দরিদ্ররা সিস্টেমেটিকভাবে বঞ্চিত: পরিকল্পনামন্ত্রী
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, আমি মন্ত্রী হিসেবে নয়, একজন নাগরিক ও এমপি হিসেবে বলছি দরিদ্ররা সিস্টেমেটিকভাবে বঞ্চিত। কালোকে কালো বলতেই হবে।
সোমবার (১৫ মে) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে 'আইএমএফের সময় অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের কথা জাতীয় বাজেটে কীভাবে প্রতিফলিত হতে পারে'- শীর্ষক সংলাপে এসব কথা বলেন তিনি। সিপিডি ও নাগরিক প্লাটফর্ম এ সংলাপের আয়োজন করে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাগরিক প্লাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
আইএমএফের ঋণের ব্যাপারে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আইএমএফ ইজ নট এ মেজর ফ্যাক্টর হেয়ার (এখানে আইএমএফ কোনো ব্যাপার নয়)। কারণ আমরা তাদের উপর নির্ভরশীল নয়। শুধু টাকার জন্য আইএমএফ সৃষ্টি হয়নি। সক্ষমতাও দেখানো হয়। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট বলেছেন, দাতা নয়, আমরা ঋণ প্রদানকারীদের কাছে ঋণ নিই। সুদে আসলে তা পরিশোধ করি।
মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে মূল্যস্ফীতির হাতে গরম লাগে। তবে গত মাসে সামান্য কমেছে। আমরা কমানোর চেষ্টায় আছি।
রিজার্ভ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ৫-৭ বছর আগে রিচার্ভ কি তা কেউ জানত না। এটা চলমান ব্যাপার। এটা বাড়বে, কমবে। এতে ভয়ের কিছু নেই। সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য আমরা সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছি। তবে ১৭ কোটি মানুষের জন্য এটা বাস্তবায়ন করা সহজ কাজ না। এতে একটু সময় লাগবে।
অনুষ্ঠানে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকার প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়ালেও এটা আসলে বড় না। দক্ষিণ এশিয়ায় জিডিপির তুলনায় আমাদের বাজেট সবচেয়ে কম। এবার ৬ লাখ কোটি টাকার বেশি বাজেট হলেও তা ১২ লাখ কোটি টাকা হওয়া প্রয়োজন।
করের হার খুবই কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, যাদের কর দেওয়ার কথা তারা দেয় না। এজন্য কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। বাজেটের দর্শন কী তা দেখা দরকার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেটে দর্শনের জায়গা ঠিক করতে হবে। তৃণমূলের বড় জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে বাজেট প্রণয়ন ঠিক হবে না।
তিনি আরও বলেন, করখেলাপি ও ঋণখেলাপিদের বিভিন্নভাবে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। বাজেটে তা বন্ধ করতে হবে। পাচার করা অর্থ দেশে আনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এটা অর্থনৈতিকভাবে, নৈতিকভাবে ও রাজনৈতিকভাবেও গ্রহণযোগ্য নয়। আগামী বাজেটে তা বাদ দিতে হবে।
সিপিডির ট্রাস্টি সদস্য ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সদস্য অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, বর্তমানে মানুষে মানুষে প্রচণ্ডভাবে বিচ্ছিন্নতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সরকার বিভিন্ন খাতে ভাতা বাড়ানোর ব্যবস্থায় যত মনোযোগ দিচ্ছে কর্মসংস্থানের দিকে এত মনোযোগ দিচ্ছে না।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমানে সোনার বাংলা গাওয়া হলেও বিশ্বাস ও নিশ্বাস থেকে তা গাওয়া হয় না। তা আন্তরিকভাবে করা হলে এই বিচ্ছিন্নতা থাকত না। বর্তমানে ভোট ভিক্ষার প্রয়োজন নেই, মানুষকে চেনার দরকার নেই। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক যা বলছে তাই শোনা হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মানুষের কাছে যেতে হবে। তাহলে জনগণ সরকারের পাশে থাকবে, যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের সময় সবাই অংশ নিয়েছিল।
জেডএ/এসজি