‘সংকটকালেও ইচ্ছামতো দাম নিচ্ছে কিছু কোম্পানি’
সংকটকালেও বহুজাতিক ও দেশীয় কিছু কোম্পানি আইন মানছে না বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান।
তিনি বলেন, দুর্বৃত্তদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। সংকটকালেও বহুজাতিক ও দেশীয় কোম্পানি সব পণ্যের দাম যেভাবে পারছে বাড়াচ্ছে। ৩০ টাকার সাবান হয়ে গেছে ৬০ টাকা।
বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে ভোক্তা আইন ২০০৯ অবহিতকরণ এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন।
অতিরিক্ত সচিব ও ভোক্তা অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, ২১৬ জন মানুষ দিয়ে সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু মিডিয়ার কারণে তার সম্ভব হচ্ছে। নকল ও ভেজালের বিরুদ্ধে মানুষ সোচ্চার হচ্ছে। শুধু চুনাপুটিদের নয়, যেকোন বড় বড় মিল কারখানায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। দুর্বৃত্তদের ছাড়া হচ্ছে না। ভোক্তাদের স্বার্থে যেকোনো ব্যাপারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ, ডলারের সমস্যা সংকটকালে ইন্টারন্যাশনাল করপোরেট হাউস থেকে দেশীয় কিছু কোম্পানি ইচ্ছামতো দাম আদায় করছে। বাজারে অভিযানে গেলেই তা দেখা যাচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারিদের দোষ দিচ্ছে, পাইকারি ব্যবসায়ীরা দোষ দিচ্ছে মিল মালিকদের। কেউ কোনো দায় নিতে চাচ্ছে না। বিভিন্ন করপোরেট গ্রুপ ও সংকট সৃষ্টি করছে অতি মুনাফার জন্য। কিন্তু আমরা সব জায়গায় ঢুকে গেছি। তেল, চাল, চিনি থেকে শুরু করে ডিমের ব্যাপারটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ধরা পড়ছে খুচরা ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে পাইকারি ব্যবসায়ী, করপোরেট হাউসও ছাড় পাচ্ছে না। তারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে এজন্য বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত সচিব বলেন, ব্যবসায়ী কমিউনিটির নেতা বারবার বললেও এখনো অসাধু ব্যবসায়ীরা রেসপন্স করছে না। এফবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট জসিম উদ্দিন বারবার বলছেন চোর বাটপারের নেতা হতে চাই না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ভোক্তার ডিজি বলেন, ৮ বিভাগে ও সব জেলা অফিসে কর্মকর্তা আছে। কিন্তু তা খুবই কম। তারপরও প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০টি টিম বাজারে অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু এ মনিটরিং টিম যথেষ্ট নয়। মনিটরিং টিম ৮ থেকে ১০ গুণ বাড়ালেও বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ৩৬ টাকার শসা কারওয়ান বাজারে ৮০ টাকা হয়ে যাচ্ছে। এতে একদিকে ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছে, অন্যদিকে কৃষকরা ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আবার চট্টগ্রামে দেখা গেছে দুই বছর আগের মেয়াদ উত্তীর্ণ শিশু খাদ্য দেদারসে বিক্রি করছে। প্রতি মুনাফার লাভের আশায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা এসব কাজ করছে। সচেতন না হলে প্রতিরোধ করা সম্ভব না। এক্ষেত্রে ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে। কারণ গুলশান ও বনানীসহ অনেক এলাকায় আমদানিকৃত পণ্যের নাম ঠিকানা থাকে না। কেনার সময় ভোক্তাদের আমদানিকারকের নাম, ঠিকানা ও মেয়াদ উত্তীর্ণ, উৎপাদনের তারিখ দেখে কিনতে হবে।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, বর্তমান ভোক্তা আইনের শাস্তি যথেষ্ট না। দ্রুত অ্যাকশনের জন্য শুধু আর্থিক শাস্তির দিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। জুডিশিয়াল ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। তবে কৃত্রিম সংকটের ২০১২ আইন করা হয়েছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের মাধ্যমে। বর্তমানে ই-কমার্সে ভয়াবহ প্রতারণা হচ্ছে। তাই ২০০৯ এর আইন সংশোধন করে ই-কমার্স নতুন অধ্যায় যুক্ত করা হচ্ছে। ভোক্তাদের কথা বিবেচনা করে সংশোধিত আইন কঠোর করতে কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু বিচারিক ক্ষমতা নেই এই আইনে। ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া আছে। তারা এর বিভিন্ন ধারা শাস্তির ব্যবস্থা করে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ভোক্তা অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।
জেডএ/এসএন