চা শ্রমিক নারীদের জন্য সিটি গ্রুপের সঙ্গে কাজ করবে ওয়াটার এইড
বাংলাদেশের ৩ কোটি ৭৯ লাখ মানুষ পরিস্কার পানি পাবার সার্বজনীন অধিকার লাভ করেন না। সুপেয় পানির অভাবে ভুগছেন তারা। পরিচ্ছন্ন পায়খানা ব্যবহার করতে পারেন না বা মানসম্পন্ন টয়লেট নেই মোট ৭৫ লাখ ৪০ হাজারের। প্রতি বছর গড়ে ১ হাজার শিশু দেশে খারাপ জল ও ভালো স্যানিটেশন ব্যবস্থার অভাবে ডায়রিয়া রোগে ভুগে মারা যাচ্ছে। এসব অত্যন্ত পিছিয়ে থাকা মানুষের জীবনমান বদলে দিতে কাজ করছে ‘ওয়াটার এইড বাংলাদেশ’, বিশ্বের প্রধান পানি নিয়ে কাজ করা বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার বাংলাদেশ অফিস।
আমাদের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক গ্রুপ ‘সিটি গ্রুপ’। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় চাল কলের মালিক ও ভোজ্য, পণ্যদ্রব্য খাতের অন্যতম কম্পানি। ঢাকার গেন্ডারিয়ায় আজগর আলী হাসপাতাল তাদের মালিকানাধীন। ‘জীবন’ নামের পরিশোধিত ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বোতলের পানি তারা পরিবেশন করেন। ‘তীর’ নামের তেল বিক্রি করেন। আরো ব্যবসা আছে এবারের করোনাভাইরাসের আক্রমণে ‘কভিড ১৯’ রোগের বিপক্ষে টিসিবিতে সরকারীভাবে কম দামে তেল বিক্রি করা শিল্প উদ্যোক্তা ফজলুর রহমানের ব্যবসায়িক গ্রুপটির।
দুটি প্রতিষ্ঠানের সমঝোতা স্বারক চুক্তিটি হয়েছে ৩ মার্চ, ২০২২। ফলে সিটি গ্রুপের মালিকাধীন চা বাগানগুলোতে নিরাপদ পানি, ভালো স্যানিটেশন ও হাইজেনিক ব্যবস্থার উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদের সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও উন্নয়ন কাজে পরামর্শ, কারিগরি সাহায্য প্রদান করবে ওয়াটার এইড।
তাদের দেশীয় প্রতিনিধি হাসিন জাহান বলেছেন, ‘চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে পানীয় ব্যবস্থায় আমরা উদ্ভাবনী কৌশলগুলো গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করব। টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা (এসডিজি-ছয়) ‘কাউকে পিছিয়ে রাখব না’র আওতায় চা শ্রমিকদের জীবনের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জনে সিটি গ্রুপের সঙ্গে এখন থেকে আমরা কাজ করব।”
ওয়াটার এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর জানিয়েছেন, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো বাংলাদেশের বৃহৎ শিল্প গ্রুপটির সঙ্গে তারা অর্ন্তভুক্তিমূলক পদ্ধতিতে নিজেদের ‘টেকসই ওয়াশ কর্মসূচি’ বাস্তবায়ন করবেন। সেই কাজে দীর্ঘমেয়াদের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে ও সেগুলো বাস্তবায়নে কাজ করা হবে, জানিয়েছে সিটি গ্রুপ।
ওয়াটার এইড বাংলাদেশ চা-বাগানের নারী শ্রমিক ও তাদের পরিবারগুলোর সার্বিক পরিচ্ছন্নতা ও পানীয় জল প্রাপ্তির চরম খারাপ পরিস্থিতির উন্নয়নে সুপেয়, নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহ করতে কাজ করবে। তাদের সবার স্যানিটেশনের টেকসই ডিজাইন তৈরিতে সহায়তা প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে।
চা-বাগানের ওয়াশ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বাগান মালিক সিটি গ্রুপের প্রতিনিধি, পাড়ার পঞ্চায়েত প্রধান, কর্মরত শ্রমিক, তাদের সবার জীবনমান উন্নয়নের জন্য ওয়াটার এইড দীর্ঘমেয়াদে কাজ করবে।
সিটি গ্রুপের কারিগরি ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের ওয়াটার এইড তার সহযোগী সংস্থাগুলোকে নিয়েও চা শ্রমিকদের সমন্বয়ে ‘চা-বাগান ওয়াশ পরিচালনা কমিটি’ গঠন করবে। তাদের সক্রিয় করতে প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা প্রদান করবে সিটি গ্রুপের সাহায্যে।
চা-শ্রমিক প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে, তাদের কমিটিগুলোর সদস্যদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা উন্নয়নে ‘ওয়াশ ম্যানুয়াল নির্দেশিকা’ তৈরি করা হবে। সেটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছেন হাসিন জাহান।
ঢাকার গুলশান-২’র প্রধান কাযালয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান নিজে উপস্থিত ছিলেন। তাকে পুরো বিষয়টি ওয়াটার এইডের বাংলাদেশ প্রতিনিধি হাসিন জাহান জানিয়েছেন।
‘সিটি গ্রুপ টি-এস্টেট অপারেশন’ মহাব্যবস্থাপক সাহ্জাদ সারওয়ার হাসিন জাহানের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন।
এরপর সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বলেছেন, ‘এই চক্তিতে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমরা যদি শ্রমিকদের উন্নত স্বাস্থ্য ও ভালোভাবে জীবনধারণ নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে তারা আরো দক্ষ হবেন। তাদের কর্মদক্ষতা আরো বাড়াতে হবে। ফলে আমাদের শিল্প গ্রুপ ওয়াটার এইডের যৌথ প্রয়াস চা বানানোর প্রাণ নারী শ্রমিকদের নিরাপদ পানি, ভালো স্যানিটেশন ও হাইজিন জীবন প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করবে। তাদের প্রাপ্য অধিকার ও চাহিদা প‚রণ করতে সাহায্য হবে।’
গ্রুপের উপদেষ্টা পবন চৌধুরী এবং ওয়াটার এইড বাংলাদেশের কর্মসূচী পরিচালক হোসেন ইশরাত আদিব, প্রকল্প পরিচালক ইমামুর রহমান, নীতিকৌশল উপদেষ্টা সফিকুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেসি বিভাগের স্পেশালিস্ট রঞ্জন ঘোষ উপস্থিত ছিলেন।
চুক্তির পর হাসিন জাহান বলেন, ‘পানীয় জলের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জনে বাংলাদেশের সিটি গ্রুপের মতো বেসরকারি খাতের বৃহৎ শিল্প কম্পানির বিশাল ভূমিকা রয়েছে। কেননা জনাব ফজলুর রহমানের প্রতিষ্ঠানটি মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির সঙ্গে, সঙ্গে তাদের জীবনমানের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও ইতিবাচক প্রভাব রাখেন।’
তিনি বলেছেন, ‘সিটি গ্রুপের সাথে যৌথভাবে আমরা যে কর্মসূচিগুলো গ্রহণ করেছি, তাতে প্রান্তিক ও অতি দরিদ্র, শিক্ষার আলো না পাওয়া বিদেশের চা শ্রমিকরা একেবারে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হিসেবে নিরাপদ পানি, ভালো স্যানিটেশন ও মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যবিধিতে আসবেন। তাদের সার্বিক জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে বলে সিটি গ্রুপের মতো ওয়াটার এইড অত্যন্ত আনন্দিত।’
তিনি বলেছেন, তাদের জন্য কাজ করতে এই ব্যবসায়িক গ্রুপের সহায়তা নিশ্চয়ই সম্ভাবনার নতুন মাত্রা তৈরি করবে।
ছবি : ফায়হাম ইবনে শরীফ।
ওএস।