আগামি মাসে ২০ বিলিয়নের নিচে নামবে দেশের রিজার্ভ
ছবি:সংগৃহীত
দেশে চলছে চরম ডলার সংকট। সংকট নিরসনে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (আকু) অওতাধীন দেশগুলো থেকে দেশের আমদানি বাবদ (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) আগামী সোমবার ১.২১ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। এই দায় পরিশোধের পর দেশের রিজার্ভ দাঁড়াবে ১৯.২৯ বিলিয়ন ডলারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বিপিএমসিক্স অনুযায়ী ৩১ অক্টোবর দেশে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২০.৫০ বিলিয়ন ডলার।
গত জুলাই-আগস্ট সময়ে আকু পেমেন্টের পরিমাণ ছিল ১.২ বিলিয়ন ডলার। আর এর আগের মে-জুন সময়ের জন্য পেমেন্টে করা হয়েছিল ১.১ বিলিয়ন ডলার।
আঞ্চলিক আমদানির ক্ষেত্রে নয়টি সদস্য দেশ– বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার আর্থিক লেনদেন কভার করে আকু পেমেন্ট গেটওয়ে। প্রতি দুই মাস অন্তর এ বিল পরিশোধ করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, দেশের ডলারের ইনফ্লো থেকে আউটফ্লো বেশি হওয়ায় রিজার্ভের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমছে। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়মিত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও জ্বালানি আমদানি ব্যয় মেটাতে ব্যাংকগুলোকে ব্যাপক হারে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে।
তারা বলেন, রিজার্ভ বাড়ানোর প্রতিটি সূচকই এখন নিম্নমুখী; রেমিট্যান্স কমছে; লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রপ্তানি আয় আসছে না। আবার নতুন বিদেশি বিনিয়োগও নেই। তাই বাড়ছে না রিজার্ভ।
রেমিট্যান্সেরে প্রণোদনা বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, সামনের মাসগুলোতে রেমিট্যান্সের পরিমাণ বাড়বে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিনমাসে ধারাবাহিকভাবে প্রবাসী আয় কমেছে। গত জুলাইয়ে ১.৯৭ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আগস্টে এসেছে ১.৬০ বিলিয়ন ডলার । সেপ্টেম্বরে এসেছে ১.৩৪ বিলিয়ন ডলার এবং সর্বশেষ সমাপ্ত অক্টোবর মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১৯৭ কোটি ডলার। এই অংক গত তিন মাসের সর্বোচ্চ। তবে এই ধারাবাহিকতাও বেশি থাকবেনা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা ।
অন্যদিকে, রপ্তানি আয়ে নেই খুব বেশি সুখবর। জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর প্রতি মাসেই অল্প পরিমাণে প্রবৃদ্ধি ছিল। কারণ শীর্ষ পাঁচটি রপ্তানি পণ্যের মধ্যে তৈরি পোশাক ছাড়া অন্য চারটিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
ডলার সংকটের কারণে দেশের সার্বিক ঋণপত্র (এলসি) খোলা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। গত সেপ্টেম্বরে ঋণপত্র খোলা কমে দাঁড়িয়েছে ৪.৬৯ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮ শতাংশ কম।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন গনমাধ্যমকে বলেন, "আর্থিক সংকট নিরসনে ডলারের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসা খুবই জরুরি। দীর্ঘ দিন ডলারের দাম ধরে রাখার কারণে ডলারের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত ডলারের দর পুরোপুরি বাজার ভিত্তিক করা।"