শিশুদের সাঁতার শিখাতে ২৭২ কোটি টাকার প্রকল্প
পানিতে ডুবে দেশে অনেক শিশু মারা যাচ্ছে। এই মৃত্যুহার কমাতে শিশুদের সাঁতার শেখাতে ২৭১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয় করার জন্য সরকার মঙ্গলবার অনুমোদন দিয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ১৬ জেলার ৪৫টি উপজেলায় পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের জন্য আট হাজার সমাজভিত্তিক শিশু যত্ন কেন্দ্র করা হবে। শিশদের সাঁতার শিখার এ প্রকল্পের আওতায় বিদেশে অভিজ্ঞা অর্জন, পরামর্শক ব্যয় ও গবেষণা খাতেই ১০ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ শিশু একাডেমি।
পরিকল্পনা কমিশন ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর দেশে বিপুলসংখ্যক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। শিশুদের সাঁতার শেখানোর সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবকদের যদি এ বিষয়ে সচেতন করা যায় তাহলে এ মৃত্যুহার কমিয়ে আনা সম্ভব।
প্রকল্পের প্রধান কাজের মধ্যে রয়েছে, আট হাজারটি সমাজভিত্তিক শিশু যত্ন কেন্দ্র করা হবে। এখাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২২৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এছাড়া ৬২৪ জন অভ্যন্তরিণ প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ, ১৬ হাজার জন যত্নকারিদের মৌলিক ও রিফ্রেশার্স প্রশিক্ষণ। ছয় থেকে ১০ বছরের শিশুদের সাঁতার প্রশিক্ষণের জন্য এক হাজার ৬০০ জনকে সাঁতার ইন্সট্রাক্টদের মৌলিক ও রিফ্রেশার্স প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। একই সঙ্গে ১৯ হাজার ২০০ জন অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ ও প্রকল্প কর্মকর্তাসহ ৪৬০ জনকে স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও ওরিয়েন্টেশনের ব্যবস্থা করা হবে। এসব খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৪ লাখ টাকা।
তারমধ্যে জ্ঞান অর্জনে বিদেশে প্রশিক্ষণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। বিভিন্ন সেমিনারে ব্যয় করা হবে ৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ১৬ জেলায় অফিস ভাড়াতে ব্যয় হবে এক কোটি ১৭ লাখ টাকা। গবেষণায় ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। যানবহন কেনা ও ভাড়া খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি টাকা। অফিসারদের বেতন, শিক্ষাভাতা, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা মোবাইল, যাতায়াত উৎসব ভাতা নববর্ষ ভাতা অন্যান্য ভাতা মিলে মোট ভাতা ধরা হয়েছে ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এছাড়া আপ্যায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ কোটি টাকা। প্রকল্পটি মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) নাসিমা বেগম বলেন, প্রতি বছর দেশে বিপুল সংখ্যক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। তাই শিশুদের সাঁতার কাটার সঙ্গে অভিভাবকদের যদি এ বিষয়ে সচেতন করা যায় তাহলে এ মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা সম্ভব।
প্রস্তাবিত প্রকল্পে ৩টি লক্ষ্য নিয়ে ২০১৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতর পরিচালিত বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও দুর্ঘটনা সমীক্ষায় বিশেষ বিষয় হিসেবে দেখানো হয়েছে, প্রতিবছর প্রায় ১৯ হাজার ২৪৭ জন মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়, যার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই শিশু। এই সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৫ বছরের কম বয়সি শিশুরা সবচেয়ে বড় ঝুঁকির মধ্যে আছে। এই মৃত্যুর ঘটনাগুলো ঘটে সাধারণত বাড়ির ২০ মিটারের মধ্যে অবাঞ্ছিত জলাধারে এবং দিনের প্রথমভাগে। গ্রামাঞ্চলে পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার এই হার শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি, যার সম্ভাব্য কারণ হতে পারে সেখানে পুকুর আর ডোবার মতো ছোট ছোট জলাধারের সংখ্যা বেশি।
প্রকল্প সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রকল্পে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৩টি প্রতিরোধ কৌশলই অন্তর্ভুক্ত করে প্রকল্প মেয়াদে ১৬টি জেলায় ৪৫টি উপজেলা ৩টি লক্ষ্য নিয়ে কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। বরগুনা, ভোলা ও পটুয়াখালী জেলার উপজেলাগুলো হচ্ছে-আমতলী, বেতাগী, তালতলী, ভোলা সদর, লালমোহন, মনপুরা, কলাপাড়া, গলাচিপা ও বাউফল। ব্রাক্ষণবাড়ীয়া, চাঁদপুর ও লক্ষীপুর জেলার নাসিরনগর, নবীনগর, বাঞ্ছারামপুর, মতলব দক্ষিণ, মতলব উত্তর, চাঁদপুর সদর, লক্ষীপুর সদর, রামগতি, কমলনগর, ও মনোহরদী। বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার ফকিরহাট, মোল্লারহাট, শরণখোলা, দেবহাটা, শ্যামনগর। ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা শেরপুরের ফুলবাড়িয়া, ত্রিশাল, নান্দাইল, মোহনগঞ্জ, দুর্গাপুর, মদন, শেরপুর সদর, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদী। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, রায়গঞ্জ ও তারাশ। নীলফামারীর ডিমলা, কিশোরগঞ্জ ও সৈয়দপুর। হবিগঞ্জ সুনামগঞ্জের বাহুবল, মাধবপুর, আহমিরীগঞ্জ, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, তাহিরপুর ও দোয়ারাবাজার উপচেলায় সাঁতার শিখানোর প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
জেডএ/