‘ভোক্তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি অধিদপ্তর’
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও ভোক্তা অধিকার বিরোধী কাজ প্রতিরোধে ২০০৯ সালের ৬ এপ্রিল আইন তৈরি করেছে সরকার। এক যুগ পেরিয়ে গেলেও এই আইনের সুফল খুব কমই পেয়েছে ভোক্তারা। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি এবং খাদ্যে ভেজাল ঠেকাতে যায়নি। এছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যেও ভোক্তা অধিকার আইন নিয়ে সচেতন খুবই কম।
এক যুগ পর আইনটির কার্যকরিতা, ভোক্তাদের স্বার্থ, আইনে কোনো সীমাবন্ধতা আছে কি না- এর বিভিন্ন দিক নিয়ে ঢাকাপ্রকাশের সঙ্গে কথা বলেছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকাপ্রকাশের সিনিয়র রিপোর্টার জাহাঙ্গীর আলম।
ঢাকাপ্রকাশ: ভোক্তা অধিকার আইন সম্পর্কে সাধারণ মানুষ কি অবগত?
গোলাম রহমান: সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়ছে। তবে সব মানুষ যে জানে তা কিন্তু নয়। এজন্য ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরকে আরও বেশি বেশি করে প্রচার করতে হবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমকেও প্রচারের ভুমিকা পালন করতে হবে।
ঢাকাপ্রকাশ: দেশে ভোক্তা অধিকার আইন কতোটুকু কার্যকর?
গোলাম রহমান: জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কাজ করছে, তারা ভোক্তাদের স্বার্থ দেখেছে বলেই ভোক্তারা প্রতিকার পাচ্ছেন। আস্থার সঞ্চার হয়েছে। তবে ভোক্তাদের প্রত্যাশিত আশা পূরণ করতে পারেনি এ ভোক্তা অধিদপ্তর।
ঢাকাপ্রকাশ: সাম্প্রতিক সময়ে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে। এভাবে পণ্যের দাম বাড়ানোর সুযোগ কি দেয় ভোক্তা অধিকার আইন?
গোলাম রহমান: সম্প্রতি সময়ে নানা কারণে পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে বিশ্ববাজারে অনেক বেশি পণ্যের দাম বৃদ্ধি, ডলারের অবমূল্যায়ন ও ট্যাক্স ভ্যাটের কারণে বেড়েছে আমদানিকৃত পণ্যের দাম। সঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজিও থাকতে পারে। অপরদিকে সাধারণ মানুষের আয় কমে যাওয়ায় নাভিশ্বাস দেখা দিয়েছে। ভোক্তা অধিকার আইনে পণ্যের মূল্য নির্ধারণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনো ব্যবসায়ী বেআইনীভাবে ও অনৈতিকভাবে দাম নিলে শাস্তির বিধান করা হয়েছে। ভোক্তারা প্রতারিত হলে প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে পারবে। আইনে সেই সুযোগ করা হয়েছে।
ঢাকাপ্রকাশ: সম্প্রতি সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। ভোক্তা আইন অনুসারে এটা কি তিনি পারেন?
গোলাম রহমান: আইনের ভিত্তিতেই বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেব-নিকেশ করে দাম নির্ধারণ করেছেন। ইচ্ছামতো মন্ত্রী দাম বাড়াতে পারেন না। কারণ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় ট্যারিফ কমিশন বিভিন্ন সূচকের ভিত্তিতে সয়ারিন তেলসহ আমদানিকৃত পণ্যের দাম নির্ধারণ করে। বাণিজ্যমন্ত্রী সেই মূল্যের কথা বলে থাকেন।
ঢাকাপ্রকাশ: দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির দায় কি সরকারের না অধিদপ্তরের?
গোলাম রহমান: দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির দায় সরকারের নয়, আবার অধিদপ্তরেরও নয়। কারণ দ্রব্যমূল্যের দাম স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বৃদ্ধি পেলে কারো কিছু করার থাকে না। তবে যদি কেউ অবৈধ ও অনৈতিক পন্থায় পণ্যের মুল্য বৃদ্ধি করে থাকে তাদের আইনের আওতায় এনে শান্তির বিধান করা দরকার।
ঢাকাপ্রকাশ: ভোক্তা অধিকার আইনে কোনো ফাঁক ফোকর আছে কি?
গোলাম রহমান: সব আইনেই কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। ভোক্তা আইনও এর ব্যতিক্রম নয়। বাস্তবায়নে ঘাটতি দেখা দিলে তা সংশোধন, পরিবর্তন ও পরিমার্জন হয়। এটা ধর্মগ্রস্থ নয় যে পরিবর্তন করা যাবে না।
ঢাকাপ্রকাশ: ভোক্তা আইনটি কার্যকর করতে হলে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ?
গোলাম রহমান: এই আইনটি কার্যকর করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার। কারণ শুধু জেলায় জেলায় একজন লোক দিয়ে এটা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। অবকাঠামোগত সীমাবন্ধতা রয়েছে। এটা বাড়াতে হবে। ভোক্তাদেরও সচেতনতা বাড়াতে হবে। আবার ব্যবসায়ীদেরও সতর্ক থাকতে হবে। তবেই সম্ভব। কারণ এমনও শুনা গেছে, একই ব্যবসায়ীকে একাধিকবার জরিমানা করা হয়েছে। তারপরও ভোক্তাদের স্বার্থ বিরোধী কাজ করছে। এটা ভোক্তাবান্ধব দপ্তর। এর কার্যক্রম আরও বাড়াতে হবে।
জেডএ/