রাশিয়ায় পোশাক রপ্তানি বন্ধ
রাশিয়া তৈরি পোশাকের বড় বাজার হলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তৈরি পোশাক শিল্প উদ্যোক্তারা রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছেন। তারা জানান, যুদ্ধের কারণে রপ্তানি করে মূল্য পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
বুধবার (২ মার্চ) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘আমরা যুদ্ধের বিপক্ষে। দুই দেশই আমাদের বন্ধু। তাই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের তাপ অবশ্যই আছে। তবে এর প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রাজনীতিতে পড়বে না।’
পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, ইউক্রেনে হামলার কারণে রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশ। এরই অংশ হিসেবে রাশিয়ার ব্যাংকগুলো থেকে সুইফট পেমেন্ট বন্ধের ব্যাপারেও আলোচনা চলছে। সুইফট বন্ধের আতঙ্কে ইতিমধ্যেই রাশিয়ার সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে দেশের পোশাক খাত।
কারণ, দেশের পোশাক রপ্তানিতে রাশিয়ার বাজার ক্রমেই বড় হচ্ছে। সে দেশে বছরে প্রায় এক বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারের পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে, গত অর্থবছরে রাশিয়ায় ৫৯৩.৫৫ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে শুধু নিটওয়্যার পণ্য ছিল ৩৭৩.২৫ মিলিয়ন ডলারের। বাকিগুলো ছিল ওভেন পণ্য। শুধু চলতি অর্থ বছরের জানুয়ারি মাসের মধ্যেই রাশিয়ায় রপ্তানি হয়েছে ৪১৫.৪৭ মিলিয়ন ডলারের পোশাক। যা গত বছরের তুলনায় ৩৬.৪৭ শতাংশ বেশি। রাশিয়ায় তৈরি পোশাক রপ্তানির বাজার খুব বড় না হলেও, কম না। কারণ, সেখানে নিটওয়্যারের প্রচুর এক্সপোর্ট আছে। সেই সঙ্গে নতুন করে এক্সপোর্ট শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের ব্যবসা চলছে। তারাও বলছে পেমেন্টের কোনো সমস্যা নেই। তারা স্থগিত করতে চাচ্ছে না। কিন্তু যুদ্ধের কারণে আমাদের ব্যবসায়ীরা রপ্তানি করতে চাচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকেই রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু আমার নয়, অন্য ব্যবসায়ীরাও রপ্তানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ, সুইফট বন্ধের কারণে চালান পাঠানো ও পেমেন্ট পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।’
এদিকে, বিজিএমইএ থেকে বলা হয়েছে সুইফট বন্ধের আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় রাশিয়ান ক্রেতাদের কাছ থেকে নতুন করে রপ্তানি অর্ডার যাতে না নেওয়া হয়। সুইফট বন্ধে হলে কোনোভাবেই পেমেন্ট করা যাবে না। সুইফটের মাধ্যমেই পেমেন্টগুলো কনফার্ম করা হয়।
রাশিয়াতে সরাসরি ৬৫০ মিলিয়ন ডলারের পোশাক যায় বাংলাদেশ থেকে। আর ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মাধ্যমে যায় আরও সাড়ে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের। সব মিলিয়ে প্রায় এক বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারের পোশাক যায় রাশিয়াতে। ইউক্রেনেও পোশাক যায়। তবে সেটা তুলনামূলক কম।
জেডএ/এমএমএ/