২০৪০ সালে ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ
বেসরকারি খাতের নেতৃত্ব, দ্রুত বেড়ে ওঠা মধ্যবিত্ত ও বিপুল ভোক্তা শ্রেণির কারণে ২০৪০ সালের মধ্যে ট্রিলিয়ন ডলার বা লাখ কোটি বা এক হাজার বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির পথে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টিং ফার্ম বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের (বিসিজি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিপর্যয়ের পরও কীভাবে দেশটির অর্থনীতি সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তার ওপর আলোকপাত করে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে।
শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘দ্য ট্রিলিয়ন-ডলার প্রাইজ-লোকাল চ্যাম্পিয়নস লিডিং দ্য ওয়ে’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। অনুষ্ঠানের মূল বক্তা ছিলেন এইচএসবিসি বাংলাদেশের করপোরেট কমার্শিয়াল ব্যাংকিংয়ের এদেশীয় প্রধান রিয়াজ এ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন— বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের গ্লোবাল চেয়ার ইমেরিটাস ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হ্যান্স-পল বার্কনার, বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের জ্যেষ্ঠ অংশীদার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জারিফ মুনির, প্রতিষ্ঠানটির অংশীদার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শৈবাল চক্রবর্তী ও বোস্টন কলসাল্টিং গ্রুপের অংশীদার তৌসিফ ইশতিয়াকসহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিয়েতনাম, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো দেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এ প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে অপ্টিমিস্টিক আউটলুক (দৃঢ় আশাবাদ), গিগ ইকোনমি (ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল খণ্ডকালীন কাজ), ভোগ্য পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি, তরুণ ও ক্রমবর্ধমান কর্মশক্তি, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা (হাই ইকোনমিক রেজিলিয়ান্স), ডিজিটাল মাধ্যমের বহুল ব্যবহার, সরকারি উদ্যোগ এবং একটি বৃহৎ, সুসংগঠিত বেসরকারি খাতসহ বিভিন্ন বিষয় সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশের উদীয়মান চ্যাম্পিয়নরা নিজেদের বিশ্বের দরবারে সেরা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ও দেশকে নেতৃত্ব দিতে নিত্যনতুন কৌশল নিচ্ছে এবং চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছে। এভাবেই বাংলাদেশ ২০৪০ সাল নাগাদ এক ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উদীয়মান কম্পানিগুলো উদ্ভাবনী, দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্য দিয়ে অভ্যন্তরীণ বাজারে কাঠামোগত সুবিধা তৈরি করেছে এবং বৈশ্বিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণেও প্রস্তুত। এ চ্যাম্পিয়নের সাফল্য অন্যান্য দেশের অনুকরণীয় কোম্পানিগুলোর উদ্যোগেরই প্রতিধ্বনি। নিজস্ব দক্ষতা, সফলতা ও গুণগত মান অর্জনে তারা যেন দ্বিগুণ প্রতিশ্রুতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এই চ্যাম্পিয়নদের লক্ষ্য আন্তর্জাতিক পুঁজি বাড়ানো, বৈশ্বিক জোট গঠন এবং সরবরাহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বৈচিত্র্যময় ও পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রবেশ করা। বেসরকারি খাত উদ্ভাবন ও উৎপাদনশীলতা বাড়াচ্ছে এবং সুগঠিত কৌশলগত কর্মসূচির মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল সুবিধাকে কাজে লাগাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই চ্যাম্পিয়নরা বাংলাদেশের ট্রিলিয়ন ডলারের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে শক্তিশালী অবদান রাখবে।’
প্রতিবেদনটি বিসিজির বিশ্লেষণ এবং বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে, যাদের বার্ষিক আয় ৩০০ মিলিয়ন থেকে তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বিসিজি প্রতিবেদনে কোম্পানিগুলোর মধ্যে দৃঢ় আশাবাদ পেয়েছে এবং এদের ৫৭ শতাংশ বিশ্বাস করে পরবর্তী প্রজন্ম আরও ভালো জীবনযাপনের সুযোগ পাবে। বাংলাদেশের একটি উদীয়মান তরুণ শ্রমশক্তি রয়েছে। যাদের গড় বয়স ২৮ বছর। এ দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ৬৮.৪ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জরিপে দেখা গেছে বাংলাদেশে ৮৩ শতাংশ কোম্পানির সাহসী ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী ভিশন রয়েছে এবং ৩৮ শতাংশ আরও ভালো গ্রাহক ফলাফল অর্জনে মনোনিবেশ করেছে। প্রায় ৭৮ শতাংশ কম্পানি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে তারা প্রতিনিয়ত রূপান্তরের একটি সংস্কৃতি তৈরি করতে সক্ষম হবে এবং ৬১ শতাংশ আন্তর্জাতিক সম্প্রসারণে কৌশল গ্রহণ করেছে বৈশ্বিক ব্র্যান্ড তৈরি করার জন্য।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ভোক্তা বাজার বিশ্বের নবম বৃহৎ হওয়ার পথে রয়েছে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ শ্রেণির দ্রুত বিস্তৃতির মধ্য দিয়ে। এই শ্রেণিটি ২০২০ সালের ১৯ মিলিয়ন থেকে ২০২৫ সাল নাগাদ হবে ৩৪ মিলিয়ন। ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত গড়ে বার্ষিক ৬.৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডকে ছাড়িয়েছে। এ দেশের প্রবৃদ্ধির হার নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর দ্বিগুণ এবং বৈশ্বিক গড় ২.৯ শতাংশের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেশি।
অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ অনেক আগে থেকেই ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। এখন আমরা বিশ্বের উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। আমি বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপকে এ ধরনের সমীক্ষা পরিচালনার জন্য ধন্যবাদ জানাই, যেখানে আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতার চিত্র উঠে এসেছে।’
বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের গ্লোবাল চেয়ার ইমেরিটাস হ্যান্স-পল বার্কনার বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন অন্যান্য উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য আদর্শস্থানীয়। এই দেশ ইতোমধ্যে অনেক কিছু অর্জন করেছে। বিশেষ করে দেশের বেসরকারি খাতের অপরিসীম অবদানের কারণে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর রূপান্তর এবং দেশের বেসরকারি খাতের উল্লেখযোগ্য অবদান এ গতিকে ত্বরান্বিত করেছে।’
আরএ/