লক্ষ্যের চেয়ে রপ্তানি আয় ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি
চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৮২২ কোটি ডলার। এর বিপরীতে দেশে ৮৫৯ কোটি ১৮ লাখ ডলার এসেছে।
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ। এই রপ্তানি আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ দশমিক ৩১ শতাংশ বেশি। কারণ, ওই সময়ে দেশে পণ্য থেকে বৈদেশিক মুদ্রা এসেছিল ৬৮৫ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। এ ছাড়া আগস্ট মাসেও লক্ষ্যের চেয়ে বেশি রপ্তানি আয় হয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পে বেশি করে আয় হওয়ায় রপ্তানি আয় বেশি হয়েছে।
রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
ইপিবি’র প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে ৪৬০ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন দেশের রপ্তানিকারকরা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৩০ কোটি ডলার। আর প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৬ দশমিক ১৮ শতাংশ। অপরদিকে গত বছরের আগস্টে রপ্তানি হয়েছিল ৩৩৮ কোটি ৩১ লাখ ডলারের পণ্য। এ হিসাবেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ।
পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২৬.১০ শতাংশ
বিশ্বে মন্দা দেখা দিলেও বাংলাদেশের পোশাকের চাহিদা ঠিক রাড়ছে। এ জন্য পোশাক রপ্তানির ওপর ভর করেই জুলাই-আগস্ট সময়ে রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন হয়েছে। ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, এই দুই মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানির লক্ষ্য ছিলো ৬৬৩ কোটি ২৬ লাখ ডলার। এতে আয় হয়েছে ৭১১ কোটি ২৬ লাখ (৭ দশমিক ১১ বিলিয়ন) ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেশি এসেছে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, জুলাই-আগস্ট সময়ে মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৮২ দশমিক ৭৮ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। যার মধ্যে নিট পোশাক থেকে এসেছে ৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ দশমিক ১৫ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে বেশি এসেছে প্রায় ৮ শতাংশ। ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ৩ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে বেশি আয় হয়েছে ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। জুলাই-আগস্ট সময়ে পোশাক খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার।
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য ১৮ কোটি ১৪ লাখের বিপরীতে ১৫ কোটি ৬৬ লাখ ডলার দেশে এসেছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ কম এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১২ কোটি ৭৬ লাখ ডলার।
অন্যান্য খাত
অন্যান খাতের মধ্যে জুলাই-আগস্ট সময়ে হোম টেক্সটাইল রপ্তানি থেকে ২৬ কোটি ৮৫ লাখ ২০ হাজার ডলার এসেছে; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। ২২ কোটি ৩২ লাখ ৩০ হাজার ডলার এসেছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে; বেড়েছে ২৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এ ছাড়া এই দুই মাসে স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রপ্তানি থেকে ৩ কোটি ৯৩ লাখ ১০ হাজার ডলার, বাইসাইকেল থেকে ২ কোটি ৪৯ লাখ ২০ হাজার ডলার, ক্যাপ বা টুপি থেকে ৬ কোটি ৯৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার, প্লাস্টিক পণ্য থেকে ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার এবং হ্যান্ডিক্র্যাফট রপ্তানি থেকে ৫২ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।
তবে দুই মাসে রপ্তানি আয়ের অন্যতম প্রধান খাত হিমায়িত মাছ ও কৃষিপণ্য থেকে রপ্তানি আয় কমেছে। ওষুধ রপ্তানি থেকেও আয় কমেছে। হিমায়িত মাছ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৮ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার; কমেছে ৭ দশমিক ২১ শতাংশ। ১৯ কোটি ৭৫ লাখের বিপরীতে কৃষিপণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১৭ কোটি ৮২ লাখ ২০ হাজার ডলার। লক্ষ্যের চেয়ে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে কমেছে ১৪ শতাংশ। কারণ, ওই সময়ে রপ্তানি আয় হয়েছে ২০ কোটি ৭২ লাখ ডলার। ওষুধ রপ্তানি থেকে ২ কোটি ৭৫ লাখ ৯০ হাজার ডলার আয় হয়েছে। যা গত বছরের জুলাই-আগস্টের চেয়ে ২৫ শতাংশ কম।
উল্লেখ্য, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ধরেছে সরকার। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে লক্ষ্যের চেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করে ৫২ দশমিক শূন্য আট বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। আগের অর্থবছরের (২০২০-২১) চেয়ে বেশি আয় হয়েছিল ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
জেডএ/এমএমএ/