আমদানির অনুমোদন না পাওয়ায় ভারত থেকে আসছে না পেঁয়াজ
চট্টগ্রামে আবারও বাড়ছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। ভোজ্যতেলের সঙ্গে ক্রেতাদের মধ্যে নতুন উদ্বেগ হিসেবে দেখা দিয়েছে পেঁয়াজের ঊর্ধ্বমুখী দাম। পাইকারি ও খুচরা উভয় ক্ষেত্রেই দাম বাড়ছে।
এক সপ্তাহ আগেও চট্টগ্রামে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০ টাকা থেকে ৩২ টাকা। বৃহস্পতিবার (১২ মে) সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৮ টাকা থেকে ৫০ টাকা। কেজিতে ১৫ থেকে ১৮ টাকা দাম বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের কারণে দেশের সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। ক্রেতাদের আশঙ্কা আবারও পেঁয়াজের দাম সেঞ্চুরি ছাড়াবে। অনেকে মনে করছেন, সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণেই দাম বাড়ছে। ভারতে রপ্তানি বন্ধ হলেও খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের মজুত যথেষ্ট আছে। এখনই দাম বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন ছিল না।
এ ব্যাপারে খাতুনগঞ্জ হামিদুল্লাহ মার্কেটের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদ মো. ইদরিস বৃহস্পতিবার ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের কারণে দেশের পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ছে। এখন খাতুনগঞ্জে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ নিয়ে কোনো ট্রাক ঢুকছে না। ঈদের আগে যেসব পেঁয়াজভর্তি ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে কেবল সেসব পেঁয়াজের সরবরাহ পাচ্ছি। এখন দৈনিক ৫ থেকে ৬ পেঁয়াজভর্তি ট্রাক ঢুকছে খাতুনগঞ্জে। এসব পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেলে দাম আরও বাড়বে।
পাইকারিতে কত বেড়েছে এ প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রতি কেজি ৩৮ টাকা থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে তা আরও বেশি। এখনই দাম কমবে বলে আমি মনে করি না। তবে ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু হলে দাম কমতে পারে।
নাম প্রকাশ করার শর্তে খাতুনগঞ্জের এক আড়তদার জানান, আগে আমদানি করা পেঁয়াজের মজুত এখনো শেষ হয়নি। পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য হলেও মজুদ করা পেঁয়াজ দিয়ে ১৫ দিন চলবে। দাম হয়তো দুয়েক টাকা বাড়তে পারে। একেবারে কেজিপ্রতি দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা বৃদ্ধির মতো অবস্থা এখনো হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাতুনগঞ্জে বস্তা প্রতি পেঁয়াজের দামও বেড়েছে। প্রতি বস্তায় বেড়েছে ৩০০ টাকা। ঈদের আগে ৩০ থেকে ৩২ টাকায় বিক্রি করা ভারতীয় পেঁয়াজ এখন ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি দেশি পেঁয়াজের দামও বেড়েছে। আগে দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ২৭ থেকে ২৮ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ৪০ টাকার কাছাকাছি।
বুধবার (১১ মে) ও বৃহস্পতিবার (১২ মে) নগরীর চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকারি পর্যায়ে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়। ঈদের আগে সেই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকায়।
বর্তমানে দেশে বছরজুড়েই কোনো না কোনো জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়। আর আমদানি করা হয় বাকি চার লাখ টন। মূলত এ আমদানি করা চার লাখ টন পেঁয়াজ বাজারের ওপর খুব বড় প্রভাব ফেলে। পেঁয়াজের উৎপাদন স্থানীয় পর্যায়ে বাড়ানো গেলে দামের উপর কখনো প্রভাব পড়বে না। সিন্ডিকেটও কারসাজি করার সুযোগ পাবে না।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির কর্মকর্তারা জানান, রমজান শুরুর আগে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সরকার রমজানে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সময় বাড়িয়ে ৫ মে পর্যন্ত নির্ধারণ করে। ৫ মের পর থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। আমদানি শুরু হলে আবার দাম কমতে শুরু করবে।
এ ব্যাপারে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, পেঁয়াজের দাম এখনই বাড়ানোর মতো পরিস্থিতি হয়নি। আমদানি করা পেঁয়াজ যথেষ্ট মজুত আছে। ব্যবসায়ীরা একেক অজুহাতে ভোক্তাদের পকেট কাটছেন। তেলের দামে দেশের ইতিহাসে রেকর্ড করেছে। একই ভাবে বেড়েছে ডাল-চিনির দামও। তবে এবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পেঁয়াজের দাম। ব্যবসায়ীদের দোকান গুদামে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ থাকার পরেও তারা একদিনে পেঁয়াজের দাম ১০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন।
নগরীর বহদ্দারহাট কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী ওমর ফারুক জানান, পাইকারদের কাছ থেকে আমরা পেঁয়াজ কিনে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করে থাকি। আমাদের দোকানে বেশিদিন পেঁয়াজ মজুত রাখার সুযোগ নেই। পাইকাররা কেজিপ্রতি দাম বেশি নিলে আমরাও ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি দামে বিক্রি করি। মূলত আমাদের পেঁয়াজসহ ভোগ্যপণ্যের দাম ওঠানামা করে খাতুনগঞ্জ থেকে কেনা পাইকারদের দামের উপর।
তবে ক্রেতাদের বড় অংশের অভিযোগ পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি ঠেকাতে প্রশাসন কিছুই করছে না। এজন্য মজুতদাররা কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই দাম বাড়াচ্ছে। প্রশাসনের কঠোর নজরদারি থাকলে অন্তত এখনই পেঁয়াজের দামে লাগাম টেনে ধরা যেত।
নগরীর হামজারবাগ এলাকার বাসিন্দা আবু তৈয়ব আশরাফি বলেন, সয়াবিন তেল নিয়ে নানা কারসাজি হচ্ছে। প্রতিদিন জব্দ হচ্ছে মজুত করা বোতলজাত তেল। এ সময় পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। কিন্তু প্রশাসনের কোনো তদারকি কিংবা অভিযান নেই।
তবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, ভোজ্যতেলের মতো পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি নজরদারি করা হচ্ছে। প্রয়োজনে মজুতদারদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এসএন