প্রাণের পথে সবাই, পোলাওয়ের চালের কেজি ১৫০ টাকা!
চালের বাজারে রীতিমত নৈরাজ্য চলছে। বিশেষ করে পোলাওয়ের চালের বাজারে এই নৈরাজ্য সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে। ঈদকে সামনে রেখে পোলাওয়ের চাল বাজারজাতকারী বিভিন্ন কোম্পানি মোড়কজাত করে চালের দাম কেজিতে কমপক্ষে ৩০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে।
যদিও ঢাকাপ্রকাশ-এ রিপোর্ট প্রকাশের পর বুধবার বিভিন্ন বাজার ও মার্কটে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। কিন্তু তাতে খুব একটা ফল আসেনি।
বুধবার (৬ জুলাই) রাজধানীর একাধিক ডিপার্মেন্টাল স্টোর, সুপার শপ ও বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনিগুড়া পোলাওয়ের চাল বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা দরে। আর একই চাল মোড়কজাত করে প্রাণ, এরফান, রূপচাঁদা, এসিআই, আকিজ গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বিক্রি করছে ১৫০ টাকা কেজি দরে। সাধারণ ক্রেতাদের রীতিমত গলাকাটা। অথচ মোড়কজাত এই চাল প্রতি কেজি তিন-চার দিন আগেও বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা দরে।
এমনিতেই চালের বাজার অস্থির। বোরোর ভরা মওসুমে মোটা চাল থেকে শুরু করে মিনিকেট, নাজিরশাইলসহ সব ধরনের চালের দাম চড়া। সরকার চালের বাজারকে স্থিতিশীল করতে ইতিমধ্যে চালের আমদানির উপর শুল্ক কমিয়ে দিয়েছে।
চালের বাজারকে যখন স্থিতিশীল করার চেষ্টায় সরকার, তখন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বড় বড় কোম্পানিগুলো পোলাওয়ের চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে অস্বাভাবিকভাবে। তারা যুক্তি দেখাচ্ছে পোলাওয়ের নতুন ধান বেশি দামে কেনার কারণে চালের দাম বাড়াতে হয়েছে।
কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো যুক্তিতেই পোলাও এর চালের দাম বাড়তে পারে না। কারণ পোলাওয়ের চালের ধান চাষ হয় শীত মওসুমে অর্থাৎ আমন মওসুমে। এই মওসুম শেষ হয়েছে নভেম্বর-ডিসেম্বরে। এই বর্ষা শেষ হলেই আবার আমন মওসুমের ধানের চারা রোপণ করা হবে।
মৌলভীবাজারের মধুপুর গ্রামের কৃষক খোয়াজ মিয়া বলছেন, এখন পোলাওয়ের ধান কোথাও পাওয়া যাবে না। এমনকি বাণিজ্যিকভাবে পোলাওয়ের যে ধান উৎপাদন হয় সেটিও এখন পাওয়া যাবে না। কারণ এখন সেটার মওসুম নয়। এটি অনেক আগে শেষ হয়ে গেছে। আমন মওসুমে এই ধান চাষ হয়।
অথচ প্রাণ গ্রুপের পরিচালক কামাল কামরুজ্জামান মঙ্গলবার (৫ জুলাই) রাতে ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ধানের দাম বেশি হওয়ায় তারা চালের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন।
তিনি নিজেও বলছেন যে, এই দাম অস্বাভাবিক। তারপরও তাদেরকে বেশি দামে ধান কেনার কারণে চালের দাম বাড়াতে হচ্ছে।
কামাল বলেন, আপানারা ধানের বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখেন এখন পোলাওয়ের ধান বিক্রি হচ্ছে কি না।
তার এই বক্তব্য জানার পর উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষকের হাতে এখন পোলাওয়ের কোনো ধান নেই। বগুড়ার ধুনট উপজেলার বিশ্ব হরিগাছা গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা আমন মওসুমেই পোলাওয়ের চালের ধান বিক্রি করে দেই।
বিভিন্ন কোম্পানির হয়ে এক শ্রেণির ফড়িয়া এই ধান কিনে নেন। কৃষকের কাছে এই মুহূর্ত বাজারে বিক্রি করার মত পোলাওয়ের কোনো ধান নেই। তিনি বলেন, ফড়িয়ারা মজুদ করে এখন সেটি অতিরিক্ত লাভসহ বিক্রি করছে।
এদিকে ক্রেতারা বলছেন, ঈদকে সামনে রেখে কেজিতে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ টাকা দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা লুটে নিচ্ছে বড় বড় কোম্পানিগুলো। যারা মোড়কজাত করে পোলাওয়ের চাল বিক্রি করছেন।
বুধবার ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে খোলা পোলাওয়ের চাল (চিনিগুড়া) কিনেছেন গৃহিনী মাহফুজা খান। তিনি বলেন, চাল কিনতে ঢুকে জিজ্ঞেস করলাম চিনিগুড়ার কেজি কত? সেলসম্যান জানালেন, ১১৫ টাকা। পাঁচ কেজি চাল ওজন করে দিতে দিতেই সেই চালের গায়ে লেভেল লাগানো হল ১২০ টাকা। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করতেই সেলসম্যান বললেন, ম্যাডাম আপনার কাছ থেকে ১১৫ টাকা করেই রাখব।
একই ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে বিভিন্ন কোম্পানির মোড়কজাত পোলাওয়ের চাল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি দরে।
বাজারে পোলাওয়ের চাল বাড়তি দামে বিক্রির বিষয়ে মঙ্গলবার ঢাকাপ্রকাশ-এ রিপোর্ট প্রকাশের পর বুধবার নগরীর মোহম্মাদপুর ও ধানমন্ডি এলাকায় বিভিন্ন সুপার শপ ও মার্কটে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, আমরা বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়ে বাড়তি মূল্যের সত্যতা পেয়েছি। বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানাও করা হয়েছে।
এনএইচবি/এমএমএ/