টিসিবি পণ্য বিক্রি বন্ধের ঘোষণা: শঙ্কায় নিম্ন আয়ের মানুষ
আগামী শনিবার থেকে বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) পণ্য বিক্রি বন্ধের ঘোষণায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ এবং নিম্ন মধ্যবিত্তরা শঙ্কায় পড়েছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে ভোজ্যতেল চাল, ডাল, চিনি, পিঁয়াজসহ সব ধরণের নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। সেই তুলনায় মানুষের আয় বাড়েনি। এই করোনাকালে বহু মানুষ চাকরি হারিয়েছেন, বেকার হয়েছেন। শহর ছেড়ে অনেকে গ্রামে ফিরে গেছেন। দ্রব্যমূল্যের এই অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতিতে নিম্ন আয়ের মানুষ ও নিম্ন মধ্যবিত্তের জন্য স্বস্তি দিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশন (টিসিবি)। কিন্তু সেই টিসিবি-ই আগামী শনিবার থেকে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
যদিও টিসিবি কমকর্তারা বলছেন, তাদের এই বন্ধ সাময়িক। তবে কবে নাগাদ আবার চালু হবে সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি টিসিবি কর্মকর্তারা।
করোনাকালীন এই সময়ে গত কয়েক মাস ধরে টিসিবি সারাদেশে নিজেদের অনুমোদিত ডিলারদের মাধ্যমে ভোজ্যতেল,ডাল, চিনি ও পিঁয়াজ বিক্রি করছে ভর্তুকি মূল্যে। রাজধানী ঢাকাতে ১০০ ট্রাকে করে এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে নিম্ন আয়ের এবং নিম্নমধ্যবিত্তরা দারুণভাবে উপকৃত হয়ে আসছেন।
বাজার মূল্য থেকে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল কমপেক্ষ ৫০ টাকা কমে টিসিবি ডিলারদের কাছ থেকে কিনতে পারছিলেন সাধারণ ক্রেতারা। একইভাবে চিনি, ডাল ও পিঁয়াজ কিনে অনেকটা স্বস্তিতে কাটাচ্ছিলেন নিম্ন আয়ের লোকজন।
কিন্তু টিসিবি’র পক্ষ থেকে মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) জানানো হয়, আগামী শনিবারের পর থেকে টিসিবির পণ্য বিক্রি বন্ধ থাকবে। এরপর থেকেই সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
বুধবার রাজধানীর একাধিক এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ট্রাকে করে টিসিবি পণ্য বিক্রি করছেন ডিলাররা। সেই পেণ্য কিনতে ট্রাকের পিছনে দীর্ঘ লাইন পড়েছে নারি-পুরুষের।
রাজধানীর আবদুল গণি সড়কে রেল ভবনে সামনে ট্রাকে নিত্য পণ্য বিক্রি করছিল শুভ এন্টারপ্রাইজ নামের ডিলার। সেই ট্রাক ঘিরে শতাধিক মানুষের লাইন। এদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টিসিবি’র পণ্য বিক্রি বন্ধের খবরে তারা খুবই চিন্তায় পড়ে গেছেন। বাজারে যেভাবে তেল ও পিঁয়াজের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে তাতে আগামী রমজান মাসে তাদেরকে চরম সংকটে পড়তে হবে।
টিসিবি পণ্য কিনতে আসা জানারা বেগম জানান, বাজারে তেলের দাম অনেক বেশি। কিন্তু এখানে কম টাকায় পন্য কিনতে পারেন। এ কারণেই তারা টিসিবির ট্রাকের লাইনে দাঁড়ান।
শাহানা বেগম ও খুশী বেগম বলেন, বাজার থেকে কিনতে গেলে আমাদের অনেক কষ্ট হয়ে যাবে। বাজারে অনেক বেশি দাম। তারা বলেন, কোনভাবেই টিসিবি পণ্য বিক্রি বন্ধ করা ঠিক হবে না। এতে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে। অনেক কষ্ট করতে হবে। তার উপর সামনে রমজান মাস। রমজান মাসে সবকিছিুর দাম বেশি থাকে। টিসিবির পন্য বন্ধ হলে অনেক সংকটে পড়তে হবে।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. রেজা বলছিলেন, রমজানকে সামনে রেখে টিসিবি পণ্য নিয়মিত বিক্রি করা উচিত। একটু কম দামে ভালো পণ্য কিনার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করি সরকার গরিব মানুষের কষ্ট বুঝবে। টিসিবি’র পণ্য বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সড়ে আসবে।
টিসিবি’র ঊর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী ও তথ্য কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির ঢাকাপ্রকাশ-কে জানিয়েছেন, শনিবারের পর থেকে টিসিবি’র কার্যক্রম সাময়িক ভাবে বন্ধ থাকবে। তবে কতদিন বন্ধ থাকবে সেটা তিনি জানাতে পারেননি।
অবশ্য হুমায়ুন কবির জানান, প্রতি মাসের শুরুতে প্রথম সপ্তাহে কার্যক্রম বন্ধ থাকে হিসাব-নিকাশ করা জন্য। তিনি জানান, রমজানকে সামনে রেখে আগামী মাস থেকে কার্ডধারীদের মধ্যে টিসিবি পণ্য বিক্রি করা হবে। সারাদেশে এক কোটি পরিবারকে মাসে দুই দিন টিসিবি পণ্য দেওয়া হবে। তাই বর্তমানে যেভাবে টিসিবি পণ্য দেওয়া হচ্ছে সেই কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
তিনি জানান, তবে ঢাকায় ১০০ ট্রাকে করে যেভাবে টিসিবি পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে সেটা অব্যাহত থাকবে।
এনবি/