‘প্রতিটি হাওড় আমাদের আঞ্চলিক সম্পদের এক, একটি আধার’
‘হাওড়গুলো প্রাকৃতিকভাবে প্রকৃতির প্রয়োজনেই সৃষ্ট। হাওড়ের সমস্যাগুলো অভিযোজন করেই এগুতে হবে। বাংলাদেশের হাওড়গুলো তাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং সম্পদরাজি তো হারাতে বসেছে। আগে হাওড়ে মাছ ধরাও একটি ঐতিহ্য ছিল। এখন তা নেই। ফলে আপনারা প্রকৌশলীরা হাওড়াঞ্চল নিয়ে কাজ করবেন এই প্রত্যাশা’ বলেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ. মান্নান। তিনি প্রকৌশলীদের সংগঠন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)’র সদর দফতর, রমনা ঢাকার শহীদ প্রকেশলী ভবনের কাউন্সিল হলে ‘টাস্কফোর্স অন ওয়াটার সেক্টর’ আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে এই বক্তব্য দিয়েছেন।
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ‘হাওরে বন্যা ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা’ সেমিনারের প্রথম পর্বের শিরোনাম ছিল ‘হাওড়ে বন্যা ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা’, দ্বিতীয় পর্ব-‘হাওড় সম্পদ ব্যবস্থাপনা’।
সেমিনারের প্রথম অংশে প্রধান অতিথি ছিলেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। সভাপতি ছিলেন প্রকৌশলী এম. হাবিবুর রহমান, তিনি আইইবির টাস্কফোর্স অন ওয়াটার সেক্টরের সভাপতি। স্বাগত ভাষণ দিয়েছেন প্রকৌশলী শাহাদাৎ হোসেন শিবলু, আইইবির সাধারণ সম্পাদক।
এ সেশনে আরো আলোচনা করেছেন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক ও আইইবি ভাইস-প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার এম. নুরুজ্জামান।
সেশনের প্রধান অতিথি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের যেকোনো হাওড়ের উন্নয়নের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। কোনো হাওর ভরাটের সমস্যা সমাধানের জন্য শুধু তলদেশ খননে সমাধান নেই, বরং সামগ্রিকভাবে সেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন জরুরী। এছাড়াও হাওড়ের গরীব মানুষদের বাঁচতে প্রণোদনা যোগাতে হবে। সকল জমি কৃষিকাজেই ব্যবহার করতে হবে। কৃষকের উন্নয়ন হলে হাওড়েরও উন্নয়ন হবে। হাওড়ে মাছ চাষে আরো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হাওড় নিয়ে গবেষণা এবং উচ্চতর পাঠ চলছে। তাদের মাধ্যমেই হাওড়াঞ্চলের সমস্যাগুলোর সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে।’
অন্যতম আলোচক ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট এম. আবদুল হামিদের ছেলে কিশোরগঞ্জের সাংসদ রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক বলেছেন, ‘আমাদের হাওড়াঞ্চলের মানুষজন সংগ্রাম করে বেঁচে থাকেন। হাওড়গুলোতে ঝড়, বন্যা ,খরা নৈমিত্তিক। প্রকৌশলীরা হাওড় নিয়ে কাজ করছেন বলে ভবিষ্যত আরো ভালো হবে। আমাদের সরকারের উন্নয়নের কারণে হাওড়ে বন্যা হয়নি। ১৯৭৪, ১৯৯৮ ও ২০০৪ সালে কেন হয়েছিল? এখনো হাওড়ের যত্র, তত্র বাড়ি, ঘর বানানো হচ্ছে। পরিকল্পনাবিহীন বাড়িঘর নির্মাণেও বন্যা হয়, হাওড়ের ক্ষতি হয়। বন্যা ও দূর্যোগ থেকে আমাদেরকে বাঁচতে হলে তলদেশ খননেও মনোযোগ দিতে হবে। সম্পদ আহরণ ও ব্যবহারে মনোযোগী হতে হবে। তাহলেই হাওড়াঞ্চলকে বন্যা ও প্রকৃতিক দূর্যোগগুলো থেকে রক্ষা করা যাবে।’
আইইবির সেমিনারের দ্বিতীয় পর্ব ‘হাওড়ে সম্পদ ব্যবস্থাপনা’র প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ. মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ.কে.এম. এনামুল হক শামীম।
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ. কে. এম. এনামুল হক শামীম বলেছেন, ‘বাংলাদেশের হাওড়াঞ্চলের সমস্যাগুলো আন্তর্জাতিক। সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ডেল্টা প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। এমন পরিকল্পনাও বিশ্বের কোথাও নেই। শত, শত বছরের হাওড় ও নদী, খাল, বিলগুলোকে বাঁচাতে আর কোনো দেশ শতবর্ষী পরিকল্পনা করেনি, করতেও হয়নি। কারণ এই অনন্য সম্পদগুলো তো তাদের নেই। পরিকল্পনাটি ভালোভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে হাওড়ের সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব হবে। তিনিসহ আমরা স্থায়ী সমাধান নিয়ে কাজ করছি। আপনাদের মধ্যে যারা অভিজ্ঞ প্রকৌশলী, বিশেষজ্ঞ আছেন, তাদের সকলের প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় হাওড়গুলোকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে।’
সেশনের বিশেষ অতিথি আইইবির সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক প্রকৌশলী এম. আবদুস সবুর বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ভৌগলিক বাস্তবতার অনিবার্য প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য হলো হাওড়, বাওড়, বিল। প্রাকৃতিক এই শক্তিগুলোকে প্রতিহত করা প্রায় অসম্ভব। তাদের মেনে নিয়েই বাস্তবোপযোগী, উদ্ভাবনী ও আধুনিক প্রযুক্তিনিভর জীবন ব্যবস্থা সেখানে স্বাভাবিক ও টেকসই আকারে গড়ে তুলতে হবে। কেননা, প্রতিটি হাওড় হলো আমাদের আঞ্চলিক সম্পদের এক, একটি আধার। নানা জলজ প্রাণবৈচিত্র্যে সম্পদশালী। তাদের যথাযথ ব্যবস্থাপনায় এগিয়ে নিয়ে যতে হবে।’
‘হাওড়ে বন্যা ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা’ এবং হাওড় সম্পদ ব্যবস্থাপনা’ সেমিনার সেশনগুলোতে মূল প্রবন্ধ পড়েছেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক ফজলুর রশিদ, নির্বাহী পরিচালক এম. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া, সিইজিআইএস (সেন্টার ফর এনভায়মেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস)’র নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা আবদুল্লাহ খান।
সেমিনারের সেশনগুলো আলোচনা, প্রবন্ধ উপস্থাপনা, নির্ধারিত উপস্থাপন, মুক্তালোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্বে সাজানো ছিল বলে জানিয়েছেন আইইবির জনসংযোগ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম তালুকদার রনি।
আইইবির টাস্কফোর্স অন ওয়াটার সেক্টরের সদস্যসচিব প্রকৌশলী ইমু রিয়াজুল হাসান সেমিনার সেশন সঞ্চালনা করেছেন।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন টাস্কফোর্স অন ওয়াটার সেক্টর, আইইবি কো-চেয়ার প্রকৌশলী এম. আমিরুল ইসলাম। তিনি ও আসাদুজ্জামান খান সেশনগুলোর পরিচালক ছিলেন।
উভয় সেশনে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবি, বিশেষজ্ঞগণ, সংস্থা প্রধান, সরকারি, বেসরকারি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা, বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেছেন।
বাংলাদেশের হাওড়গুলোকে বাঁচাতে এই বিশেষ সেমিনার সেশনগেুলোতে অংশগ্রহণ করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বেনজীর আলম, বাংলাদেশ ধান গবষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. শাহজাহান কবীর, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মাহবুবুল হক, পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউট, বুয়েটের পরিচালক এ. কে. এম সাইফুল ইসলাম, এলজিইডির তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, এলজিইডির প্রকল্প পরিচালক এম মােজাম্মল হক, উপ-প্রকল্প পরিচালক ড. এম. মমতাজ উদ্দিন, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ, উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক ড. আলী মোহাম্মদ ওমর ফারুক, পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আলমগীর ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক হাবিবুর রহমান প্রমুখ।
বাংলাদেশের হাওড়গুলো নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন আইইবির সম্মানী সাধারণ সম্পাদক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদ, মানবহিতৈষী ও সম্মানী ভাইস প্রেসিডেন্ট এস. এম. মনজুরুল হক মঞ্জু, সহকারী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী প্রতীক কুমার ঘোষ, প্রকৌশলী রনক আহসান প্রমুখ।
মুক্তালোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন সিনিয়র সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু, হাওড় গবেষক ড. মোস্তফা আলী, আবুল কালাম আজাদ, লুৎফর রহমান, আনিছুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেন, সুলতান আহমেদ, সাংবাদিক আবু সুফিয়ান ও সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান করুণা-সিন্দ-চৌধুরী।
ওএফএস।