সরকারি ঘোষণার আগেই বাড়তি দামের তেল বাজারে
বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আট টাকা ও খোলায় লিটারে সাত টাকা বাড়ানোর বিষয়ে রবিবার সিদ্ধান্ত দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ হিসেবে বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিন তেলের দাম হবে ৭৯৫ টাকা। এতো দিন যা ছিল ৭৬০ টাকা। সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বাজারে গিয়ে এ দাম কার্যকর হতে দেখা গেছে। তবে অবাক করা বিষয় ৫ লিটারের বোতলের লেবেলে মূল্য ৮০০ টাকা লেখা হয়েছে। বিক্রেতারা জানান, এ দামে মালের চালান আগেই বাজারে এসেছে। সরকারি সিদ্ধান্ত না আসায় কোম্পানির নির্দেশে এতোদিন কম দামে বিক্রি হয়েছে। এখন সরকারি নির্দেশনা আসায় গায়ের মূল্য কার্যকর করা হচ্ছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন বাজারে সরেজমিনে গেলে এমনই চিত্র পাওয়া যায়।
কারওয়ান বাজারের নিউ সোনারগাঁও জেনারেল স্টোরের রিপন গত সপ্তাহে পাঁচ লিটার তেল সর্বোচ্চ ৭৬০ টাকা ও এক লিটার ১৭০ টাকা বিক্রি করেন। কিন্তু সেই দামের তেল নেই। আজ ৮০০ টাকার কম হবে না বলে জানান তিনি।
বাড়তি এই দামের ব্যাপারে খুবই ক্ষুদ্ধ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করে পকেটে কিছুই থাকবে না। অথচ অপবাদ নিতে হবে।
কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ী মেসার্স মিলু স্টোরের বিপ্লব ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, কয়েক দিন থেকে মিলে ডিও নিচ্ছে না। আগের ৫ লিটার রূপচাঁদা গায়ের রেট ৭৬০ টাকার তেল পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে তা ৮০০ টাকা মূল্য ধরা হয়েছে। তবে পাইকারি ৭৬০ টাকা এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এক লিটার ১৬৮ টাকা লেখা থাকলেও বিক্রি করা হচ্ছে ১৫৮ টাকা। তিনি আরও বলেন, শুনেছি সরকার বাড়তি দামে তেল বিক্রির সুযোগ দিয়েছে কোম্পানিকে। কতো দিন পর কার্যকর হতে পারে-এমন প্রশ্নের জবাবে অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, সব কোম্পানির চার থেকে ৫ দিন লাগতে পারে। কারণ গোডাউন থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় এসব তেল রয়েছে। বাড়তি দামের তেলে আমাদের লাভ নেই।
একই মার্কেটের খুচরা ব্যবসায়ী সোনালী ট্রেডার্সের আবুল কাসেম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আগের দামেই সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে বাজারে। পেপারে, টিভিতে শুনেছি বাড়ানো হয়েছে দাম। তবে আগের দামের ৭৬০ টাকার তেল নেই।
মায়ের দোয়া জেনারেল স্টোরের মালিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যুক্তি ছাড়াই দাম বাড়ানো হচ্ছে। এইতো কয়েক মাস আগে বাড়িয়েছে। ১৯৮৫ সাল থেকে ব্যবসা করছি। কিন্তু এভাবে কখনো বাড়তে দেখিনি। দাম বাড়লেও আমাদের বাড়তি লাভ হচ্ছে না। অপবাদ নিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে।’
এ সময় ক্যান্টনমেন্ট থেকে আসা ক্রেতা লাভলু ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘মিল মালিকরা বলল আর সরকার বাড়িয়ে দিলো তেলের দাম। এভাবে চলতে পারে না। আমরা কিভাবে চলব। আমাদের তো আয় বাড়েনি। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ভোক্তাদের পকেট কাটছে। তা হতে পারে না। কারণ আমার ২০ হাজার টাকা আয়। ব্যয় হচ্ছে ২৫ হাজার টাকা। তাহলে বাড়তি বাজারে কিভাবে চলব।’
মোহাম্মদপুরের জনতা মার্কেটের আক্তারও বলেন, ‘আগের দামেই সব তেল বিক্রি করা হচ্ছে। দাম বেশি হলে তখন বেশি দামে বিক্রি করা হবে। তাতে আমাদের কোন লাভ নেই।
ক্রেতা শফিক বলেন. ‘যে যার মতো সুবিধা নিচ্ছে। ভোক্তাদের দিকে তাকাই না কেউ। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে জিম্মি হয়ে গেছে সরকার। তাইতো যখন যা বলছে ব্যবসায়ীরা, সরকার তা করতে বাধ্য হচ্ছে।’
বাড়তি তেলের ব্যপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে এস আলম গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক কাজী সালাহ উদ্দিন আহমেদ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, গত মাসেই ট্যারিফ কমিশনের মূল্য তালিকা অনুযায়ী প্রায় মিল মালিকরা আগেই ৫ লিটার ৮০০ টাকা দাম নির্ধারণ করেছে। সম্মিলিতভাবেই তা করা হয়েছে। কার্যকর করতে সরকারের কাছে যোগাযোগও করেছে। কিন্তু সরকার সময় চাওয়ায় আগে বাজারে ছাড়া হয়নি। সরকার অনুমোদন না দিলে তা কার্যকর হবার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু রবিবার সরকার অনুমোদন দিয়েছে প্রতি লিটারে আট টাকা বাড়ার জন্য। তা সোমবার থেকে কার্যকর করা হচ্ছে। তাহলে ৮০০ টাকা কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘৫ টাকা কমিয়ে সর্বোচ্চ ৭৯৫ টাকা হবে ৫ লিটারে।
গত ১৯ অক্টোবর সরকার সর্বশেষ সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারিত করেছিল, যাতে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৩৬ টাকা ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল। আর বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ধরা হয়েছিল ৭৬০ টাকা এবং পাম তেলের দাম ছিল ১১৮ টাকা।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে দেশে ভোজ্যতেল বাজারজাতকারী ব্যবসায়ীদের সমিতি ‘বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন’ কয়েক মাস ধরে তেলের দাম বাড়াতে চাচ্ছে। কোনো কোনো মাসে তিন দফা দর বাড়ানোর প্রস্তাবও দিয়েছে। সর্বশেষ গত ৬ জানুয়ারি সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে প্রতি লিটারে আট টাকা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয় । তার এক মাস পরই ৬ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করা হয়েছে প্রতি লিটারে দাম বাড়ানোর। যা মিল গেট থেকে আগে ডিলারদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সোমবার থেকে পাইকারি ও খুচরা বাজারে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
জেডএ/