প্যাকেজিং কাগজের মূল্যবৃদ্ধি: শিল্প বাঁচাতে ব্যবসায়ীদের পাঁচ দাবি
প্যাকেজিং কাগজের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বাজেটে অযৌক্তিক ও একপেশে অপরিবর্তীত রাজস্বনীতির কারণে লোকাল প্যাকেজিং শিল্প বন্ধের প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেছে বাংলাদেশ লোকাল কার্টন ম্যানুফেকচারার্স এসোসিয়েশন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী মিলনায়তনে সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সংগঠনটির সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়। এসময় দাবি উত্থাপনসহ লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি এম. এ. বাশার পাটোয়ারী ও সহ-সভাপতি শাজাহান কামাল সাজু।
সম্মেলনে বলা হয়, একটি গণতান্ত্রিক দেশে আইন সবার জন্য সমান অথচ বিগত বাজেটে অসম রাজস্বনীতি ও বৈষম্যমূলক আইনের মাধ্যমে ছোটদেরকে আরও ছোট এবং বড়দেরকে আরও বড় করার সুযোগ করে দিয়েছে। পক্ষান্তরে পেপার মিলগুলোর স্বেচ্ছাচারীভাবে কাগজের মূল্য বৃদ্ধি করায় প্যাকেজিং মালিকদেরকে বিপুল লোকশানের সম্মুখিন করেছে।
তাই প্যাকেজিং শিল্প বাঁচাতে সরকারের সকলের প্রতি পাঁচটি দাবি তুলে ধরা হয়।
সেগুলো হলো-
১. আমরা ১৫ শতাংশ বা আদর্শ হারে ভ্যাট প্রদান করি, তাই আমাদের উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামালের উপর ভ্যাট ১৫ শতাংশ হওয়াই বাঞ্ছনীয়। কাঁচামাল ক্রয়ে যেহেতু আমরা নিট মূল্যের উপর ভ্যাট প্রদান করি, তাই প্যাকেজিং পেপারের ভ্যাট ৫ থেকে ৭.৫ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।
২. বাংলাদেশে উৎপাদিত প্যাকেজিং পেপার মূল্য আন্তর্জাতিক পেপার মূল্য হতে অনেক বেশি। যা আপনারা অনায়াসে যাচাই করতে পারেন। আদর্শ হার ব্যতীত ভ্যাটের ক্ষেত্রে ভিডিএস কর্তনের বিধান রাখা হয়েছে বর্তমান আইনে। ভ্যাট প্রদানকারী এবং আদায়কারী উভয় যদি ভিডিএস কর্তনকারী সত্তা হয় তবে এ আইন উভয় কর্তনকারীর ক্ষেত্রে রহিত করার দাবি জানাচ্ছি।
৩. ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ধারা ৫২ সংশোধন করে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রহিত করা হয়, যার ফলে আমাদের প্রতিষ্ঠানে সমুদয় নিট আয় হতে অনেক বেশি পরিমান টাকা উৎসে আয়কর হিসাবে কর্তন হয়ে যায়। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আমাদের নিট আয় ৪-৫ শতাংশের বেশি নয়। এক্ষেত্রে (২-৫ শতাংশ) উৎসে কর্তন আমাদের জন্য গ্রহনযোগ্য হয় না। যে সকল প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক/শিল্প আমদানী করে তারা ৫ শতাংশ অগ্রীম আয়কর প্রদান করে। তাই উৎসে আয়কর কর্তন তাদের জন্য ডাবল ট্যাক্সেশন হয়ে যায়। এই আদেশটি প্রিন্টিং ও প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে একটি নির্দেশনা প্রয়োজন। আমাদের প্রতিষ্ঠান সমূহের জন্য উৎসে আয়কার কর্তন বাতিল করার বিশেষ অনুরোধ করছি।
৪. প্রতি বছর অযৌক্তিকভাবে কাগজের মূল্যবৃদ্ধি করে অতি মুনাফা অর্জনের নিয়ম বন্ধ করার নীতি প্রনয়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
৫. প্যাকেজিং শিল্পের সকল সমস্যা মোকাবেলায় সরকারী রুগ্ন ও লোকসানী কাগজকল কর্ণফুলি পেপার মিলের মত প্রতিষ্ঠানগুলোকে আয় থেকে দায়শোধ প্রক্রিয়া 'বাংলাদেশ লোকাল কার্টন ম্যানুফেকচারার্স এসোসিয়েশন' কে হস্তান্তরের ব্যাবস্থা গ্রহন করলে সকল প্যাকেজিং শিল্প রক্ত চোষাদের হাত থেকে রক্ষা পাবে এবং বন্ডেড সুবিধা ভোগিদের আমদানি কমে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে একমাত্র লোকাল প্যাকেজিং শিল্প ১০০ শতাংশ ভ্যাট ও ট্যাক্স দিয়ে সরকারের রাজস্ব আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। আমাদের সমস্যাগুলি সমাধান করলে এই খাত থেকে আরো আধিক রাজস্ব আহরিত হবে।
অনুষ্ঠানে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মীর রায়হান আরিফ, সহ-সভাপতি সৈয়দ ফখরুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ রুহুল আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এমএ/কেএফ/