, ‘ কোনো মসলার দাম বাড়েনি। আগের দামেই সয়াবিন ২ লিটার ৩৯৫ টাকা, ৫ লিটার ৯৭০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।’
এদিকে কোরবানির ঈদের আগে গোলমরিচ, লবঙ্গ, আদা, রসুনসহ বিভিন্ন মসলার দামও কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের ইয়াসিন জেনারেল স্টোরের মনোয়ার হোসেন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘কোনো মসলার দাম বাড়েনি। আগের দামেই বিক্রি করা হচ্ছে। জিরা ৪১০ টাকা, ধনিয়া ১৪০, দারুচিনি ৪৮০, অ্যালাচ ১৮০০, লবঙ্গ ১১০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া সয়াবিন তেল ২লিটার ৩৯৫ টাকা, ৫ লিটার ৯৭০ টাকা , খোলা তেল ১৮০ ও পামওয়েল লিটার ১৭০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।
একই বাজারের আলী স্টোরের মো. আলীও ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, ‘যা বাড়ার আগেই বেড়েছে। ঈদকে সামনে রেখে এ মুহূর্তে মসলার দাম বাড়েনি। আগের দামেই বিভিন্ন মসলা বিক্রি করা হচ্ছে। লবঙ্গর কেজি ১২০০, গোলমরিচ ৭০০, এলাচ ১৮০০, জিরা ৪৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।’
মেসার্স রতন স্টোরের ওমর ফারুক জানান, দারুচিনি ৪৪০ টাকা কেজি, লবঙ্গ ১২০০ থেকে ১৩০০ কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। ৫ লিটার তেল ৯৭০ টাকা, ২ লিটার ৩৯৫ টাকা ও ১ লিটার ১৯৯ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।
এ ছাড়া খোলা চিনির কেজি ৮৫ ও দেশি প্যাকেট চিনি ১১০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। আর পোলাওয়ের খোলা চাল ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি এবং মোজাম্মেল ও এরফানের মোড়কজাত চাল ১২৫ টাকা, খানের ১৩৫ ও প্রাণ এর চিনিগুড়া চাল ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
তেল, চালের বাজারে অরাজকতা সৃষ্টি হলে এবার মসলার বাজার ঠিক রাখার প্রতিশ্রুতি দেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় ঈদে যাতে এবার মসলার বাজার গরম না হয়।
সংগঠনের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন মসলা ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, সবাই জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। আপনারা কি করবেন? তখন মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘আমরা কথা দিচ্ছি এবার বাড়ানো হবে না মসলার দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখা হবে। সেই ধারা তারা অব্যাহত রেখেছেন বলে মসলা ব্যবসায়ীরা জানান।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) প্রতিদিন বাজার যাচাই করে বাজারের তথ্য প্রকাশ করে। সেই তথ্যই বলছে, এক মাসের ব্যবধানে বাড়েনি মসলার দাম। এক মাস আগের ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজির জিরা বৃহস্পতিবার ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি, ২০০০ টাকা কেজির এলাচ ১৮০০ টাকা, ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার দারুচিনি ৪০০ থেকে ৪৬০ টাকা ও ১১০০ থেকে ১২০০ টাকার লবঙ্গ ৯৫০ টাকা কেজি। তবে ধনের দাম ১০ টাকা বেড়ে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
জেডএ/এমএমএ/