দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ভোক্তাদের হাঁসফাঁস
নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখা হচ্ছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বার্তা দেওয়া হলেও প্রতিটি জিনিসের দাম সম্প্রতি এত বেড়ে গেছে যে ভোক্তাদের আয়ে সংকুলান হচ্ছে না। অনেকেরই ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে। আবার অনেকে জিনিসপত্র কেনা কমিয়ে দিয়েছেন।
ক্রেতারা বলছেন, অনেক আগে থেকে করোনার প্রভাব তো আছে, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে লাগামহীন নিত্যপণ্যের দাম। এভাবে চলা যায় না। ভোক্তাদের হাঁসফাঁস অবস্থা। তারা সরকারের দিকে চেয়ে আছেন।
শরিবার (৫ মার্চ) সরেজমিনে বিভিন্ন বাজারে ভোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ব্যাপারে মোহাম্মদপুরের টাউনহল বাজারে ঢাকাপ্রকাশকে অবসরে যাওয়া চাকরিজীবী মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে সব জিনিসের দাম এত বেড়ে গেছে যে, চলতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। দেনা করে চলতে হচ্ছে। আগের মতো কোনো জিনিস বেশি করে কেনা তো দূরের কথা, খুব দরকার না হলে কোনো কিছু কিনছি না।’ তিনি দ্রব্যমূল্যের ব্যাপারে ক্ষোভ ও অসহায়ত্বও প্রকাশ করেন।
সানাউল্লাহ আরও বলেন,‘কী আর বলব? প্রায় দুইবছর ধরে চলছে করোনা আবার আয়ও বাড়েনি। কিন্তু সংসারে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া থেকে শুরু করে প্রতিদিন খাবারের যে খরচ তো থেমে নেই বরং বাড়ছে। এই যেমন ৫ লিটার তেলের দাম হয়ে গেছে ৮০০ টাকা, যা কয়েক মাস আগে ৬৫০ টাকা ছিল। আবার ৮৫ টাকার হুইল পাওডার হয়ে গেছে ১০০ টাকা।’
তিনি আরও বলেন, ‘এভাবে আগে কখনো জিনিসের দাম বাড়তে দেখিনি। সরকারের উচিত যেভাবেই হোক লাগাম টেনে ধরা।’
শুধু টাউনহলে নয়, রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে শুরু করে অন্যান্য বাজারেও ভোক্তরা বলছেন, এভাবে জীবন চলে না। সরকারের কিছু করা উচিত বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তানজিমুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘অল্প সময়ের ব্যবধানে সব জিনিসের দাম অনেক বেড়ে গেছে। যার প্রভাব সংসার জীবনে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। চলা যাচ্ছে না। সব কিছু কেনা কমিয়ে দিয়েছি।’
তানজিমুল আরও বলেন, ‘আগে কিনতাম তিনটি হ্যান্ডওয়াশ আর আজ কিনলাম একটি। আগে রিকশায় চলাফেরা করলেও বর্তমানে প্রায় জায়গায়ই পায়ে হেঁটে চলা শুরু করেছি। কারণ, নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় রিকশা ভাড়াও বেড়ে গেছে।’
শুধু চাকরিজীবী নয়, ব্যবসায়ীরাও হাঁসফাঁস করতে শুরু করেছেন। দ্রব্যমূল্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে টাউনহলের হাজী স্যানিটারীর মো. আকতারুজ্জামান বাবু ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘কী আর বলব ভাই। করোনার প্রভাবে দীর্ঘদিন দোকান বন্ধ ছিল। তারপর মাছ, মাংস, চাল, ডাল, তেল ও সাবান থেকে শুরু করে সব জিনিসের দামই বাড়ছে। কিন্তু আয়তো বাড়েনি বরং লোকসান গুনতে গুনতে ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে। দীর্ঘদিনের ব্যবসা, এভাবে দেনা করে চলা যায় না। যেকোনো সময় আমার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।’
এদিকে কারওয়ান বাজারে নিত্যপণ্যের বাড়তি দামের ব্যাপারে জানতে চাইলে সরকারি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছেই। সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। আগে বেশি করে মাছ, মাংসসহ অন্যান্য জিনিস পত্র বেশি করে কিনতাম। এখন তা কমিয়ে দিয়েছি। কারণ, আয়তো আর বাড়েনি। অন্যান্য খরচও তো আছে। এভাবে চলা যায় না। সরকারের কিছু করা উচিত।’
শুধু এই কয়েকটি বাজারের কয়েকজন ভোক্তা নয়, সারা দেশের প্রায় ভোক্তাদের একই দশা। কারণ,করোনাকালে সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া ব্যাংক, বীমা থেকে শুরু করে গার্মেন্টসসহ সব প্রতিষ্ঠানে চাকরিচ্যুত হয়েছে কয়েক লাখ লাখ মানুষ। অনেকে এখনো কর্মে ফিরতে পারেনি।
জেড/এমএমএ/