সবজি-মাছ স্বস্তি দিলেও চাল-ডালে কমছে না জ্বালা
শীত ঘনিয়ে আসায় সবজির বাজারে দেখা দিয়েছে স্বস্তির বার্তা। মরিচের কেজি ৩০ ও ধনেপাতা ৬০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। বেগুন, কপির দামও কমে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় নেমেছে। নদীর মাছের কেজিতেও ১৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। তবে সুখবর নেই চাল, ডাল ও চিনির বাজারে। এখনো চিনি নেই নেই বলছেন বিক্রেতারা। আটার দামও বেড়ে গেছে। আমনের মৌসুম শুরু হলেও একটুও কমেনি চালের দাম।
বিক্রেতারা বলছেন, কিছু জিনিসের দাম বেড়েছে আমাদেরও খারাপ লাগছে। কারণ অনেকে কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। তবে যেসব জিনিসের দাম কমেছে তা কম দামেই বিক্রি করা হচ্ছে।
শনিবার (১২ নভেম্ববর) রাজধানীর কারওয়ানবাজার ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
মরিচের কেজি ৩০, ধনেপাতা ৬০ টাকা
শীত ঘনিয়ে আসায় গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় সব সবজির দাম কমতির দিকে। প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। ৪০ টাকার মরিচের কেজি ৩০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। মরিচ বিক্রেতা শফিক বলেন, শীতের কারণে সরবরাহ বেশি হওয়ায় মরিচের দাম কমে ৩০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।
আগের সপ্তাহের ৬০ থেকে ৭০ টাকা বাঁধাকপি ও ফুলকপির দাম কমে প্রতি পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। শিমের দাম ৭০ থেকে কমে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। বেগুনের দামও কমে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা, পটল ৩০ টাকা, ঝিঙে, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, ঢেড়স, মিষ্টি কুমড়া ও মুলার কেজি ৩০ টাকা। তবে এখনো মৌসুম না হওয়ায় টমেটো ১২০ টাকা, শসার দাম বেড়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
এখনো চিনিতে অস্থিরতা
এক মাস পেরিয়ে গেলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন চিনি নেই। সরকার প্রতি কেজি খোলা চিনি ৯০ টাকা ও প্যাকেটজাত ৯৫ টাকা কেজি বিক্রির ঘোষণা দেয়। তারপর থেকেই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না চিনি। তবে ১০৫ টাকা দিলে পাওয়া যায়। কিন্তু তা কিনে জরিমানা গুনতে চাই না। তাই রাখছি না। বিক্রিও করা হচ্ছে না।
কারওয়ান বাজারের মায়ের দোয়া স্টোর, জব্বার স্টোর, ইয়াসিন স্টোর, আব্দুর রব স্টোরের মালিকসহ অসংখ্য খুচরা ব্যবসায়ীরা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, গ্যাসের সমস্যার কারণে চিনি কম উৎপাদন হচ্ছে— এ কথা এক মাস থেকে শুনছি। এখনো চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। মিলমালিকরা কয়েকটা বাজারে চিনি বিক্রি করছেন খুচরা দামে। তবে আমরা চিনি পাচ্ছি না প্রায় মাস হয়ে যাচ্ছে।
ইয়াসিন স্টোরের আলী হোসেন বলেন, সপ্তাহ আগে ১০৫ টাকায় কিনে সর্বশেষ ১১০ টাকা কেজি চিনি বিক্রি করেছি। এভাবে আর ব্যবসা করতে চাই না। কারণ বেশি দামে কিনেও জরিমানা গুনতে চাই না।
তবে চিনি পাওয়া না গেলেও সয়াবিন তেল নির্ধারিত দামে ৫ লিটার ৮৫০-৮৭০ টাকা, ২ লিটার ৩৫০ টাকা এবং ১ লিটার ১৭০ টাকা। এ সপ্তাহে মসুর ডালের দামও কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৯৫-১৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। আটার দামও বেড়ে ২ কেজি ১৪৪ টাকা বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
কমেনি চালের দাম
সরকার চালের বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও কমছে না দাম। আমনের মৌসুম ঘনিয়ে এলেও চালে দাম একটুও কমেনি। বরং সব চাল আগের মতো বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের কুমিল্লা রাইস জেনারেল স্টোরের শহিদুল ইসলাম ও বরিশাল রাইস এজেন্সির আল হাসিব ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, মৌসুম ঘনিয়ে এলেও এখনো আগের দামে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। একটুও কমেনি কোনোদাম। মিনিকেট চাল এখনো ৭২ থেকে ৭৫ টাকা কেজি, ২৮ চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, মোটা হাইব্রিড চাল ৪৮, বাসমতি ৮৮, নাজির শাইল ৮২ থেকে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। পোলাও চালের দামও বাড়তি। প্যাকেট ছাড়া এই চাল ১২৫ টাকা ও বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেট চাল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
বেড়েই যাচ্ছে আদার ঝাঁজ
মসলার মধ্যে পেঁয়াজ, মরিচ ও রসুনের দাম না বাড়লেও আদার ঝাঁজ থামছে না।
আগের মতো এ সপ্তাহেও পেঁয়াজ ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হতে যাচ্ছে। তাই আর দাম কমার সম্ভাবনা নেই। ছাঁচের পেঁয়াজ উঠলে কমবে দাম। আদা সপ্তাহে ১৬০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও চায়না আদা ২০০ টাকা বিক্রি করতে দেখা যায় বিক্রেতাদের। দেশীয় আদা ১০০ থেকে ১১০ টাকা। তবে আগের মতো দেশি রসুন ৭০ ও চায়না আদা ১৩০-১৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। অন্যান্য মসলাও আগের দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
কমেছে মাছ-ডিম, স্থির মাংসের দাম
শীত ঘনিয়ে আসায় নদী, বিলের মাছ বেশি করে পাওয়া যাচ্ছে। এ জন্য মাছের দাম কমেছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।
মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল রহিমসহ অন্যান্যরা বলেন, আগের চেয়ে খাল, বিলে বেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে। তাই কমছে মাছের দাম। রুই ও কাতলার কেজি ২৮০-৪৫০ টাকা, চিংড়ি ৫০০-৮০০ টাকা কেজি, টেংড়া, বোয়ালের দাম কমে ৬০০-৮০০ টাকা, কাচকির দাম কমে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৬০০, বাতাসি ৬০০, বাচ্চা ৬০০ টাকা, পাঙ্গাস ১৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
মাছের দাম কমলেও মাংসের দামও কমেনি। কারওয়ানবাজারের জননী মাংস ব্যবসায়ীসহ অন্য ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৮০ টাকা, লাল লেয়ার ৩০০ টাকা, পাকিস্তানি ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। এদিকে গরুর মাংসও ৭০০ টাকা, খাসির মাংস ৮৫০-৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে পরিমাণে বেশি নিলে একটু কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান। এদিকে ডিমের দাম নিয়ে ভোক্তারা খেদোক্তি প্রকাশ করলেও বিক্রেতারা বলেন, একটু কমেছে। ১৪০ টাকা ডজনের ডিম ১৩০ টাকা ও সাদা ডিমের ডজন ১২৫ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। তবে হাসের ডিমের ডজন ১৫০।
জেডএ/আরএ/