‘আমি ব্যবসায়ী সন্দেহ নেই, কিন্তু এ ধরনের ব্যবসা আমি করি না’
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘দেখেন আমি তো ব্যবসায়ী। তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমার চরিত্র , আমার পরিচয় তো বদলানো যাবে না। কিন্তু এ ধরনের ব্যবসা আমি করি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘যা করি তা সরকারের সঙ্গে...আমি অ্যাবসুলেটলি গার্মেন্টস পণ্য এক্সপোর্ট করি। দ্যাট’স মাই বিজনেস। তবে এটুক যখন দেখছেন সঙ্গে এটাও বলেন যে ৫১ মিলিয়ন ডলারের টার্গেট ফিক্সআপ করছি, সেটা অর্জন করতে যাচ্ছি। সে সফলতার কথাও বলেন। শুধুমাত্র এইটা বলবেন, ওইটা বলবেন না এটা কিন্তু ঠিক হবে না।’
রবিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে বের হয়ে যাওয়ার সময় বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে ঢাকাপ্রকাশের প্রশ্ন ছিল সাধারণ মানুষ বলছেন বাণিজ্যমন্ত্রী একজন ব্যবসায়ী। এ কারণে তিনি সব সময় ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখছেন, তিনি জনমানুষের স্বার্থ দেখছেন না। জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ভোজ্য তেলের মূল্য বৃদ্ধি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তেলের ব্যাপারটা আপনারা সবাই জানেন যে, আন্তর্জাতিক বাজারে যেটা ছিল আজ থেকে এক বছর আগে এখন সেটা ডাবলেরও বেশি। এখন যদি আমরা না বাড়াই বা বাড়তে পারবে না বলি তাহলে তারা (ব্যবসায়ীরা) ইমপোর্ট করবে না। আর ইমপোর্ট যদি না করে তাহলে আরও বড় ক্রাইসিস হয়ে যাবে। এখন সত্যি কথা যে মানুষের তো কষ্ট হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তো সেটা বেড়ে যাওয়ার কারণে আমাদের তো কোনো পথ নেই।’
আপনি বললেন দাম না বাড়ালে ব্যবসায়ীরা যদি ইমপোর্ট বন্ধ করে দেয় তাহলে কী হবে? প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে ব্যবসায়ীরা কি সরকার থেকে শক্তিশালী?
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কখনো না। সরকার থেকে শক্তিশালী হবে কেন। সরকার তো ব্যবসা করে না। ব্যবসায়ীরাই ব্যবসা করবেন। আমরা দেখব যেটা সেটা হচ্ছে তাদের প্রাইস যথার্থ কি না। সেটা আমরা চেষ্টা করি। তারপরও যে কোথাও না কোথাও ব্যত্যয় হচ্ছেনা তা কিন্ত নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব, ভোক্তা অধিকারসহ সরকারি সংস্থা দিয়ে সেটা কন্ট্রোল করা। আর সরকার নিজে এসে বাজারে বিক্রি করবে তাতো সম্ভব নয়। তারপরও সরকার টিসিবির মাধ্যমে দিচ্ছে। সেটা কিন্তু সরকার ইমপোর্ট করছে। ভুর্তুকি দিয়ে দিচ্ছে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে। আমাদের দেখা দরকার সে ন্যায্য ব্যবসা করছে কি না। ব্যবসায়ীরা দেখে যদি সে এনে লোকসান করবে তাহলে তো তাকে দিয়ে আমরা ব্যবসা করাতে পারব না। তারা তাদের লাভ নেবে। সেটা রিজনেবল কি না, আমাদের দেখার বিষয়। অসাহায়ত্বের কোনো ব্যাপার নয়।’
ভোজ্য তেলের দাম নির্ধারণের পর দিনই নতুন দামের ট্যাগ লাগানো তেল বাজারে গেল, সেটা কীভাবে গেল?
এমন প্রশ্নর জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেখেন একটা বিষয় বলি। এই ব্যবসায়ীরা আরও ১৫ দিন আগে তেলের দাম বাড়ানোর জন্য আমাদেরকে চাপ দিচ্ছিল। আমরা কিন্তু বাড়াইনি। আমি বলছি বাড়াব না। কিন্তু তারা এই দাম মাথায় রেখে নিজেরা সেই দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু আমরা বলেছি যত লেভেলই লাগান না কেন, দাম ফিক্সড করার আগে এই দামে বিক্রি করতে পারবেন না। এঁরা ১৫ দিন আগে দাম বাড়িয়ে রেখে দিয়েছিল।’
টিপু মুনশি বলেন, ‘আমরা যেটা পারি, পারছি বা চেষ্টা করছি সেটা হল সরকারের তরফ থেকে সাবসিডাইস (ভুর্তুকি) দিয়ে সাধারণ মানুষেকে পণ্য দেওয়া হচ্ছে। আমরা চিন্তা করেছিলাম যে, চারশ ট্রাকে টিসিবির মাধ্যমে সারাদেশে নিত্যপণ্য দিচ্ছি সেটা দরকার হলে ৮০০ ট্রাক করে দেব।
এরপর আমরা চিন্তা করলাম রমজান মাস সামনে রেখে ৫০ লাখ মানুষকে দেওযা যায় কি না। সেটা অবশ্য ট্রাকের মাধ্যমে নয়। আমাদের তৃণমূলে যে সরকার আগে যাদের আড়াই হাজার করে টাকা দিয়েছিল তাদের কাছে পৌঁছে দেব। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন ৫০ লাখ নয়, এক কোটি মানুষকে সেটা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। সরকারিভাবে আমরা চেষ্টা করছি রমজান মাসকে সামনে রেখে সেই এক কোটি মানুষকে নিত্য পণ্য দেব সাশ্রয়ী মূল্যে।
এক কোটি মানুষের কাছে কিভাবে সেটা পৌঁছে দেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেকানিজমটা হচ্ছে আগের সিস্টেমটা তো আছে। আগে যেভাবে আমরা টাকা পাঠিয়েছি সেই লিস্টটা তো আছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিটা ইউনিয়নে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য পাঠানো হবে। সেখান থেকে তারা কালেক্ট করে নিবে।
বর্তমানে যে চারটি পণ্য দেওয়া হচ্ছে তার সঙ্গে আরও দুটি পণ্য যোগ হবে। এগুলো হচ্ছে-তেল, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ। এরসঙ্গে যুক্ত হবে খেজুর ও ছোলা।
কি পরিমান পণ্য দেবেন-এমন প্রশ্নের জবাব বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এখন যেভাবে দেওযা হচ্ছে সেই পরিমানই দেওয়া হবে। তবে ১৫ দিন পর পর মাসে দুই বার দেওয়া হবে।
পেঁয়াজের দাম একদিনে কেন ২৫ টাকা বাড়ল কেন এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যদি উল্টো প্রশ্নটা করি পেঁয়াজের দাম ২৫ টাকা হয়ে গেল কেন?’
কৃষকরা বলছে, তারা কিন্তু পেঁয়াজ রাস্তায় ফেলে দেবে। ‘এটা সাপ্লাই এর ব্যাপার... এটা কাঁচামাল তো বুঝতে হবে ট্রান্সপোর্ট কোনো কারণে বন্ধ থাকে, দুইদিন যদি মাল না আসতে পারে কাঁচামালের দাম কিন্তু বেড়ে যাবে।’
‘আমাদের একটা কষ্ট কৃষি মন্ত্রণালয় দিয়েছে যে, প্রতি কেজিতে ১৮ থেকে ২০ টাকা কৃষকদের খরচ জায়গা ভেদে। অন্তত ২৫ টাকা দরে তাদেরকে বিক্রি করতে হবে। ২৫ টাকা দরে যদি কৃষকরা কুষ্টিয়া, রাজবাড়ি বা ফরিদপুরে বিক্রি করে তাহলে হাত ঘুরে সেটা ঢাকায় এসে ৪০ টাকা হবে। এখন সেটা কমে গিয়ে যখন ঢাকাতে ২৫ টাকা হয়েছিল তখন কৃষিমন্ত্রী আমাকে বললেন, আমরা সমস্ত ইমপোর্ট বন্ধ করে দেব, কৃষকরা তো কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে। এইটা হচ্ছে গিয়ে আমাদের সমস্যা।
তিনি বলেন, ‘যখন কমে যায় তখন কৃষকরা বলে আমাদের কী হবে? আবার যখন বেড়ে যায় তখন ভোক্তারা বলে আমাদের দাম বেড়ে গেছে। তবে হঠাৎ করে যে অন্যায্য দাম বেড়ে যায় সেটা ঠিক নয়।’
এনএইচবি/এমএমএ/