গরিবের পুষ্টির চাহিদা মেটানো দুরূহ
বাজারে প্রতিটি জিনিসের আকাশচুম্বী দামে দিশেহারা মানুষ। প্রত্যেকে বাজারে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলছেন। ফার্মের মুরগির ডিম থেকে শুরু করে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। এক ডজন ডিমের দাম ১৫০ টাকা। মাছ, মাংস প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে।
নিম্ন আয়ের মানুষের মাংসের চাহিদা মেটে ব্রয়লার মুরগি দিয়ে। সেই ব্রয়লার এখন প্রতি কেজি ২২০ টাকা। যা গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। একইভাবে প্রতিটি ঘরে ফার্মের মুরগির ডিম ছিল অন্যতম প্রধান খাবার। সুষম খাবার ডিম এখন সবার ভাগ্যে জুটছে না। প্রতিটি ডিমের দাম সাড়ে ১২ টাকা।
সপ্তাহ ব্যবধানে সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা। শনিবার ১৩ আগস্ট কৃষি মার্কেটে প্রতি কেজি ঢেঁড়শ ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বেগুন ৮০ টাকা, আলু ৩০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ২৮০, করলা ৭০ টাকা, চিচিংগা ৬০ টাকা কেজি।
মাছের দামও বেড়েছে। প্রতি কেজি রুই মাছ (ছোট) ৩৫০ টাকা, বড় সাইজের রুই মাছ ৪০০ টাকা কেজি, চাষের টেংড়া ৮০০ টাকা কেজি, চিংড়ি বড় সাইজ ১২০০ টাকা কেজি, পাবদা ৭০০ টাকা, পুটি ৫০০ টাকা, ভেটকি মাছ ৬০০ টাকা, পোয়া মাছ ৬০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ টাকা, কাতলা বড় ৪০০, ছোট ৩৫০ টাকা।
মুরগির মাংস সোনালি মুরগি কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ছিল ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা। শনিবার সেই মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৩১০ টাকা কেজি। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা। গত সপ্তাহে ছিল ১৬৫টাকা থেকে ১৭০ টাকা। তবে দেশি মুরগির দাম আগের মতোই প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪০০ টাকা দরে।
কৃষি মার্কেটের মুরগি বিক্রেতা রাসেল ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, মুরগির দাম কল্পনার বাইরে বেড়ে গেছে। সব সময় দেখেছি কোরবানির ঈদের পর মুরগির দাম কমে এবার এতো বেড়েছে কল্পনা করা যায় না। গত সপ্তাহের চেয়ে আজ কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বাড়তি। প্রতিদিনই বাড়ছে।
দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আগে বগুড়া থেকে ১ হাজার পিচ মুরগি আনতে খরচ পড়ত ৬-৭ হাজার। এখন সেই মুরগি আনতে খরচ পড়ছে ১২ হাজার টাকা। এই টাকা তো মুরগির উপর পড়বে। তাছাড়া খাবারের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। ফিডের কেজি ছিল ৩০ টাকা সেই ফিড এখন ৬০ টাকা কেজি। খাবারের দাম বাড়ার কারণে ডিমসহ মুরগির দাম বেড়ে গেছে।
সবজি বিক্রেতা সাগর ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, প্রতিটা সবজির দাম বেড়েছে। এই সময় এতো দামে সবজি কখনো বিক্রি করিনি। এবার যে হারে দাম বেড়েছে এরকম দাম কখনই বাড়েনি।
কৃষি মার্কেটে বাজার করতে আসা রেণু বেগম ঢাকাপ্রকাশ’কে বলেন, আমি একটা অফিসে আয়ার কাজ করি। শুক্রবার হলে বাচ্চাদের জন্য ব্রয়লার মুরগি কিনতাম। গতকাল এসে কিনতে পারিনি ভেবেছিলাম শনিবার একটু ভিড় কম হবে দামও কম হবে। এসে দেখি একই দাম। একটা মুরগি সোয়া কেজি দাম পড়েছে ৩৭৫ টাকা। ৫০০ টাকা নিয়ে বাজারে এসেছি। এখন আলু কিনব কি দিয়ে তরকারিই বা কিনবো কিভাবে। আমরা খাই একটু আলু ভর্তা, ডিম, ডাল। সেখানেও আগুন। ২৫০ গ্রাম কাঁচামরিচ ৭০ টাকা। এখন ১০ টাকায় কেউ মরিচ দেয় না। কিভাবে চলব। বাজারে এসে খালি হাতেই ফিরে যেতে হয়।
রেণু বেগমের পরিবারে চারজন মানুষ। স্বামী রিকশা চালান। আর ছেলে-মেয়ে ছোট। মোটা চালের ভাত আর ডাল দিয়ে খেয়ে কোনোমতে জীবন যাপন করতেন। পানতা ভাতে মরিচ মেখে সকালে খেয়ে বের হতেন। এখন সেই মরিচের দামও চড়া। তাই পানতাও খেতে পারছেন না তিনি। শুধু রেণু বেগম না। নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা দিশেহারা জিনিসের দামে।
এসএম/আরএ/