কোকা-কোলার বিক্রি বেড়েছে ১০ শতাংশ
করোনার ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের কারণে আরোপ করা বিধিনিষেধের মধ্যেও কোকা-কোলার বিক্রি বেড়েছে ১০ শতাংশ। গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর অর্থাৎ চতুর্থ প্রান্তিকে মার্কিন পানীয় জায়ান্টের আয় ১০ শতাংশ বেড়ে পৌঁছেছে ৯৫০ কোটি ডলারে।
প্রতিষ্ঠানটির বিশ্লেষকরা ৮৯৮ কোটি ডলারের পূর্বাভাস দিলেও গতবছর তা ছাড়িয়ে গেছে । অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কোকাকোলার কফি বিক্রি ১৭ শতাংশ বেড়েছে। স্পোর্টস ড্রিংকসের বিক্রি ১৮ শতাংশ বৃদ্ধিও কোকের আয় বাড়াতে সহায়তা করেছে। এছাড়া কৌশলী বিপণন কার্যক্রমের কারণেই লাভের মুখ দেখা সম্ভব হয়েছে বলছেন মার্কেটিং বিভাগের কর্মকর্তারা। চলতি বছরও আয় ৭ থেকে ৮ শতাংশ বাড়বে প্রত্যাশা করছেন কোকাকোলার চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেমন কুইন্সি।
গত নভেম্বরের শেষ দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কভিডের নতুন ধরন ওমিক্রনকে বৈশ্বিক উদ্বেগ হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর সংক্রমণ কমাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পুনরায় লকডাউনের মতো বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এ অবস্থায়ও কোমল পানীয়ের বিক্রি অব্যাহত রয়েছে।
কোকা-কোলার চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেমন কুইন্সি বলেন, ওমিক্রন সংক্রমণ ডিসেম্বর ও জানুয়ারির বিক্রিতে কিছুটা প্রভাব ফেলেছিল। তবে প্রভাবটি প্রথম সংক্রমণ ঝড়ের মতো বিধ্বংসী ছিল না।
তিনি বলেন, ২০২০ সালের শেষ দিকে ঘোষিত পুনর্গঠনের পর কোকা-কোলার আর্থিক অবস্থা আরো শক্তিশালী হয়েছে। পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে ট্যাব ও ওডওয়ালা জুসের মতো ২০০টি ধীরবিক্রি হওয়া পানীয় কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এরপর আমরা কৌশলী বিপণন কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। প্রকৃতপক্ষে আরো ফুল বাড়ানোর জন্যই বাগানটি ছাঁটাই করা হয়েছে।
গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে কোকের বিক্রি ২০১৯ সালের মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে। চলতি বছরও শক্তিশালী বিক্রির গতি অব্যাহত থাকবে। কোকা-কোলা জানিয়েছে, ২০২২ সালে আয় ৭-৮ শতাংশ বাড়বে। কুইন্সি বলেন, বিশ্বজুড়ে বাজারগুলো কভিডজনিত বিধিনিষেধ থেকে বেরিয়ে আসায় প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি চিনি, অ্যালুমিনিয়াম ক্যানের মতো পণ্য ও পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে দাম বাড়ানোর বিষয়টিও আমাদের আয় বাড়িয়ে দেবে। যদিও কোকের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা হবে বলেও জানান তিনি।
কোকা-কোলার প্রধান বলেন, মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পণ্যের দাম বাড়ানো খুব সহজ। তবে অর্থনীতির বিস্তৃত খাতজুড়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি অব্যাহত থাকায় কোকের দাম বাড়লে বিভিন্ন দেশে প্রকৃত আয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। আমরা গ্রাহক হারাতে চাই না।
অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে কোকা-কোলার কফি বিক্রি ১৭ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে যুক্তরাজ্যের কফি শপগুলো পুনরায় চালু হয়েছিল। বডিআরমরের স্পোর্টস ড্রিংকসের বিক্রি ১৮ শতাংশ বৃদ্ধিও কোকের আয় বাড়াতে সহায়তা করেছে। ২০১৮ সাল থেকে কোকা-কোলা বডিআরমরের ১৫ শতাংশের মালিকানায় ছিল। গত নভেম্বরে ৫৬০ কোটি ডলারে সংস্থাটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় পানীয় জায়ান্টটি।
চতুর্থ প্রান্তিকে কোকা-কোলার মুনাফা ৬৬ শতাংশ বেড়ে ২৪০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। শেয়ারপ্রতি আয় ৫ শতাংশ কমে ৪৫ সেন্টে দাঁড়িয়েছে। এ আয়ের পরিমাণ বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস ৪১ সেন্টের চেয়ে বেশি। এ খবরের পর পুঁজিবাজারের কোকের শেয়ারদর ২ শতাংশের কাছাকাছি বেড়েছে।
এদিকে কোকা-কোলার প্রতিদ্বন্দ্বী পেপসিকোও চতুর্থ প্রান্তিকে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি মুনাফার কথা জানিয়েছে। এ সময়ে মার্কিন কোমল পানীয় প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা ১২ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৫২০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। যেখানে বিশ্লেষকরা ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। সামঞ্জস্য করা শেয়ারপ্রতি আয়ের পরিমাণ ১ ডলার ৫৩ সেন্ট। পেপসিকো জানিয়েছে, পরিবহনের পাশাপাশি রান্নার তেল ও প্যাকেজিংয়ের মতো পণ্যগুলোর দাম বেড়েছে। এজন্য সংস্থাটিও পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। তবে দাম বাড়ানোর কারণে এখনো বিক্রি কমেনি।
কেএফ/