কৃষক, হতদরিদ্রের অ্যাকাউন্টে ৩ হাজার কোটি টাকা
বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট) খুলতে লাগে কমপক্ষে এক হাজার টাকা। কিন্তু মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে কৃষকরা খুলতে পারেন ব্যাংক হিসাব। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধাভোগীরা এবং হতদরিদ্ররা ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ পান। এভাবে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব খুলেছে দুই কোটি ৪৯ লাখ কৃষক। তিন মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আর বছরের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ১১ শতাংশ।
এসব হিসাবে তারা (ডিপোজিট) সঞ্চয় জমা করেছেন প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। করোনকালেও অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে তাদের সঞ্চয় বেড়েছে ১৫ শতাংশ। আর এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ২৬ শতাংশ। শুধু তাই নয়, তারা এসব হিসাবে ৫০০ কোটি টাকার বেশি রেমিটেন্সও গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘সরকার বিভিন্নভাবে কৃষকদের সুবিধা দিচ্ছে। একই সঙ্গে নিম্ন আয়ের মানুষদেরও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সুবিধা দিচ্ছে। এসব সুবিধা দিতে সরকার ব্যাংকগুলোকেও নির্দেশ দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও সব ব্যাংককে তা কার্যকর করতে সার্কুলার জারি করে তা পালন করতে বলেছে। এতে কৃষক ও হত দরিদ্ররা সুবিধা পাচ্ছে। এ জন্য ব্যাংক হিসাবের পরিমান বাড়ছে। আর এসব হিসাবে সরকারি সুবিধা কাজে লাগাচ্ছে তারা। সুবিধা নিয়ে ব্যাংকে টাকাও জমা রাখছে। এ জন্য সঞ্চয় বাড়ছে। তাদের এই হিসাবে কাছের মানুষ রেমিটেন্সও পাঠাচ্ছে। এটা একটা ইতিবাচক দিক। ভবিষ্যতে আরও বাড়বে’।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ বাংকের নির্দেশে ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন ব্যাংক কৃষক, সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধাভোগি ও হত দরিদ্রদের এই হিসাব খোলার সুযোগ দিচ্ছে। এসব হিসাবের বিপরীতে তারা সরকারের সুবিধা গ্রহণও করছেন।
১০ টাকার হিসাবধারীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে কৃষক। তাদের এ পর্যন্ত হিসাব খোলা হয়েছে প্রায় ৯৯ লাখ বা ৪০ শতাংশ। সামাজিক নিরাপত্তা ভোগিরা খুলেছেন প্রায় ৩৭ শতাংশ। বছরের ব্যবধানে এই হিসাব বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। করোনাকালেও ব্ছরের ব্যবধানে অর্থাৎ এই সময়ে তাদের সঞ্চয় বেড়েছে ১৭ শতাংশের বেশি। আর হত দরিদ্রদের হিসাব খোলা হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ বা মোট হিসাবের ১৩ শতাংশ। আর এক বছরে তাদের হিসাব বেড়েছে ২৯ শতাংশ।
করোনকালেও তাদের হিসাবের পরিমান ও সঞ্চয় বেড়েছে। শুধু তাই নয়, এসব হিসেবে ১০ টাকার হিসাবধারীরা বিদেশে থেকে ৫১৪ কোটি টাকা রেমিটেন্সও গ্রহণ করেছেন। মোট হিসাবের মধ্যে দেশে তফসিলি ৬১ ব্যাংকের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫টি ব্যাংকে হিসাব খোলা হয়েছে প্রায় ৮২ শতাংশ। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি সোনালী ব্যাংকে হিসাব খোলা হয়েছে ২৬ শতাংশ। এরপর অগ্রণী ব্যাংকে ১৫ ও জনতা ব্যাংকে ১১ শতাংশ হিসাব খোলা হয়েছে।
এই হিসাবধারীরা বিভিন্ন ব্যাংকে ২ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা সঞ্চয় জমা করেছে ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরমধ্যে সরকারি ৫টি ব্যাংকে তারা জমা করেছেন এক হাজার ৮৭০ কোটি টাকা বা ৬৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক নিম্ন আয়ের ১০ টাকার এই হিসাবধারীদের জন্য ২০০ কোটি টাকার পুন:অর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে। তাদের মধ্যে ৮৫ হাজার ১২৩ জন ঋণীকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০৩ কোটি টাকা ঋণও দিয়েছে।
জেডএ/