‘দেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পিপিপি ছাড়া উপায় নেই’
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও দেশের রিজার্ভ ও বাজেট সীমাবদ্ধতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) প্রকল্প গ্রহণ ছাড়া কোনো উপায় নেই। তাই পিপিপির উন্নয়নে প্রয়োজনে আইনে পরিবর্তন আনা হবে।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) এফবিসিসিসিআই আয়োজিত ‘ভিশন-২০৪১ অর্জনে পিপিপির ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বর্তমান আইনে পিপিপির প্রক্রিয়া দ্রুত করা সম্ভব কি না, তা যাচাই করে দেখতে হবে। যদি দরকার হয়, আইনে পরিবর্তন আনতে হবে। কিন্তু এই পথেই যেতে হবে।
বিদ্যুৎ খাতে পিপিপি সফল হয়েছে মন্তব্য করে সালমান এফ রহমান বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল মাত্র ৪৫০০ মেগাওয়াট। কিন্তু আইন পরিবর্তন করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে বেসরকারি খাতে মোট ৫৪ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতের সফল পিপিপির কারণেই বর্তমান অর্থনৈতিক অগ্রগতি এসেছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, পিপিপির উন্নয়ন ছাড়া এসডিজি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। কেননা এসডিজি অর্জনের জন্য পিপিপির মাধ্যমে প্রায় ৬ শতাংশ অর্থায়ন করতে হবে। এ ছাড়া সরকারের অন্যান্য উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সরকারের একার পক্ষে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ সম্ভব নয়। দেশে শক্তিশালী বেসরকারি খাত গড়ে উঠেছে। তাদেরকেও পিপিপির মাধ্যমেই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট করতে হবে।
আস্থাহীনতাকে পিপিপির উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা উল্লেখ করে বিশেষ অতিথি পিপিপি কর্তৃপক্ষের সিইও মোহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, সরকারের প্রতি বেসরকারি খাতকে অংশীদার হিসেবে দেখার মনোভাব তৈরি করতে হবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ২০৩১ ও ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে হলে অবকাঠামো খাতে ব্যাপক পরিবর্তন করতে হবে। উৎপাদনের গতি আনতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গতি দ্বিগুণ করা ও চট্টগ্রাম বন্দরের টেস্টিং সুবিধা বাড়াতে হবে। এসব ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। এ ছাড়া সরকারি শিল্প কারখানায় হাজার হাজার একর অব্যবহৃত জমি শিল্প স্থাপন ও সরকারি কারখানার আধুনিকায়নে পিপিপি মডেল ব্যবহার করতে হবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফরেইন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়। তিনি বলেন, ভিশন ২০৪১ অর্জনে অবকাঠামো ও লজিস্টিকসের ব্যাপক উন্নয়ন করতে হবে। কিন্তু এ খাতে সরকারি বিনিয়োগ অপর্যাপ্ত।
প্যানেল আলোচনায় এফবিসিসিআই’র পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী বলেন, পিপিপি সফল হতে হলে প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়কে সক্রিয় হতে হবে।
এফবিসিসিআই’র প্যানেল উপদেষ্টা ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, সরকারের অনেক নীতির কারণে পিপিপিতে আসতে বাইরের কোম্পানিগুলো নিরুৎসাহিত হচ্ছে।
পিপিপির জন্য বাজেটের আলোকে একটি জাতীয় মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের পরামর্শ দেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ। পাবলিক প্রাইভেট পাটর্নারশিপ উপদেষ্টা মোহাম্মদ হাসান হায়দার বলেন, জাতীয় পর্যায়ের পাশাপাশি, মিউনিসিপ্যালিটি পর্যায়ের প্রকল্পগুলোতেও পিপিপি কার্যকর করা দরকার।
সেমিনারে এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবুসহ অন্যান্য পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।
জেডএ/এসজি