এসএমই উদ্যোক্তারা সময়মতো ঋণ পরিশোধ করে: এফবিসিসিআই সভাপতি
ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে ছোট আকারের ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোর খুবই অনীহা উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন এ খাতের ঋণগ্রহীতারা খেলাপি হয়না রবং তারা সময়মেতা ঋণ পরিশোধ করে।
তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলো মনে করে ছোট আকারের ঋণ দেওয়া লাভজনক নয়। বড় ব্যবসা খাতে ঋণ দিলে ব্যাংকের জনবল ও খরচ কম হয়। কিন্তু এ ধারণা ভুল, বরং এতে মন্দ ঋণের ঝুঁকি বাড়ে। এসএমই খাতের ঋণ গ্রহীতারা খেলাপি হয়না। তারা সময়মতো পরিশোধ করে ঋণ।’
শনিবার (২২ জানুয়ারি) মতিঝিলে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত কাউন্সিল অব চেম্বার প্রেসিডেন্টস-২০২২ এর মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সভায় আরও বক্তব্য দেন সারাদেশ থেকে আগত জেলা, সিটি ও নারী উদ্যোক্তাদের চেম্বারগুলোর সভাপতি। সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিল অব চেম্বার প্রেসিডেন্টস সভাপতি ও এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।
ব্যবসায়ীরা জানান, করোনার ২য় ধাক্কার পর এখন অমিক্রন ধরনের সংক্রমণে আবার ব্যবসা বাণিজ্যে নাজুক পরিস্থিত তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় অনেক ব্যবসায়ীর ঋণের কিস্তি দেওয়ার সক্ষমতা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক সময় না বাড়ালে ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই খেলাপি হবেন, যা দীর্ঘ মেয়াদে দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।
এমন অবস্থায় ঋণের কিস্তি পরিশোধে সময় না বাড়ালে অন্তত ৫০ শতাংশ ব্যবসায়ী খেলাপি হবেন। এ জন্য জুন পর্যন্ত সময় চেয়েছেন সারাদেশের ব্যবসায়ী নেতারা।
সভায় এফবিসিসিআই’র সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ব্যবসায়ীদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, ‘ঋণ শ্রেণিকরণ সুবিধার মেয়াদ না বাড়ালে অন্তত ৫০ শতাংশ ব্যবসায়ী খেলাপি হবেন। মহামারিকালীন মন্দা কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সহায়তা এখন আরও বেশি দরকার। তা না হলে, ব্যবসা বাণিজ্য ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কঠিন হয়ে পড়বে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নির্দেশে যেসব খাতের ব্যবসায়ীক কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছিল সেখাতগুলো এখনো প্রণোদনার ঋণ পায়নি। মহামারিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। কিন্তু অন্যান্য প্রণোদনা তহবিলের অর্থ প্রায় শতভাগ ছাড় হলেও, এসএমই প্রণোদনার বড় অংশ বিতরণ হয়নি। দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সরকারের নীতিনির্ধারণী বৈঠকে বেসরকারিখাতকে রাখার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।’
তিনি জানান, অর্থনীতিতে ৮২ শতাংশ অবদান রাখছে বেসরকারি খাত। তাই বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে যে কোন নীতি প্রণয়নে এফবিসিসিআই’র মতামত থাকা জরুরি।
সভায় মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, দেশে এখনো শুল্ক-কর ও ভ্যাট আদায়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। কোম্পানি আইন, আমদানি ও রপ্তানি আইন নতুন করে হচ্ছে। এসব আইন যেন ব্যবসা বান্ধব হয় সে জন্য এফবিসিসিআই কাজ করে যাচ্ছে।
এ সময় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, করোনা মহমারিতে বিপর্যস্ত ব্যবসা বাণিজ্যের মধ্যে রাজস্ব আদায় করতে নানাভাবে তাদেরকে নানাভাবে হয়রানি ও ভীতির পরিবেশ তৈরি করছেন রাজস্ব কর্মকর্তারা। স্থানীয় পর্যায়ে চাঁদাবাজিরও শিকার হচ্ছেন।
করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরেও জেলা পর্যায়ের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা সরকার ঘোষিত প্রণোদনা পাচ্ছেন না। কারখানা স্থাপনে ৩৩টি লাইসেন্সের দরকার হয়।
এ সভায় বক্তব্য রাখেন কিশোরগঞ্জ চেম্বার সভাপতি মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান বেলাল, রাজশাহী ওমেন চেম্বারের সহ-সভাপতি তাহেরা হাসেন, সাতক্ষীরা চেম্বারের সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু, রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ড মোহাম্মদ গোলার জাকারিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার সভাপতি আজিজুল হক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি মো. এরফান আলীসহ এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি মো. আমিনুল হক শামীম, মো. আমিন হেলালী, সালাহউদ্দীন আলমগীর, হাবীব উল্লাহ ডন ও এমএ রাজ্জাক খান রাজ।
জেডএ/এমএমএ/