দাম বাড়ানোর পরপরই বাজারে তেল-চিনি
সয়াবিন তেল লিটারে ১২ টাকা ও চিনির দাম কেজিতে ১২ টাকা বাড়ার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে চলে এসেছে সয়াবিন তেল ও চিনি। এতে বিস্ময় প্রকাশ করে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম কমানোর ঘোষণার ১০ থেকে ১৫ দিনেও পাওয়া যায় না। কিন্তু মিলমালিকরা যেদিন দাম বাড়িয়ে দিল সেদিনই বাজারে চলে এসেছে। আগেই তারা দাম বাড়িয়ে রেখেছিল।
সুখবর নেই চালের বাজারেও। আমন ধান উঠলেও কমেনি দাম। তবে স্বস্তির খবর মিলছে মাছ, মুরগি ও ডিমে। শীতের সবজি বাজারে আসায় প্রায় সবজি ৫০ টাকার কমে বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা।
শনিবার (১৯ নভেম্ববর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
সবজির কেজি ৫০ টাকার নিচে
শীত ঘনিয়ে আসায় বাজারে প্রায় সব সবজির দাম কমতির দিকে। মরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। মরিচ বিক্রেতা শফিক বলেন, শীতের কারণে সরবরাহ বেশি হওয়ায় মরিচের দাম কমে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাঁধাকপি ও ফুলকপির পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকা, লাউ ৪০ থেকে ৬০ টাকা, শিমের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বেগুনের দামও কমে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, ঝিঙে, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, ঢেঁড়স, মিষ্টি কুমড়া ও মুলার কেজি ৩০ টাকা। তবে এখনো ভরা মৌসুম না হওয়ায় টমেটোর দাম কমেনি। বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। শসা ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
চিনির কেজি ১০৭ টাকা
প্রায় এক মাস আগে থেকে বাজারে চিনি পাওয়া না গেলেও ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে সরকার চিনির দাম ৯৫ থেকে ১০৭ টাকা কেজি ঘোষণা করেছে গত ১৭ নভেম্বর। ঘোষণার পরপরই বাজার ভরে গেছে চিনিতে। মিলমালিকদের কারসাজির কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে খুচরা ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে কারওয়ান বাজারের লক্ষ্মীপুর জেনারেল স্টোরের হাজী ইউসুস, ইউসুফ স্টোরের ইউসুফ, ফরিদগঞ্জ স্টোরের জাহাঙ্গীরসহ অনেক খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, দেশে দেখার কেউ নেই। চিনি ৯৫ টাকা কেজি করার পরও এক মাস থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ বৃহস্পতিবার তেলের লিটারে ও চিনির কেজিতে ১২ টাকা বাড়তি দাম ঘোষণা করা মাত্রই চলে এসেছে। মিলমালিকরা ইচ্ছা করে এভাবে দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে। গালি খেতে হয় খুচরা ব্যবসায়ীদের।
ইয়াসিন স্টোরের আলী হোসেন বলেন, এক সপ্তাহ আগে ১০৫ টাকায় কিনে সর্বশেষ ১১০ টাকা কেজি চিনি বিক্রি করেছি। ১৭ নভেম্বর থেকে নতুন দাম ঘোষণার পর তা পাওয়া যাচ্ছে।
চিনির পথেই তেলের বাজার বলে জানা খুচরা ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, ১৭৮ টাকা থেকে সয়াবিন তেলের দাম ১৯০ টাকা করা মাত্রই তা বাজারে চলে এসেছে। তাই ৫ লিটার তেলের দাম ৮৫০-৮৭০ টাকা হয়েছে ৯২০ টাকা। তবে ২ ও এক লিটারের দাম এখনো আসেনি। তবে কোনো কোনো দোকানে আগের ২ লিটার ৩৫০ টাকা এবং ১ লিটার ১৭৮ টাকার তেল বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। মসুর ডাল ৯৫-১৪০ টাকা কেজি, আটার দামও বেড়ে ২ কেজি ১৪৪ টাকা থেকে ১৫০ টাকা ও ২ কেজির ময়দা ১৬০ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
ধান উঠলেও কমেনি চালের দাম
মাঠ থেকে আমন ধান উঠা শুরু হলেও চালের দাম একটুও কমেনি। বরং সব চাল আগের মতো বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের মান্নান রাইসিএজেন্সির তোফায়েল, কুমিল্লা রাইস জেনারেল স্টোরের শহিদুল ইসলাম, বরিশাল রাইস এজেন্সির আল হাসিব এবং আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির আব্দুল আওয়াল ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমন ধান উঠলেও এখনো আগের দামে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। একটুও কমেনি দাম। মিনিকেট চাল এখনো ৭৪ থেকে ৭৫ টাকা কেজি, ২৮ চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, মোটা হাইব্রিড চাল ৪৮, বাসমতি ৮৮, নাজিরশাইল ৮২ থেকে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। পোলাও চালের দামও বাড়তি। প্যাকেট ছাড়া এই চাল ১২৫ টাকা ও বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেট চাল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
লাগামহীন আদা
অন্যান্য বছরের মতো এবার পেঁয়াজের দাম বাড়েনি। মসলার মধ্যে পেঁয়াজ, মরিচ ও রসুনের দাম না বাড়লেও আদার ঝাঁজ কমছে না। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে গেছে। মসলা ব্যবসায়ী জনি বলেন, আগের সপ্তাহে আদা ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও তা এখন ২০০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। দাম এত বাড়ছে কেন? এমন প্রশ্নের কোনো জবাব নেই তার কাছে। তবে উত্তর বেশি দামে কিনতে হয়েছে। এজন্য বেশি দামে বিক্রি করতে হয়েছে। তবে দেশীয় আদা একটু কম দামে ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
তবে আগের মতো পেঁয়াজ ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। দেশি রসুন ৭০ ও চায়না আদা ১৩০-১৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। অন্যান্য মসলাও আগের দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
কমেছে মাছের দাম
শীত ঘনিয়ে আসায় নদী, বিলের মাছ বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য মাছের দাম কমেছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। ইলিশের দামও কমেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল রহিমসহ অন্যান্যরা বলেন, রুই ও কাতলার কেজি ২২০-৪৫০ টাকা, চিংড়ি ৫০০-৮০০ টাকা কেজি, টেংরা, বোয়ালের দাম কমে ৬০০-৮০০ টাকা, কাচকি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৬০০, কাজলি ও বাতাসি ৬০০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া পাঙ্গাসের দামও কমে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
মাছের দাম কমলেও গরু ও খাসির মাংসের দাম কমেনি। গরুর মাংস ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, খাসির মাংস ৮৫০-৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে পোল্ট্রি ও পাকিস্তানি মুরগির দাম কমেছে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের মাংস ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রতি কেজি ব্রয়লার আগের সপ্তাহে ১৮০ টাকা বিক্রি করা হলেও বর্তমানে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা, লাল লেয়ার ৩০০ টাকা, পাকিস্তানি ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
ডিমের দাম কমে ডজন ১২০
শীত ঘনিয়ে আসায় কমেছে ডিমের দামও। সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনে ১০ টাকা কমে লাল ও সাদা ডিমের ডজন ১২০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। হাঁসের ডিমের দামও কমে ডজন ১৪০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা।
জেডএ/এসজি