লাগামহীন বাজার, ক্রেতার নাভিশ্বাস
৮৫ টাকার চিনির কেজি ৯০ টাকা। ১২০ টাকা ডজনের ডিম ১৫০ টাকা। ২০ টাকার পেপে ৪০ টাকা, শিম ২২০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা। লাউ ১০০ টাকা। মাছের দামও কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা। তবে ইলিশ মাছের দাম সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২২০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। চালের দাম কেজিতে বেড়েছে দুই-তিন টাকা।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর এর প্রভাব পড়েছে সব ধরনের পণ্যে। এমন কোনো জিনিস নাই, তার দাম বাড়েনি। শনিবার সকালে রাজধানীর মোহম্মদপুর টাউনহল বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে বাজারের এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।
টাউন হলের মনির জেনারেল স্টোরের আনোয়ার ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, চিনির কেজি ৯০ টাকা আর দেশি চিনি ১০০ টাকা। ডালের দামও কিছু বাড়তি। চালের দাম বাড়তি, ডিমের দামও আকাশছোঁয়া। ১৫০ টাকা ডজন। ৫ লিটার সয়াবিন তেল ৯০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
এত দাম বেশি কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে এ বিক্রেতা বলেন, আমরা কী করব। সরকারকে জিজ্ঞেস করেন। আমরা বেশি দামে কিনছি। তাই বিক্রি করতে হচ্ছে।
তবে বাজারের মাংসের বাজারে চিত্র ভিন্ন দেখা গেছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। তাই মাংসের বাজারে ক্রেতাদের নেই আনাগোনা। বিক্রেতারা বলেন, ক্রেতার অভাব। তাই কম দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
জানতে চাইলে জহির মাংস দোকানের শাহিদ বলেন, খাসির মাংস ৯০০ টাকা কেজি। আগে হাজার টাকা বিক্রি করতাম।
দাম কমার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাস্টমার নেই দেখেন না। বেঁচে থাকার জন্য ব্যবসা করতে হচ্ছে। তাই লস হলেও কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
ভাই ভাই মাংস বিতান নামে দোকানের মুরাদ বলেন, আগে ৭০০ টাকা বিক্রি করা হলেও এখন ৬৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। বেচা বিক্রি নেই, তাই কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
চালের বাজারও চড়া দেখা গেছে। এ বাজারের নোয়াখালী রাইস মিলের ইউসুফ জানান, প্রতি কেজিতে এক থেকে দুই টাকা বেড়ে গেছে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পরেই। মিনিকেট ৭০ থেকে ৭২ টাকা কেজি, আটাশ ৫৪ থেকে ৫৭ টাকা, পাইজাম ৫২ থেকে ৫৪ টাকা কেজি। মোটা চাল পাওয়া যায় না, আমরা বিক্রিও করি না। তবে পোলাও চালের দাম বেড়েছে খুবই বেশি। বর্তমানে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। যা আগে ১১০-১১২ টাকা কেজি বিক্রি করা হয়েছে। গরু-খাসির দাম কমলেও মুরগির মাংসের দাম বেশি।
বিক্রেতারা বলছেন, যতই দিন যাচ্ছে দাম বাড়তেই আছে। সোহেল নামে এক বিক্রেতা জানান, পোল্ট্রি ৩০০ টাকা যা গতকাল ২৮০ টাকা বিক্রি করেছি, ব্রয়লার কেজি ২০০ টাকা, লেয়ার ২৮০ টাকা। তবে দেশি মুরগির দাম ৪৮০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ডিমের বাজার একেবারে আকাশচুম্বী হয়ে গেছে। তিন দিন আগের ১২০ টাকা ডজনের ডিম ১৫০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে বলে ডিম বিক্রেতা এবাদুল হক জানান।
এ সময় শাহান নামে এক ক্রেতা বলেন, ডিমের দাম এভাবে বেড়ে গেছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। চলা মুশকিল হয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে ডিম কিনছি। মাছ মাংস কেনা যায় না, হাতের টাকা কমে যাচ্ছে।
জ্বালানি তেলের বাড়তি দামে সবজির বাজারেও ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে। কদিন আগেও ২০ টাকায় পেঁপে বিক্রি করা হয়েছে। তা ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
টাউনহলের সবজি বিক্রেতা জসিম, অসীম, এমদাদসহ অনেকেই ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, পরিবহনের ভাড়া বেড়েছে। তার প্রভাব বাজারে পড়েছে। প্রতি কেজি সবজিতেই ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
তারা জানান, করলা ৮০ টাকা কেজি, টমেটো ১২০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, আলু ৩০ টাকা, পেঁয়াজ ৫০ টাকা, কচুর মুখী ৬০ টাকা, ধুন্দুল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। লাউ এর পিস ৮০ থেকে ১০০ টাকা, যা আগেও ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, শসার কেজি ৬০ টাকা। মরিচের ঝাল এখনো রয়ে গেছে বাজারে। আড়াইশ গ্রাম মরিচের দাম ৮০ টাকা, আর কেজি বিক্রি করা হচ্ছে ২৫০ টাকা। শিম একেবারে লাগামহীন ২২০ টাকা কেজি।
আরশাদ নামে এক ক্রেতা বলেন, তেলের কারণে বাস্তবে যা দাম বেড়েছে, তা থেকে বহুগুণে বেড়ে গেছে বাজারে। এভাবে প্রায় জিনিসের দাম বেড়ে যাচ্ছে, দেখা আর কেউ নেই। বাজার লাগামহীন। আমরা চলব কীভাবে? আমাদের তো আয় বাড়েনি। এভাবে কী করে চলবে দেশ।
জেডএ/এসএন