‘জ্বালানি তেলের দাম অবশ্যই পুননির্ধারণ করা হবে’
জ্বালানি তেলের দাম অবশ্যই পুননির্ধারণ করা হবে উল্লেখ করে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, ‘ভর্তুকি কমাতে সরকার বাধ্য হয়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। এজন্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়বে। আমদানিকৃত পণ্যের কারণে এটা হচ্ছে। তবে ১০ শতাংশ হবে না। কতদিন থাকবে বা মূল্যস্ফীতির হার কোন পর্যায়ে ঠেকবে তার পুরোটাই নির্ভর করছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির উপর।’
রবিবার (২১ আগস্ট) অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চায়লনায় এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি শারমিন রিনভী।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনার কোনো দুর্বলতা নেই। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশ এগুচ্ছে। মাটি দেবে যাবে, কৃষি জমি ধ্বংস হয়ে যাবে ভেবে কয়লার দিকে নজর দেওয়া হয়নি। বর্তমানে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে, এটা সত্য। তবে অর্থনীতিবিদরা যেভাবে বলছেন, ১০ শতাংশ হবে সেটা না। কারণ অনেক পণ্যের শুল্ক কমানো হয়েছে। তবে চাপে আছে। কিন্তু অস্বস্তিতে থাকলেও অর্থনীতি সংকটে নেই।’
দেশের অর্থনীতিবিদদের ‘আশঙ্কাবাদী’ উল্লেখ করে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনীতিবিদরা দেশের অর্থনীতির অর্জন ও সম্ভাবনা দেখতে পান না। কিন্তু বিদেশি গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তি ও সম্ভাবনা তুলে ধরছে। অর্থনীতি সঠিক ধারায় আছে। কৃষি খাত এখনো ভালো করছে। ভয়ের কিছু নেই। ভীতি হওয়ারও কোনো কারণ নেই।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কিছু সারের দাম খুবই বেশি। তাই কিছুটা মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। কারণ বর্তমানে এক কেজি ইউরিয়ায় ১১২ টাকা খরচ হয়। অনেক কম মূল্যে কৃষককে দেওয়া হয়। এটা করা না হলে ভর্তুকি আরও বেড়ে যেত। সরকার সব সময় কৃষিতে ভর্তুকি দিয়ে থাকে, তা থাকবে।’
ড. শামসুল আলম বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে ইন্ধন দিচ্ছে। এ কারণে মানুষের কষ্ট হচ্ছে, কথা সত্য। দাম না বাড়িয়ে বিকল্প ছিল না। তবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে অক্টোবরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। তবে মূল্যস্ফীতির চাপ থাকবে। প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে এলডিসি থেকে উত্তরণ, এসডিজি বাস্তবায়ন সবই ঠিকভাবে হবে। ভয়ের কিছু নেই। তবে দারিদ্র পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির চাপ থাকবে। তবে এই মূল্যস্ফীতি পুরোটাই আমদানিজনিত। এরপরও বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা সৃষ্টি, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য সুদহার না বাড়িয়ে সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে ডলারের বিনিময় হার শিগগিরই কমে আসবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি সঠিক পথে আছে।’
বিকেএমই এর নির্বাহী সভাপতি মো. হাতেম বলেন, ‘রপ্তানি আদেশ কমছে। বড় বড় কারখানা উৎপাদন কমাতে বাধ্য হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে। ক্রেতাদের কাছ থেকে বাড়তি খরচের সমন্বিত মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া বন্ড লাইসেন্স, এইচএসকোডসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এনবিআরের পলিসি ব্যবসায়ী পরিপন্থী। আইন দিয়ে ব্যবসায়ীদের উপর জলুম, নির্যাতনের ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে। যতই চ্যালেঞ্জ আসুক বাংলাদেশের রপ্তানি খাত ইতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে থাকবে।’
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের (এমসিসিআই) সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির বলেন, ‘দেশে কয়লার যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। নিজস্ব যে প্রাকৃতিক সম্পদ আছে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। জ্বালানিতে আমদানি নির্ভরতা এমন পর্যায়ে গেছে যে এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। নীতি নির্ধারণী পদ্ধতির কারণে ব্যবসায় নানান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যবসার খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এটাও বড় চ্যালেঞ্জ।
তিনি আরও বলেন, ‘চাল, মাছ, মুরগির দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের সমস্যা হচ্ছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে আসছে, সেটা সমন্বয় করতে হবে।’
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, ‘জ্বালানি নিরাপত্তা খুবই জরুরি। অবশ্যই জ্বালানিতে বিপ্লব হয়েছে। দেশের অর্থনীতি যে গতি পেয়েছে সেখানে জ্বালানির ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু এখনকার জ্বালানি আমদানি নির্ভর। এজন্য মাস্টারপ্লান করা উচিত। যাতে আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে জ্বালানি স্বনির্ভর দেশ হয়।’
জেডএ/এসজি