কর ফাঁকিতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার: সিপিডি
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে কর ফাঁকি ও কর এড়ানোর কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।
এর পরিমাণ ৫৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা থেকে ২ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত রাজস্ব হতে পারে। এ ফাঁকি রোধ করতে পারলে ট্যাক্সের আওতা বৃদ্ধি ও কর অব্যাহতি দেওয়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।
সোমবার (৩ এপ্রিল) করপোরেট খাতে কর স্বচ্ছতা: বাজেটে সরকারি আয়ের অভিঘাত’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এসব তথ্য তুলে ধরেন। রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি অফিসে এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনসহ অন্যরা।
গবেষণাটি যৌথভাবে সম্পন্ন করেছে সিপিডি ও খ্রিষ্টান এইড। ১২ জন অডিটরস ও রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এই গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে।
ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘কর ফাঁকি দিতে গিয়ে কোম্পানি তার প্রকৃত আয় কম দেখিয়ে থাকে। আর কর এড়াতে লিগ্যাল ফ্রেমের আওতায় সরকারের দেওয়া সুবিধা গ্রহণ করে থাকে। আমাদের দৃষ্টিতে এটা কর অস্বচ্ছতা। এভাবে কর ফাঁকি ও কর এড়ানোর কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। যার পরিমাণ ৫৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা থেকে ২ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। যা সরকার পেলে স্বাস্থ্যখাতের বাজেটে ২০০ শতাংশ বৃদ্ধি করা সম্ভব।’
কর ক্ষতি প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, রাজস্ব কর্মকর্তা ও অডিটরদের সঙ্গে কথা বলে যে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে তা হলো, কর ফাঁকি ও কর এড়ানোর মাত্রা ব্যাপক। ট্যাক্স লস যেটি হচ্ছে কর এড়ানোর জন্য সেটি ৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। আর কর লস যেটি হচ্ছে কর ফাঁকির জন্য সেটা ১৫ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। কেউই বলেনি যে বাংলাদেশে কর ফাঁকি হচ্ছে না। তাই কর অব্যাহতি নির্দিষ্ট সময় ও লক্ষ্যভিত্তিক হওয়া উচিত। কর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্যতামূলক সাস্টেনেবল রিপোর্টিংয়ে যাওয়া দরকার।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক বলেন, ৬৮ শতাংশ মানুষ করযোগ্য আয় করার পরও আয়কর দেন না। অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ কর দেওয়ার যোগ্য হওয়ার পরেও কর দেয় না। অন্যদিকে জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে ২ লাখ ১৩ হাজার কোম্পানি রেজিস্ট্রার্ড হলেও রিটার্ন দাখিল করে মাত্র ৪৫ হাজার কোম্পানি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের আকার ৩০ শতাংশ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে করের পরিমাণ ছিল ২০১০ সালে ২২ হাজার কোটি টাকা, যা ২০২১ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা যদি পাওয়া গেলে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় তিনগুণ বৃদ্ধি করা যেত।
ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ট্যাক্স জাস্টিস রিপোর্ট বলছে-কর ফাঁকি ও কর এড়ানোর মাধ্যমে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৪৮৩ বিলিয়ন (৪৮ কোটি ৩০ লাখ ) ডলার কর ক্ষতি হচ্ছে। যার মধ্যে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির মাধ্যমে ৩১২ বিলিয়ন ডলার ও ব্যক্তি পর্যায়ের মাধ্যমে ১৭১ বিলিয়ন ডলার কর ক্ষতি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, করপোরেট কর হার কমিয়ে কর জাল বাড়িয়ে ট্যাক্স আদায় করা দরকার। কারণ করহার বাড়ানোর ফলে প্রচুর কালোটাকা থেকে যাচ্ছে। বাংলাদেশে করপোরেট ট্যাক্সে রেট দক্ষিণ এশিয়ার ভেতরে সর্বোচ্চ। কিন্তু ট্যাক্স জিডিপি রেশিও (অনুপাত) আফগানিস্তানের পরে সর্বনিম্ন।
জেডএ/এমএমএ/